দেশজুড়ে

বৃষ্টিতে হাঁটুপানির নিচে সড়ক, দুর্ভোগে নগরবাসী

বৃষ্টিতে হাঁটুপানির নিচে সড়ক, দুর্ভোগে নগরবাসী

বৃষ্টিতে খুলনা মহানগরীর প্রায় সব সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। সড়কে পানি থাকায় বের হচ্ছেন না অনেকে। খুলতে পারছেন না ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ।

Advertisement

নগরবাসীর অভিযোগ, খুলনা সিটি করপোরেশনে (কেসিসি) জলাবদ্ধতার এ চিত্র শুধু এবারের নয়, সামান্য জোয়ারের সময়ও এমন চিত্র দেখা যায়। সিটি করপোরেশনের দূরদর্শিতার অভাব, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, খাল-বিল দখল ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা এ জন্য দায়ী।

খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুর ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

জানা যায়, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে নগরীর টুটপাড়া, রয়েল মোড়, মিস্ত্রিপাড়া, খালিশপুর, নিউ মার্কেট এলাকা, বাস্তুহারা এলাকা, শান্তিধাম মোড়, দিলখোলা রোড, পূর্ব বানিয়া খামার, বসুপাড়া, ফুলবাড়িগেট, আলমনগর, মুজগুন্নি আবাসিক এলাকা, করপাড়া, দৌলতপুর বীণাপাণি এলাকা, কুয়েট রোড, রুপসা ব্রিজ রোডসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে।

Advertisement

কেসিসি সূত্রে জানা যায়, সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। যাতায়াতের জন্য সড়ক রয়েছে প্রায় এক হাজার ২১৫টি। পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল রয়েছে ১৩টি। ড্রেন রয়েছে প্রায় ৫৪২ কিলোমিটার। ড্রেন ও খাল সংরক্ষণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সিটি করপোরেশন ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ ও ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত ও উন্নয়নে কাজ শুরু করে। সব মিলিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত প্রায় সাত বছরে এই দুই প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ৪৮৩ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়। যার মধ্যে অধিকাংশ কাজ চলমান।

শান্তিধাম মোড়ের বাসিন্দা শুভ রায় বলেন, রয়েল মোড় থেকে শুরু করে মির্জাপুর রোড পর্যন্ত সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। এখন নিম্নচাপের কারণে সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে। হাঁটুপানি হয়েছে। সামনে এসব এলাকায় কোমড় পর্যন্ত পানি উঠলেও অবাক হওয়ার কিছু নাই। এটি সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতা। সিটি করপোরেশনের উচিত জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্পগুলো অন্য সংস্থার কাছে দিয়ে দেওয়া।

টুটপাড়ার বাসিন্দা জোবায়ের হোসেন বলেন, রাস্তা আর ড্রেনের সমস্যা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। বৃষ্টি ও জোয়ার হলে টুটপাড়ার মানুষের ঘরের বাইরে বের হওয়ার উপায় থাকে না। ড্রেন থেকে পানি নদীতে যাবে কী, উল্টো নদীর পানি মনে হয় ড্রেন দিয়ে শহরে ঢুকে। জলাবদ্ধতা এখন আমাদের স্থায়ী সমস্যা।

রুপসা স্ট্যান্ড রোডের বাসিন্দা আসিফ মাহমুদ বলেন, বৃষ্টি হলে মনে হয় না যে আমরা শহরে থাকি। মনে হয় নদীর কিনারায় থাকি। জলাবদ্ধতার কারণ খুঁজে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে সমস্যার সমাধান সিটি করপোরেশন করতে পারেনি। শুধু বাজেট আর টেন্ডার, কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। জবাবদিহিতা না থাকায় লুটপাট করে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে তার পরিনতি ভোগ করছে নগরবাসী। এখন আমরা পানির তলায়।

Advertisement

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, জলাবদ্ধতা খুলনা নগরীর দীর্ঘদিনের সমস্যা। সিটি করপোরেশনের কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকা, সঠিক পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার অভাবে জলাবদ্ধতায় নগরবাসী প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসনে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। শহরের ভৌগোলিক অবস্থান ও পানি ওঠা নামার সঙ্গে সংগতি না রেখেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাল বিল দখলের কারণেও জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না। বিগত দিনে জবাবদিহিতার মাধ্যমে কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। উন্নয়ন কাজে অর্থ তছরুপ হওয়ার জনশ্রুতিও রয়েছে।

তিনি বলেন, সিটি করপোরশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম নেই বললেই চলে। বর্জ্য আর পলিথিন আমরা যত্রতত্র ফেলছি। যা মোটেও উচিত না। জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদেরও সচেতন হতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না। পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

কেসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কোহিনুর জাহান বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ড্রেন পরিষ্কারের কাজ ধারাবাহিকভাবে করা হচ্ছে। মতিয়াখালি খাল ও ক্ষেত্রখালি খাল অঞ্চলে সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। বৃষ্টির আগে গুরুত্বপূর্ণ ড্রেনে জমে থাকা মাটি উত্তোলন করা হয়েছে ও ড্রেন পরিষ্কারের কার্যক্রম চলছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া নগরীর বড় বড় কয়েকটি ড্রেনের কাজ চলছে। বাঁধ দিয়ে ড্রেনের কাজ করায় পানি নামতে পারেনি। বাঁধ কেটে দেওয়ার পর পানি নেমে গেছে।

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রেখেছি। মরা খালগুলো পুনরায় জীবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে পানি আটকে না থাকে। এছাড়াও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের চলমান কাজ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরিফুর রহমান/এমএন/জেআইএম