আন্তর্জাতিক

ইরানের নতুন সামরিক কমান্ডার কারা?

ইরানের নতুন সামরিক কমান্ডার কারা?

ইরাক-ইরান যুদ্ধের পর গত শুক্রবার সকালে সবচেয়ে মারাত্মক বিদেশি আক্রমণের শিকার হয়েছে ইরান। ইসরায়েলের চালানো হামলায় ইরানের শীর্ষ কয়েকজন সামরিক কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভুলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের কমান্ডার হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের কমান্ডার গোলামালি রশিদ এবং আইআরজিসির এরোস্পেস ফোর্সের কমান্ডার আমির আলি হাজিজাদেহ।

Advertisement

ইসরায়েলি হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি তার প্রথম বার্তায় জোর দিয়ে বলেন, হামলায় কয়েকজন কমান্ডার নিহত হওয়ার পর তাদের উত্তরসূরি এবং সহকর্মীরারা অবিলম্বে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। এর কয়েক ঘন্টা পরেই তিনি তিনটি নিয়োগ ডিক্রি জারি করেন এবং পূর্ববর্তী কমান্ডারদের স্থলাভিষিক্ত করে তিন জেনারেলকে নিয়োগ দেন। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আবদুর রহিম মুসাভিকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করা হয়।

আইআরজিসির স্থল বাহিনীর কমান্ডার মোহাম্মদ পাকপুর এবং আইআরজিসির কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে হোসেইন সালামিকে নিয়োগ দেন এবং খাতাম আল-আম্বিয়া সদর দপ্তরে গোলামালি রশিদের স্থলাভিষিক্ত হন আলী শাদমানি।

এরপর শুক্রবার গভীর রাতে আরেকটি ডিক্রি জারি করা হয় যেখানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামিকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করা হয় এবং আবদুর রহিম মুসাভির স্থলাভিষিক্ত করে ইসলামিক রিপাবলিক আর্মির কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। গত শনিবার (১৪ জুন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজিদ মুসাভিকে আইআরজিসির এরোস্পেস ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করেন খামেনি।

Advertisement

সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান আবদুর রহিম মুসাভি মেজর জেনারেল সাইয়্যেদ আবদুর রহিম মুসাভি ১৯৫৯ সালে ইরানের কোমে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইসলামিক রিপাবলিকের সেনাবাহিনীর একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে তার নিয়োগ ইরানের সামরিক কমান্ডের কাঠামোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে ধরা হচ্ছে। কারণ প্রথমবারের মতো, এই পদটি আইআরজিসি কমান্ডারদের বাইরের কাউকে দেওয়া হয়েছে। পূর্বে আইআরজিসি কমান্ডাররাই এই পদে নিয়োগ পেতেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তন ইরানের সামরিক কাঠামোতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা পুনঃর্নির্ধারণের আভাস হতে পারে। আবার সাম্প্রতিক বিভিন্ন হামলায় আইআরজিসির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিনিয়র কমান্ডার নিহত হয়েছেন। তাই শীর্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা রদবদলের প্রয়োজন হতে পারে।

আবদুর রহিম মুসাভি ১৯৭৯ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং সেনাবাহিনীর অফিসার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি জাতীয় প্রতিরক্ষা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়, তিনি পশ্চিম কুর্দিস্তান এবং দক্ষিণ-পশ্চিম খুজেস্তান ফ্রন্টে সেনাবাহিনীর আর্টিলারি র‌্যাংকে সংযুক্ত ছিলেন এবং ভালফাজর-৪ এবং ৯ অপারেশন, বাইত আল-মাকদিস-৫, কাদির এবং নাসর-এ অংশগ্রহণ করেন।

Advertisement

ইরান-ইরাক যুদ্ধে তার উল্লেখযোগ্য নৈপুণ্য ছিল এবং তাকে ‘যুদ্ধে অভিজ্ঞ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সমাপ্তির পর মুসাভি সামরিক কাঠামোতে দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন।

প্রথম দিকের বছরগুলোতে তিনি ইমাম আলী সামরিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি, নেজাজার উত্তর-পূর্ব ঘাঁটির কমান্ডার এবং স্থল বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনার ডেপুটি ছিলেন।

২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে তিনি জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের প্রধান ছিলেন এবং তারপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ ছিলেন এবং সে বছর তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন এবং সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ নিযুক্ত হন, যেখানে তিনি আট বছর দায়িত্ব পালন করেন।

ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি আর্টিলারি পদে সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুসাভি ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ ছিলেন এবং ২০১৭ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন।

এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, তার বাবার একটি স্পিনিং ওয়ার্কশপ ছিল এবং তিনি ছয় বছর বয়স থেকেই সেখানে কাজ করতেন। তিনি ২৩ বছর বয়সে বিয়ে করেন এবং তার দুজন ছেলে আছে।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে, তার ফুটবল রেফারি এবং কোচিংয়ে ডিগ্রি রয়েছে এবং চরম মানসিক চাপের কারণে তিনি জাতীয় ফুটবল দলের খেলা দেখতে পারেন না। সেনাবাহিনীতে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেছিলেন, আজ আমার স্বপ্ন হলো ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা নির্মূল করা।

মোহাম্মদ পাকপুর, বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার১৯৬১ সালে আরাক শহরে জন্মগ্রহণকারী মেজর জেনারেল মোহাম্মদ পাকপুর ইসলামিক রেভুলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর একজন অভিজ্ঞ কমান্ডার। তিনি কমান্ডার ইন চিফ নিযুক্ত হওয়ার আগে ১৬ বছর ধরে আইআরজিসির স্থল বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন।

পাকপুর ইরানের প্রাথমিক বিপ্লবের নিরাপত্তা সংকটে বিশেষ করে কুর্দিস্তানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি আইআরজিসির সাঁজোয়া ইউনিটের কমান্ডার ছিলেন এবং যুদ্ধের পর তিনি নাজাফ আশরাফের ৮ম ডিভিশন এবং আশুরার ৩১তম ডিভিশনের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যুদ্ধের সময় আহত হয়েছিলেন।

মোহাম্মদ পাকপুর ক্লাসিক্যাল এবং গেরিলা যুদ্ধে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কমান্ডারদের একজন। যুদ্ধের পর পাকপুর আইআরজিসির কমান্ড কাঠামোতে বেশ কয়েকটি দায়িত্ব গ্রহণ করেন, যার মধ্যে রয়েছে নুসরাত এবং উত্তরাঞ্চলীয় ঘাঁটির কমান্ডার, আইআরজিসির জেনারেল অপারেশনের ডেপুটি এবং স্থল বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা।

২০০৯ সালে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ নেতার একটি ডিক্রি দ্বারা তাকে আইআরজিসির স্থল বাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। এই পদে তিনি ২০২৫ সাল পর্যন্ত বহাল ছিলেন। এই সময়কালে তিনি সাবেরিনের মতো বিশেষ ইউনিট তৈরি করেন, যার বিশেষ লক্ষ্য সীমান্ত নিরাপত্তা এবং ‘অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক হুমকি’ মোকাবিলা করা।

তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং তারবিয়াত মোদারেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক ভূগোলে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তার ডক্টরেট গবেষণার বিষয় ছিল ইরানের জাতিগত অঞ্চলে টেকসই নিরাপত্তা তৈরির জন্য একটি উপযুক্ত মডেল।

২০১৭ সালের জুনে ইসলামিক কনসালটেটিভ অ্যাসেম্বলি এবং আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারে হামলার সময় পাকপুর ব্যক্তিগতভাবে সাবেরিন ইউনিটের অপারেশন পরিচালনা করেছিলেন।

তিনি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ নেতার কাছ থেকে বিজয়-১ পদক পেয়েছেন এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত কমান্ডারদের একজন তিনি। ২০১৯ সালের নভেম্বরের বিক্ষোভ দমনে তার ভূমিকার জন্য ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

মোহাম্মদ পাকপুর তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকার এবং মন্তব্যে হাইব্রিড যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আইআরজিসির ভূমিকার মতো বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছেন। বেসামরিক ক্ষেত্রে আইআরজিসির ভূমিকাকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে প্রধান কারিগরদের একজন তিনি।

আলী শাদমানি, খাতাম আল-আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের কমান্ডারইসরায়েলি আক্রমণে গোলামালি রশিদ নিহত হওয়ার পর হামেদান শহরে জন্মগ্রহণকারী আলী শাদমানিকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করা হয় এবং খাতাম আল-আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হন।

ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে বড় ও কর্মক্ষম ঘাঁটি এটি, যা যুদ্ধ এবং সংকটময় পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী, আইআরজিসি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধনে কাজ করে। ইরানি গণমাধ্যমের মতে, আলী শাদমানি ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের আগে মাশহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজির ছাত্র ছিলেন, পরে তিনি স্কুল ছেড়ে দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

বিপ্লবের শুরুর দিকে তিনি চাকরি ছেড়ে হামাদানে বিপ্লবীদের সাথে যোগ দেন। শাদমানি ১৯৭৯ সালে আইআরজিসির সদস্য হন এবং কুর্দিস্তানের অস্থিরতার সময় পাভেহ, সানন্দজ এবং সাক্কেজ শহরে উপস্থিত ছিলেন।

