আম খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন। গ্রীষ্মের প্রখর তাপে যখন শরীর ও মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন এক টুকরো পাকা আম যেন হয়ে ওঠে প্রশান্তির পরশ। শিশুদের কাছে আম মানে আনন্দ; আর বড়দের কাছে তা শৈশবের মিষ্টি স্মৃতি। কাঁচা আমের টক স্বাদ যেমন জিভে আনে চমক, তেমনি পাকা আমের মধুরতা মনের গভীরে গেঁথে থাকে দীর্ঘদিন।
Advertisement
তবে আম খাওয়ার সময় একটা প্রশ্ন অনেকের মনেই উঁকি দেয়-এত সুস্বাদু, রসালো আর আকর্ষণীয় একটি ফলের নাম ‘ল্যাংড়া’ কেন? আমের তো পা নেই, তাহলে ল্যাংড়া নামটি কোথা থেকে এলো? নামটি যেন একেবারেই অপ্রত্যাশিত! এর পেছনে কি কোনো গল্প বা ইতিহাস লুকিয়ে আছে? সেই কৌতূহল থেকেই আজকের এই লেখার আয়োজন।
আম যদিও বাংলাদেশের জাতীয় ফল নয়, তবুও এ দেশের মানুষের হৃদয়ে আমের অবস্থান যেন রাজসিংহাসনে। এ কারণে আম ফলের রাজা। জনপ্রিয়তার কারণে দেশে দিন দিন আমের চাষ বাড়ছে, উদ্ভাবন হচ্ছে নতুন নতুন জাত। নানা জাতের আমের রয়েছে বিচিত্র নাম- কোনোটার নাম ফুলের মতো, কোনোটা নাম একটু ভিন্নতা, আবার কোনোটায় ইংরেজি ছোঁয়া। স্বাদ, ঘ্রাণ ও গুণাগুণেও রয়েছে ভিন্নতা।
বাংলাদেশে যে কয়েকটি উৎকৃষ্ট জাতের আম আছে, তার মধ্যে ল্যাংড়া নিঃসন্দেহে অন্যতম। অনেকেরই প্রিয় এই আমটি শুধু স্বাদে নয়, গন্ধে ও রসালতায়ও অনন্য। তবে নাম শুনেই কমবেশি সবার মনে হাস্যরস তৈরি হয় ল্যাংড়া নাম কেন? আম তো হেঁটে বেড়ায় না! পা-ও নেই। তাহলে কীভাবে এ নাম এলো?
Advertisement
এই প্রশ্ন আমাকেও ভাবিয়েছে। এত মজাদার একটি ফলের নাম এমন অদ্ভুত কেন? চলুন জেনে নেই এর পেছনের গল্প।
ধারণা করা হয়, আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগের কথা। ভারতের বিহার প্রদেশের এক ফকিরের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা এক চারাগাছ থেকেই ল্যাংড়া আমের গোড়াপত্তন। সেই ফকিরের বাড়িতে ছিল প্রচুর আমগাছ। তবে মালিকের পায়ে সমস্যা থাকার কারণে তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটাচলা করতেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা বা স্মরণে হয়তো এই আমের নামকরণ হয় ল্যাংড়া। উত্তর প্রদেশের বারানসি থেকে ল্যাংড়া আমের উৎপত্তি।
তবে এখানেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়-ফকির বলতে কি আমরা সেই ভাববাদী দরবেশদের বুঝি, নাকি দানের ওপর নির্ভরশীল কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে? যদি তিনি কেবল দান গ্রহণ করেই জীবনযাপন করতেন, তাহলে তার বাড়ির চারপাশে এত আমগাছ কীভাবে গড়ে উঠলো? নিজেই কি সেই বাগান তৈরি করেছিলেন? এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর এখনো খোঁজে পাওয়া যায়নি।
ল্যাংড়া আম পাকার পর হয়ে ওঠে হালকা হলদে রঙের। কাঁচা অবস্থাতেই এর ঘ্রাণ মাতাল করা। বোঁটা চিকন, আঁটি পাতলা। ছোট ছোট টুকরো করে খাওয়ার জন্য আদর্শ। এটি পরিপক্ব হওয়ার পর তুলনামূলকভাবে বেশিদিন ভালো থাকে ৮ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত।
Advertisement
আঁটি পাতলা হওয়ার কারণে ল্যাংড়া আমে খাওয়ার উপযোগী অংশ বেশি থাকে। এটি একটি মধ্য মৌসুমি জাত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায়।
যদিও এর উৎপত্তি ভারতের বারানসি শহরে হলেও বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও এর চাষ হয়। বাংলাদেশে প্রায় সব জেলাতেই ল্যাংড়া আম জন্মে। তবে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর এবং সাতক্ষীরা অঞ্চলের ল্যাংড়া আম বেশি চাষ হয়। যা স্বাদ ও মানের দিকে দেশজুড়ে সুনামও রয়েছে।
ল্যাংড়া আম শুধু স্বাদেই নয়, ইতিহাসেও একটি রহস্যময় নাম। তার অদ্ভুত নামের পেছনে লুকিয়ে থাকা গল্প আজও কৌতূহল জাগায় আমাদের মনে।
আরও পড়ুনগাছের ভাষায় প্রকৃতির পাঠশালাপরিবেশবান্ধব কাগজের কলম বানিয়ে সফল রাজুকেএসকে/জেআইএম