পাবনায় মণপ্রতি ২৬ থেকে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু। তবে হাট এখনো জমে ওঠেনি। হাটে দেশি-বিদেশি গরু উঠলেও ক্রেতা নেই। ঈদ ঘনিয়ে এলে ক্রেতার সঙ্গে দামও বাড়বে বলে জানান খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
সরেজমিনে হাজিরহাট, অরণকোলা হাট ঘুরে দেখা যায়, পর্যাপ্ত গরু উঠলেও হাটে আমেজ নেই। তাই বড় গরু কম আনছেন খামারিরা। ছোট ও মাঝারি গরু তুলছেন বেশি। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে ছোট গরুগুলোই বেশি দেখছেন।
হাজিরহাটে গরু কিনতে আসা রশিদ হাসান বলেন, ‘কয়েকজন মিলে লাখ দেড়েকের মধ্যে একটি গরু কিনবো। দু-চারদিন পরে কিনলেও দাম সম্পর্কে ধারণা নিতে হাটে এসেছি। ধারণা ছিল পাঁচ মণের কাছাকাছি ওজনের গরু বাজেটের সঙ্গে মিলবে। কিন্তু বেশি ওজনের গরু এ বাজেটে হবে না।’
তিনি বলেন, ‘২৫-২৭ হাজার টাকা মণ দরে পছন্দসই গরু কেনা যাবে। এ পর্যন্ত বাজার হিসেবে লাখ টাকার একটু বেশিতে চার মণের গরু আরামে কেনা যাবে। তবে পরে বাজার বাড়লে ভিন্ন বিষয়।’
Advertisement
আরও পড়ুন
ওজন করে কোরবানির পশু বেচাকেনা কি জায়েজ? কোরবানির পশু নির্বাচন করবেন কীভাবে?তবে ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনো খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এতে গরু পালনে ব্যয় বেড়েছে। সেখানে এ বছর গরুর দাম কমায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। তাই হাটে গরু তোলা হয়নি। ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি।’
বাজারে মণপ্রতি ২৬-২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে ছোট ও মাঝারি গরু। বড় গরুর দাম তুলনামূলক কম। বড় গরুর ক্রেতা কম থাকায় হাটে তেমন তোলা হচ্ছে না। ভালো দামের আশায় এসব গরু ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বাইরের বিভিন্ন জেলায় নেওয়া হবে।
শহরের হাজিরহাটে তিনটি গরু নিয়ে এসেছিলেন হাবিল মালিথা। গরুগুলোর ওজন ৪ থেকে পৌনে ৬ মণের মধ্যে। তিনি বলেন, ‘এবার এখন পর্যন্ত গরুর বাজার বুঝতেছি না। দর কম বেশি যাই হোক, ক্রেতাদের দাম তো বলতে হবে। দু-চারজন আসতেছেন। দেখার পর মুখ দিয়ে দামই বের হতে চায় না, যা বলতেছে তা অনেক কম।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘৪ মণের বেশি ওজনের হালকা লাল রঙের গরুটির দাম বলেছেন কয়েকজন। এক লাখ ১০ হাজারের বেশি কেউ বলেনি। অথচ চার মণের গরু গতবার এক লাখ ২০ হাজারের বেশি বিক্রি হয়েছে। হাট জমলে দাম যদি একটু বাড়ে।’
গরু ব্যবসায়ী হান্নান বলেন, ‘ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গরু কেনাবেচা করি। সব সময় শুরুতে ক্রেতার চাপ ও দাম কম দেখা যায়। পরে বাড়ে। কিন্তু এবার আরেকটু কম। দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। সব মিলিয়ে গরু কেনার ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে আগাচ্ছে মানুষ।’
গরু বিক্রেতা হানিফ বলেন, ‘এমনিতে এবার ক্রেতা কম মনে হচ্ছে। এর মধ্যে আবার বাইরের দেশ থেকে গরু ঢুকতেছে। তাহলে দাম কীভাবে বাড়বে? লাভই-বা কীভাবে পাবেন খামারিরা। সড়কে চুরি-ডাকাতি বেড়েছে। তাই নিরাপত্তার দিকে নজর দিতে হবে।’
প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, জেলায় ২৭ হাজার ১০১টি খামারে এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ৬ লাখ ৪৮ হাজার ২০৪টি। চাহিদা রয়েছে তিন লাখ ১২ হাজার ৮২টি। এর মধ্যে গরু দুই লাখ, মহিষ প্রায় সাড়ে আট হাজার, ছাগল তিন লাখ ৭২ হাজার ৬১১টি ও ৬৮ হাজারের বেশি ভেড়া রয়েছে। এসব পশু জেলার স্থায়ী ১৭টি ও অস্থায়ী ৮টি হাটে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।
আরও পড়ুন
যেমন হবে কোরবানির পশু গরু কোরবানিতে সাত নাম থাকা কি জরুরি?এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একেএসএম মুশাররফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাটগুলোতে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। গরু এখনো তেমন হাটে তোলা হয়নি। বড় গরুগুলোও ঢাকা বা বাইরের জেলায় নেওয়া হবে। তবে দু-চারদিনের মধ্যে গরু হাটে উঠবে। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে হাটে ক্রেতা সমাগমও বাড়বে।’
আরএইচ/এএসএম