১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি আনসার আল-হুসেনের ৩২তম ডিভিশনের কমান্ডার ছিলেন, যা দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ ফ্রন্টের সক্রিয় ইউনিটগুলির মধ্যে একটি।

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, তাকে আইআরজিসি স্থল বাহিনীর অপারেশনের জন্য ডেপুটি নিযুক্ত করা হয় এবং ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি হামজা সাইয়্যেদ আল-শুহাদা স্পেশাল ফোর্সের তৃতীয় ডিভিশনের কমান্ডার ছিলেন, এটি এমন একটি ইউনিট যা বিশেষায়িত এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে।

এরপর ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি নাজাফ আশরাফ ঘাঁটির কমান্ডার হন, যা মূলত দেশের পশ্চিমাঞ্চল এবং সীমান্ত হুমকি মোকাবেলায় কাজ করে।

২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের অপারেশন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তারপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের অপারেশনের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০২৫ সালের ১৩ জুন খাতাম আল-আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি প্রায় নয় বছর ধরে ঘাঁটিটির ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শাদমানি ১০ বছর আগে সিরিয়ায় নিহত আইআরজিসির শীর্ষ কমান্ডার হোসেইন হামেদানির সাথে কাজ করেছেন।

আমির হাতামি, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক১৯৬৬ সালে জানজানে জন্মগ্রহণ করেন আমির হাতামি। ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসনে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ইরানি মিডিয়া অনুসারে, তিনি অল্প বয়সে ইরান-ইরাক যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

হাতামি যুদ্ধের শেষ বছরগুলোতে অপারেশন মেরসাদসহ পশ্চিম ফ্রন্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। যুদ্ধের পর গোয়েন্দা এবং অপারেশনাল ক্ষেত্রগুলোতে মনোযোগ দিয়ে সামরিক বাহিনীতে তার পদোন্নতি অব্যাহত ছিল।

১৯৯৮ সাল থেকে তিনি প্রায় সাত বছর ধরে জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফের গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পরিচালক ছিলেন এবং তারপর সেনাবাহিনীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অফিসের প্রধান সেনাবাহিনীর জেনারেল কমান্ডের সুপ্রিম অ্যাডভাইজার্স গ্রুপের প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের জনশক্তি বিভাগের উপ-পরিচালকের মতো দায়িত্ব পালন করেন।

২০১০’র দশকে হাতামি ইরানের ১১তম সরকারে উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং ১২তম সরকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে উন্নীত হন এবং আইআরজিসির অধীনে বহু বছর ধরে এই পদে দায়িত্ব পালনের পর সেনা কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন।

মন্ত্রিত্ব থাকাকালীন তিনি দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়ন, ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা শক্তিশালীকরণ এবং জোটবদ্ধ দেশগুলোর সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন। সামরিক দায়িত্বের পাশাপাশি, হাতামি আর্মি কমান্ড-অ্যান্ড-স্টাফ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতাও করেন।

২০২২ সালের অক্টোবরে কানাডিয়ান সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযোগ তোলে এবং আমির হাতামির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

২০২৪ সালের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ান সরকার ইরানের মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীল কার্যকলাপ বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কর্মসূচি এবং এই অঞ্চলে প্রক্সিদের প্রতি ইরানের সমর্থনের জন্য আমির হাতামিসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র ইরানি কমান্ডারকে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

হোসেইন (মাজিদ) মুসাভি ইফতেখারি, আইআরজিসি এরোস্পেস ফোর্সের কমান্ডারমাজিদ মুসাভি নামে পরিচিত হোসেইন মুসাভি ইফতেখারি তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি বিপ্লবী গার্ডের একজন অভিজ্ঞ কমান্ডার। এই নিয়োগের আগে তিনি আইআরজিসি এরোস্পেস ফোর্সের ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইরানি মিডিয়া অনুসারে, তিনি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন সিস্টেম এবং মহাকাশ সরঞ্জামের নকশা, উন্নয়ন এবং বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি হাসান তেহরানি মোগাদ্দামের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আমির আলী হাজিজাদেহের সাথে ছিলেন যিনি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের জনক হিসেবে পরিচিত। আমির আলী হাজিজাদেহ ২০১১ সালে মালার্ড শহরের একটি গোলাবারুদ ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহত হন।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কর্মসূচির উন্নয়নে তার সরাসরি ভূমিকার জন্য হোসেইন মুসাভি ইফতেখারির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

টিটিএন