রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় বাতিল করে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। নিবন্ধন ও অন্যান্য বিষয়ে দলটির করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
Advertisement
তবে জামায়াতে ইসলামীর প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ থাকবে কি না সে বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি দেশের সর্বোচ্চ আদালত। জামায়াতের প্রতীকের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। অবিলম্বে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
জামায়াতের আপিল আবেদন মঞ্জুর করে নির্ধারিত দিন রোববার (১ জুন) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় ঘোষণা করেন।
গত ১৪ মে দলটির করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ রায়ের জন্য আজকের দিন (১ জুন) ধার্য করেছিলেন। তারই ধাবাহিকতায় আজ রায় ঘোষণা করা হলো।
Advertisement
রায়ের পর জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়ে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে নিবন্ধন দিতে বলেছেন। আর আপিল বিভাগ রায়ে আদার্স বিষয় বলতে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকের সিদ্ধান্তের কথা বুঝিয়েছেন বলে আমরা মনে করি। তাই রায়ের বিষয়ে ইসি সিদ্ধান্ত নেবেন।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মো. তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়ে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে রায় দিয়েছেন। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য (জামায়াতের নিবন্ধন দিতে) বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন জামায়াতের নিবন্ধন ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করতে ইসিকে নির্দেশতবে আপিল বিভাগ রায়ে আদার্স বিষয় বলতে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকের সিদ্ধান্তের কথা বোঝাননি বলে জানান তিনি।
মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, রায় হাতে পাওয়ার পর আমি নির্বাচন কমিশনে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করবো, তারপর এ বিষয়ে ইসি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
Advertisement
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ।
একই সঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা একই বছর আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে দলটি।
তবে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর চেম্বার জজ আদালত। এরপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।
এফএইচ/বিএ/এমএস