আন্তর্জাতিক

হরমুজ প্রণালি দিয়ে কী পরিমাণ তেল সরবরাহ হয়?

হরমুজ প্রণালি দিয়ে কী পরিমাণ তেল সরবরাহ হয়?

বিশ্বজুড়ে তেল সরবরাহের জন্য কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালি। যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ব্যারেল তেল এই প্রণালি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতি বছর সমুদ্রপথে পরিবহন করা প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের জ্বালানি বাণিজ্যের সমতুল্য এটি।

Advertisement

ইরান যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয় তবে বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সময় বেশি ব্যয় হতে পারে এবং এর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে তেলের দামের ওপর। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য যেসব দেশ উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে তেল আমদানির ওপর নির্ভরশীল তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা হলে আরও গুরুতর প্রভাব হিসেবে ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।

ইআইএর এক প্রতিবেদন অনুসারে, এই পথ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবাহিত হয়, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ২১ শতাংশ। হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল এবং তেল পণ্য পরিবহন করা হয়, যা বিশ্বব্যাপী তেল চালানের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ।

Advertisement

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) এক প্রতিবেদন অনুসারে, হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত জ্বালানি তেলের প্রায় ৭০ শতাংশেরই ভোক্তা দক্ষিণ এশিয়া। এর মধ্যে রয়েছে চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাও সরাসরি মধ্যপ্রাচ্য থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। ফলে হরমুজ প্রণালিতে যেকোনো ধরনের প্রভাবের প্রতিক্রিয়া এসব দেশের জ্বালানি তেলের বাজারেও পড়বে।

হরমুজ প্রণালির বিস্তৃতিহরমুজ প্রণালি ইরান ও ওমানের মধ্যে অবস্থিত একটি চ্যানেল বা খাল। এর প্রবেশ এবং প্রস্থানপথ প্রায় ৫০ কিলোমিটার প্রশস্ত। মধ্যবর্তী স্থানে এর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশ প্রায় ৪০ কিলোমিটার প্রশস্ত। তবে এই প্রণালির কেন্দ্রীয় অংশ বড় জাহাজের চলাচল করার জন্য যথেষ্ট গভীর।

সামুদ্রিক নেভিগেশন চার্টে একটা নিরাপদ ইনবাউন্ড লেন, একটা নিরাপদ আউটবাউন্ড লেন এবং এই দুইয়ের মাঝে একটা বাফার জোন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষ করে ভারী তেল ট্যাঙ্কারগুলো কথা মাথায় রেখেই এটা করা হয়েছে। ফলে বড় জাহাজগুলোকে মাত্র ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত একটা চ্যানেল ধরে চলাচল করতে হয়।

ট্যাংকারগুলো পারস্য উপসাগরে প্রবেশের সময় ইরান এবং আরব দেশগুলোর মধ্যে বিতর্কিত অঞ্চল গ্রেটার এবং লেসার তুন্ব দ্বীপপুঞ্জকে অতিক্রম করে।

Advertisement

বিশেষজ্ঞের অনেকেই মনে করেন সমুদ্রে যান চলাচল ব্যাহত করার সবচেয়ে সম্ভাব্য পদ্ধতি হলো সামরিক অভিযান, ঠিক যেমনটা ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ঘটেছিল। ওই সংঘাতের সময় উভয় দেশই পারস্য উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে। এটি ‘ট্যাংকার যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। তবে কখনোই হরমুজ প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ করেনি ইরান। এটি বন্ধ করলে ইরান নিজেই বিপদে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

ইরানের দক্ষিণে অবস্থিত এই জলপথটি বিশ্বের জীবাশ্ম জ্বালানি সরবরাহের জন্য একটি সংকীর্ণ বাধাবিন্দু, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের ২০ শতাংশ এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ২০ শতাংশ প্রবাহিত হয়। হরমুজ প্রণালিকে ঘিরে থাকা প্রধান দেশগুলো হলো ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমান। এই দেশগুলোই হরমুজ প্রণালি নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করে।

টিটিএন