গাইবান্ধার সাঘাটায় যমুনা নদীর তীরে বালুমাটি দিয়ে বাঁধ সংস্কারের অভিযোগ উঠেছে। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও ধস দেখা দিয়েছে। মাটির বদলে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় ধসে গেছে সেটি। এখন ধসে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের ওপর দিয়েই পথচারী ও যান চলাচল করছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই।
Advertisement
বর্ষা শুরুর আগেই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের দাবি স্থানীয়দের। তারা বলেন, ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাদের যোগসাজশে মাটির পরিবর্তে বালুমাটি দিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ করেছে। এতে বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, এস্কেভেটর দিয়ে বাঁধের নিচ থেকেই বালুমাটি তুলে সংস্কার করা হয়েছে। যার কারণে গত কয়েক দিনের সামান্য বৃষ্টিতে বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ধস দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে যমুনার প্রবল পানির চাপে বাঁধ ভেঙে প্রাণীকূলসহ ফসলি জমির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার সাঘাটা যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণে বাঁশহাটা উকুনপাগলীর মোড় থেকে বসন্তবাড়ী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার বাঁধের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তিন প্যাকেজে যৌথভাবে বাঁধ তৈরির কাজ পান রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসান এবং এমএস রহমান। নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প-১ এর কাজটি শুরু হয় ২০২৩ সালের শুরুর দিকে।
Advertisement
সম্প্রতি ওই বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আশপাশের বিভিন্ন বাড়ি, বাগান, মাঠ, নদীর পাড়ে ছোট-বড় গর্ত। যেখান থেকে বাঁধের জন্য মাটি নেওয়া হয়েছে। এস্কেভেটর দিয়ে নদীর তীর থেকেও বালুমাটি তোলা হয়েছে। এতে বাঁধ লাগোয়া গর্ত তৈরি হয়েছে। সেই গর্তের মাটি-বালু দিয়ে মাঝে ফাঁকা রেখে দু’পাশে উঁচু আইলের মতো তৈরি করা হয়েছে। বাঁশহাটা, মুন্সিরহাট, ইটাকুড়ি, কাঁটাদ্বার, খেয়াহাট, ডাকবালা ও জমারবাড়ি এলাকায় বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় শত শত জায়গায় ফাটল ও ধস দেখা গেছে।
মুন্সিরহাটের স্থানীয় বাসিন্দা সাহেব মিয়া বলেন, বাঁধের কাজের সময় নিচ থেকে বালুমাটি তুলে সংস্কার করা হয়েছে। তাই সামান্য বৃষ্টিতে বাঁধে ফাটল দেখা গেছে। নদীতে পানি বেড়ে চাপ সৃষ্টি করলেই বাঁধ ভেঙে যাবে।
আরেক বাসিন্দা মেহের আলী বলেন, কাজ করার সময় পানি উন্নয়নের কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের আমরা কাজের অনিয়ম নিয়ে কথা বললেও শোনেননি। উল্টো আমাদের কাজের স্টিমেট সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই বলে হুমকি দিয়েছেন। বালুমাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় বৃষ্টির সময় গর্ত ও ধসে গেছে। আর খরায় বালু ফুটে ওঠার কারণে মানুষসহ যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
ইটাকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা ময়নুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, জনগণের টাকায় এমন কাজ করে লাভ কী? নদী থেকে বালু উঠিয়ে যদি পাড়েই দিতে হয় তাহলে কোনো উপকার হলো না। কিছুদিন পরইতো ধসে যাচ্ছে। বন্যায় এই বাঁধ কতক্ষণ টিকে থাকবে।
Advertisement
এ বিষয়ে ঠিকাদার হাসিবুল হাসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পাউবোর গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, আমিও শুনছি বাঁধটিতে বৃষ্টির কারণে বেশ কয়েক জায়গায় সামান্য করে ধসে গেছে। তবে বাঁধের কাজ এখনও চলমান রয়েছে। বাঁধের কাজে ঠিকাদারের ইচ্ছাকৃত অনিয়ম পেলে বিল আটকে রাখা হবে।
এএনএইচএস/এফএ/জেআইএম