বর্তমান বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বৃদ্ধির প্রয়াসে ব্যাপক সরকারি উদ্যোগ দৃশ্যমান। তথাপি উদ্যোগের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার মাঝে তৈরি হয়েছে ব্যাপক সম্ভবনা। তবে এই সম্ভাবনাকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন বৈদেশিক বিনিয়োগের নতুন উৎস আহরণ এবং বর্তমান বিনিয়োগ কাঠামোকে আরও গতিশীল ও যুগোপযোগী করে তোলার বিষয়ে মনোযোগী হওয়া। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য প্রতিযোগিতা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাস্তবতায় বাংলাদেশকে সফল হতে হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে আগ্রহী বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য নির্ভরযোগ্য গন্তব্যে পরিণত করতে হবে।
Advertisement
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো বৈদেশিক বিনিয়োগ। বিশেষত, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলসমূহ (EPZs) বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। তবে এই সুযোগকে আরও বেগবান করতে হলে প্রয়োজন বহুমাত্রিক ও টেকসই বিনিয়োগ কৌশল গ্রহণ। বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রধানতঃ বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে আসে। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নতুন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হলে দেশকে একটি বিনিয়োগ-সহায়ক ও আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে ব্র্যান্ডিং করার উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রথমত, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলো যেকোনো বড় বিনিয়োগের অন্যতম পূর্বশর্ত। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিযোগিতামূলক বিনিয়োগ পরিবেশে বাংলাদেশকে এখনই আরও টেকসই, যুগোপযোগী ও বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগ কৌশল গ্রহণ করতে হবে।সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ অংশগ্রহণে “ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড” চালু করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এই বন্ডে লগ্নীকৃত অর্থ হতে পারে করমুক্ত ও দীর্ঘমেয়াদি, যা শিল্পাঞ্চল, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও পানি সরবরাহ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে। এর ফলে সরকারের ব্যয়ভার হ্রাস পাবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি উন্নত ও স্থিতিশীল বিনিয়োগ পরিবেশ গড়ে উঠবে। ইকুইটি ও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) ভিত্তিক উদ্যোগ হিসেবে EPZ/EZ ভিত্তিক প্রকল্পগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে। এতে যেমন স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে, তেমনি স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। একই সঙ্গে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও জাতীয় উন্নয়নের অংশীদার হতে পারবেন।
যদি রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, এবং বিশ্বমানের বিনিয়োগ কাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে বৈচিত্র্যময় অর্থায়নের নতুন দিগন্ত খুলে যাওয়া এখন শুধু সম্ভাবনাই নয়, বাস্তবতা। এক্ষেত্রে শুধু FDI নয়, বরং উদ্যোক্তা তৈরির ধারা, টেকসই শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পথও প্রসারিত হবে। এখনই সময়-বাংলাদেশকে একটি আত্মবিশ্বাসী, প্রযুক্তিনির্ভর ও প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার।
Advertisement
বিশেষায়িত অঞ্চলের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও এঞ্জেল ইনভেস্টরদের অন্তর্ভুক্তি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ হতে পারে। উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বিশেষায়িত “Startup Fund” গঠন করা যেতে পারে, যেখানে দেশি-বিদেশি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও এঞ্জেল ইনভেস্টরদের সহায়তা থাকবে। উন্নত প্রযুক্তি, গ্রিন ফ্যাক্টরি ও স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং উদ্যোগের বিকাশে এটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে কাজ করতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রাপ্রবাহে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদান দেশের অর্থনীতির জন্য এক অপরিহার্য স্তম্ভ। দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখলেও প্রবাসীদের বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাঠামোগতভাবে এখনো পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা হয়নি। বাংলাদেশে বৈদেশিক রেমিটেন্স আয়ের দিক থেকে তৈরি পোশাক খাতের পরই রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। যার অধিকাংশই অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয়/বিনিয়োগ করা হয়। যদি একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রবাসীদের জন্য নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং আকর্ষণীয় বিনিয়োগ বিকল্প যেমন: কর-ছাড় সুবিধা, মূলধন ও মুনাফা সহজে প্রেরণের নিশ্চয়তা, প্রকল্পভিত্তিক গ্যারান্টি ইত্যাদি-নিশ্চিত করা যায়, তবে তাঁদের সঞ্চিত অর্থ শিল্পায়নের মূলধনে পরিণত হওয়া সম্ভব।
এখানে ডায়াসপোরা বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম অর্থাৎ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র “NRB Investment Portal” তৈরি করে বিনিয়োগের সুযোগ ও লাভের নিশ্চয়তা দিলে তাঁদের বৃহৎ অর্থনৈতিক সম্পদকে শিল্পায়নের মূলধনে রূপান্তর করা সম্ভব। এমন একটি পোর্টাল শুধু মূলধন আহরণে নয়, বরং প্রবাসীদের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে এবং তাঁদের ‘উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারী’ হিসেবে নতুন পরিচিতি এবং সম্মান দুটোই এনে দেবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।
পরিবেশবান্ধব ও ঝুঁকিপ্রবণ প্রকল্পসমূহে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিলের কার্যকর ব্যবহার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের একটি কৌশলগত অবস্থান তৈরি করা পারে। বৈশ্বিকভাবে SDG Fund, Green Climate Fund (GCF), এবং GAVI Alliance-এর মতো সংস্থাগুলো টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনস্বীকার্য।বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা, মঙ্গা ও অনুন্নত এলাকায় যদি এই তহবিলগুলোকে ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স কাঠামোর আওতায় সমন্বিতভাবে ব্যবহার করা যায় অর্থাৎ সরকারি ও বেসরকারি মূলধনের সঙ্গে এই তহবিলের সমন্বয় ঘটানো যায়,তবে ঝুঁকি হ্রাসের পাশাপাশি প্রকল্পের ব্যয়ও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই কৌশলে একদিকে যেমন পরিবেশগত ও সামাজিক দায়বদ্ধতা (ESG) পূরণ করা যাবে, অন্যদিকে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনও সহজ হবে। জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো, গ্রিন ফ্যাক্টরি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রকল্পে এই অর্থায়ন কাঠামো একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিশ্ববাজারে একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য। তবে বৃহৎ ও দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে এখনো কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতনামা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (EPZ) ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (SEZ) বিনিয়োগ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হতে পারে একটি কার্যকর ও টেকসই কৌশল।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণের জন্য নির্ভরযোগ্য হতে পারে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত প্রভাবশালী ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে দেশের বড় বড় বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপনের সাথে সম্পৃক্ত করা। বিশ্ববিখ্যাত ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন BlackRock, Vanguard, State Street Goldman Sachs ইত্যাদি ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ পরিচালনা করে থাকে এবং বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম অত্যন্ত প্রভাবশালী। বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (EPZ) এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য এ ধরনের গ্লোবাল ফান্ড ম্যানেজারদের সরাসরি সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা সময়োপযোগী হতে পারে বলে মনে করেন এই বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশ্লেষকগণ। এই লক্ষ্যে বিডা,বেপজা,বেজা অথবা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করা যেতে পারে, যেখানে নির্দিষ্ট প্রকল্পসমূহের বিনিয়োগ সম্ভাব্যতা, স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন (audited financials), প্রত্যাশিত রিটার্ন (ROI), এবং আন্তর্জাতিক মানের ক্রেডিট রেটিং উপস্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ স্বচ্ছতা ও ডাটা ভিত্তিক পরিবেশ নিশ্চিত করে এসব ফান্ড ম্যানেজারদের আস্থা অর্জন করা অসম্ভব নয়।
