নিজ দলের এক নারী নেত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁসের জেরে নৈতিক স্খলনের অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারকে দলীয় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পাঁচদিনের মধ্যে তাকে অভিযোগ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলেছে দল৷
Advertisement
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সারোয়ার তুষার দাবি করেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি। তার নামে ভুয়া স্ক্রিনশট ও কনভারসেশন ভাইরাল করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) নিজের ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ পোস্টে এ দাবি করেন তিনি। সেখানে নিজেকে শুধরে নিতে প্রস্তুত আছেন বলেও জানান এ এনসিপি নেতা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, আমার নামে ভুয়া স্ক্রিনশট ও কনভারসেশন ভাইরাল করা হয়েছে। স্ক্রিনশটের ওই কনভারসেশনগুলো আমার নয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দল স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আমি লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেব।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৭ জুন) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
সারোয়ার তুষারের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-‘আমি ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে না। মানুষ হিসেবে আমার আরও ডেভেলপ করার স্কোপ আছে। যদি কোনো ভুল করি, অবশ্যই আপনারা আমাকে তা জানাবেন, আমি শুধরে নিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি কোনো অপরাধ করি নাই। এ ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল ও ব্যাশিং আমি ডিজার্ভ করি না। কোনো মানুষই করেন না। এই স্মিয়ার ক্যাম্পেইন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
আমার দলের কেন্দ্রীয় একজন যুগ্ম আহ্বায়ক নারী সহকর্মীকে যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, তার সঙ্গে আমার ছবি জুড়ে দিয়ে, জঘন্য কুৎসিত কথাবার্তা লিখে, ভিডিও বানিয়ে আমার আর তার নামে প্রচার করা হচ্ছে। যারা এই কুৎসিত কাজগুলো করছেন, দয়া করে করবেন না। রাজনৈতিক বিরোধিতা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে রাখার আহ্বান জানাই।
আরও পড়ুন
Advertisement
আমার দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নারী সহকর্মীরা এর আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুৎসা ও হ্যারাজমেন্টের শিকার হয়েছেন। এখন আমার সঙ্গে তাদের জড়িয়ে এই নোংরামিগুলো করবেন না। তারা সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত নারী। রাজনীতির বাইরেও তাদের ব্যক্তিগত জীবন আছে৷ তাদের জীবন বিষিয়ে তুলবেন না। আমার চরিত্রহনন করতে গিয়ে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবেন না। এটা আমার অনুরোধ। তারা কোনো দোষ করেননি।
আমি ভুলের ঊর্ধ্বে না। কিন্তু আমার তিন মাস আগের ব্যক্তিগত কথোপকথন কাটছাঁট করে পরিপ্রেক্ষিহীনভাবে অনলাইনে ছেড়ে দিয়ে আমাকে অপদস্থ করার মধ্যে কোনো গৌরব নাই।
এর আগেও আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ডিপার্টমেন্টের কালচারাল প্রোগ্রামের অভিনয়ের ছবিকে বিকৃত করে আমার বিরুদ্ধে স্মিয়ার ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে। আমি আমার জবান স্রেফ আমার রাজনৈতিক বিরোধীদের রাজনৈতিক সমালোচনায় খরচ করি। ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্রহনন ও কুৎসা রটনা করি না। একিলিস ও হেক্টরের যুদ্ধে একিলিস হেকটরকে বধ করেন ঠিকই; কিন্তু একজন বীর যোদ্ধার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে কুণ্ঠা করেন না।
২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চব্বিশের ৭ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত আমি লাগাতারভাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে অংশ নিয়েছি। ৫ আগস্টের পর আমি বিএনপির ব্যাপারে বেশ সমালোচনামুখর হয়েছি আমার রাজনৈতিক অবস্থানের জায়গা থেকে৷ সমালোচনা ও ভিন্নমত বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা।
সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের অভিজ্ঞতা বীভৎস। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল কিছু শুনতে চায় না; তার কাছে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত থাকে। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু ও মিত্ররা আমার ওপর ভরসা করেন। আমার প্রতি তাদের প্রত্যাশাও অনেক। আমার কোনো সাময়িক বিচ্যুতির কারণে তারা বিব্রত হয়ে থাকলে তাদের প্রতি আমি দুঃখপ্রকাশ করছি।
আমি জানি আমার জড়ানোর মাত্রা কতটুকু, আর কতটুকু আমি অর্গানাইজড ভার্চুয়াল মবের শিকার। আমার নামে ভুয়া স্ক্রিনশট ও কনভারসেশন ভাইরাল করা হয়েছে। ওই কনভারসেশনগুলো আমার না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দল স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আমি লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেবো।
আমি কাউকে কোনো ধরনের হুমকি-ধমকি দেই নাই। দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতেই আমি নাই। এ ব্যাপারে আমার নামে ফেসবুকে যা প্রচার করা হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা। আমি এমনকি আমার এই পোস্টেও সংশ্লিষ্ট অপরপক্ষের পরিচয় প্রকাশ করছি না। যা যা বলার আছে, তা আমি দলের কাছেই লিখিতভাবে বলবো। সোশ্যাল মিডিয়ার সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, আমার দলের কেন্দ্রীয় কোনো নারী বা দলের বাইরের অন্য কোনো নারীকে ঘিরে কুৎসা রটনা করবেন না।
ভবিষ্যতে আমি আরও পরিশীলিত হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। আমাকে যারা সমালোচনা ও বিরোধিতা করেন, তাদের প্রতিও আমার আহ্বান থাকবে আপনারা রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও চরিত্রহননে পর্যবসিত করবেন না। বাংলাদেশপন্থার জয় হোক।’
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সারোয়ার তুষারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কথা জানায় এনসিপি৷ দলের পক্ষ থেকে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত বিজ্ঞপ্তিটি গণমাধ্যমে পাঠান৷
কারণ দর্শানোর নোটিশে এনসিপি বলেছে, আপনার বিরুদ্ধে একটি নৈতিক স্খলনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে৷ ওই বিষয়ে আপনার সুনির্দিষ্ট অবস্থান ও ব্যাখ্যা দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব মো. আখতার হোসেন জানতে চেয়েছেন৷ এমন অবস্থায় উত্থাপিত নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগে আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার লিখিত ব্যাখ্যা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে দলের রাজনৈতিক পর্ষদ এবং এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি বরাবর পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো।
বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার আগপর্যন্ত সারোয়ার তুষারকে এনসিপির সব সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে দলের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের যৌথ নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়ার কথাও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷
গতকাল সোমবার সারোয়ার তুষারের একটি ফোনালাপ ফাঁস করেন প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর। ফোনালাপে এনসিপির এক নারী নেত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিতে শোনা যায় সারোয়ার তুষারকে। এরপরই এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ করেন, এনসিপি নেতা সারোয়ার তুষার নিজ দলের নারী নেত্রীকে হয়রানি করেছেন৷
এনএস/এমকেআর/এমএস