Advertisement
বিশ্বের উদীয়মান শিল্প/সেবা খাতে যেভাবে BlackRock, State Street, Vanguard, PIMCO এবং Goldman Sachs-এর মতো প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামো, টেকসই শিল্প, গ্রিন এনার্জি ও প্রযুক্তিনির্ভর/টেকনোলজি খাতে বিনিয়োগ করছে, তেমনি বাংলাদেশেও বিশেষ করে EPZ-ভিত্তিক সম্ভাবনাময় প্রকল্পগুলোতে তাদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা যেতে পারে।
সম্প্রতি বেপজার বিভিন্ন ইপিজেডে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এই ধারণাকে জোরালোভাবে প্রতিফলিত করে যে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বৈশ্বিক বিনিয়োগ মানচিত্রে একটি সম্ভাবনাময় শক্তিশালী গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। এই আগ্রহকে কার্যকর বিনিয়োগে রূপান্তর করতে হলে বর্তমানে দেশে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান সমূহের আন্তর্জাতিক মানের ফিন্যান্সিয়াল ডেটা, স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন, প্রকল্পভিত্তিক ROI বিশ্লেষণ এবং রেটিং সিস্টেম জোরদার করতে হবে। এ সকল পদক্ষেপের মাধ্যমে শুধু বৈদেশিক মূলধনের প্রবাহ বাড়বে না, বরং বাংলাদেশে বিশ্বায়িত কর্পোরেট গভর্ন্যান্স, উন্নত বিনিয়োগ স্বচ্ছতা, এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে।
রেগুলেটরি রিফর্ম ও ডিজিটাল ফ্যাসিলিটেশনের মাধ্যমে বিনিয়োগ অনুমোদন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও সময়সাশ্রয়ী করতে হবে। ‘এক্সপ্রেস ক্লিয়ারেন্স’ (এক্সপ্রেস ক্লিয়ারেন্স’ /Express Clearance হলো দ্রুত এবং সহজতর শুল্ক ও কাস্টমস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পণ্য ছাড়করণ (customs clearance) ব্যবস্থা, যা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে সময় ও ব্যয় কমানোর জন্য গৃহীত হয়) নামে একটি দ্রুত ট্র্যাক প্ল্যাটফর্ম চালু করলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। একইসাথে, কর কাঠামোর সরলীকরণ, নীতিনির্ধারণে পূর্বানুমানযোগ্যতা এবং স্থিতিশীলতা বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে বাংলাদেশের Ease of Doing Business, Economic Freedom Score, এবং Rule of Law Index-এ অবস্থান আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এখনো আশানুরূপ নয়।
এই সূচকগুলোর দুর্বলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত, যা বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) আকর্ষণ ও টেকসই শিল্প বিকাশে বাধাস্বরূপ কাজ করে। তবে, বাংলাদেশ যদি বৈচিত্র্যময় ও টেকসই অর্থায়নের কৌশলসমূহ (যেমন গ্লোবাল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা, ইনোভেটিভ ফিনান্সিং মডেল, PPP, ইত্যাদি) বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা প্রদর্শন করে, তাহলে তা কেবল FDI বৃদ্ধিই নয়, বরং:নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পরিবেশ সৃষ্টি,শিল্পায়নের পরিধি ও গতি বৃদ্ধি, এবং একটি টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি গড়ে তোলার ভিত্তি নির্মাণ করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ একটি উত্তরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে; যেখানে কৌশলী সিদ্ধান্ত, সময়োপযোগী সংস্কার, এবং উদ্ভাবনী অর্থায়নের মাধ্যমে দেশকে একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক বিনিয়োগ এখন আর শুধু মূলধনের বিষয় নয়, এটি হচ্ছে আস্থা, স্বচ্ছতা ও দূরদৃষ্টির প্রতিফলন।
যদি রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, এবং বিশ্বমানের বিনিয়োগ কাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে বৈচিত্র্যময় অর্থায়নের নতুন দিগন্ত খুলে যাওয়া এখন শুধু সম্ভাবনাই নয়, বাস্তবতা। এক্ষেত্রে শুধু FDI নয়, বরং উদ্যোক্তা তৈরির ধারা, টেকসই শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পথও প্রসারিত হবে। এখনই সময়-বাংলাদেশকে একটি আত্মবিশ্বাসী, প্রযুক্তিনির্ভর ও প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসই হবে আগামী দিনের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় মূলধন।
লেখক : আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক বিশ্লেষক।
এইচআর/জিকেএস