খেলাধুলা

‘হামজা-শামিতের সাথে খেলতে পারলে সেটা হবে রোমাঞ্চকর’

‘হামজা-শামিতের সাথে খেলতে পারলে সেটা হবে রোমাঞ্চকর’

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের ১৯ দিন আগে ৩৮ জনের প্রাথমিক দল ঘোষণা করে এবং তাদের অনুশীলন না দেখেই ৮ জনকে বাদ দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। বিস্ময়করভাবে বাদ পড়া ৮ জনের একজন ছিলেন মোহামেডানের তরুণ ডিফেন্ডার মো. জাহিদ হাসান শান্ত। এবার সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য ঘোষিত ২৬ জনের প্রাথমিক দলে ডাক পেয়েছেন শান্ত। মোহামেডানের প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে যে কয়েকজন তরুণের রয়েছে বিশেষ অবদান, শান্ত তাদের একজন। মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে আবার ক্যাবরেরার তালিকায় কুমিল্লার এই যুবক।

Advertisement

৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার শান্তর মোহামেডানের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ২০২২-২৩ মৌসুমে। তিন বছরের চুক্তি শেষ হয়েছে এবার। জাতীয় অনূর্ধ্ব-২০ ও ২৩ এশিয়ান কাপ বাছাই খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই ডিফেন্ডার কীভাবে ফুটবলে এলেন, লক্ষ্য-পরিকল্পনা কী, এসব নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাগো নিউজকে।

জাগো নিউজ : সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচের জন্য ঘোষিত ২৬ জনের প্রাথমিক দলে আছেন। কখন এবং কীভাবে জানতে পেরেছেন ক্যাবরেরার প্রাথমিক দলে আছেন?জাহিদ হাসান শান্ত : আমি যে দলে আছি, সেটা আমাকে কেউ জানাননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং নিউজে দেখেছি। আজ (বৃহস্পতিবার) বাফুফে থেকে চিঠি পেয়েছি ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার জন্য।

জাগো নিউজ: খুশির খবর পেয়ে আপনি কাকে প্রথম জানিয়েছিলেন? জাহিদ হাসান শান্ত : প্রথমে আমার ভাইকে, তারপর মা-বাবাকে এবং এক এক করে আমার ওস্তাদ কোচ রিপন স্যার ও জাকির স্যারকে জানিয়েছিলাম।

Advertisement

জাগো নিউজ : আপনার বাসায় কে কে আছেন? জাহিদ হাসান শান্ত : বাবা-মা আছেন। আমরা দুই ভাই এক বোন। আমি সবার ছোট। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। এখন অবসরে।

জাগো নিউজ : ফুটবলে কীভাবে আসলেন, সেটা যদি সংক্ষেপে বলতেন।জাহিদ হাসান শান্ত : আমার বাবা মো. কাজল মিয়া বিজেএমসির অধীনে একটি জুটল মিলসে চাকরি করতেন। বাবার কর্মস্থল নরসিংদীতে থাকতাম। আমি ছোট সময় থেকেই ফুটবল খেলতাম। ইউএমসি আদর্শ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালের শেষের দিকে ভর্তি হই রিপন স্পোর্টিং ক্লাব নামের একটি একাডেমিতে। ওই একাডেমিতেই আমার ফুটবলের হাতেখড়ি।

জাগো নিউজ : ঢাকার ফুটবলে কীভাবে আসলেন? জাহিদ হাসান শান্ত : আমি নরসিংদী আইডিয়াল কলেজ থেকে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম নরসিংদী রায়পুর কলেজে। খেলাধুলার কারণে লেখাপড়া সেভাবে করতে পারছিলাম না। এবার আমি অর্থনীতি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়েছি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশে (এআইইউবি)। ঢাকার ফুটবল শুরু করেছিলাম দ্বিতীয় বিভাগের দল টঙ্গী ক্রীড়া চক্রের জার্সিতে ২০১৮ সালে।

জাগো নিউজ : মোহামেডানে কীভাবে যোগ দিয়েছিলেন?জাহিদ হাসান শান্ত : বাবা যখন চাকরি থেকে অবসরে যান, তখন আমরা নরসিংদী ছেড়ে নিজ বাড়ি কুমিল্লার বেজোড়া গ্রামে চলে আসি এবং সেখানে জাফরগঞ্জ একাডেমিতে ভর্তি হই। আমি এখনো ওই একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী। আমি ভালো খেলছিলাম বলেই কোচ আমাকে দ্বিতীয় বিভাগের দলে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের শেষের দিকে আমি প্রথম বিভাগের ক্লাব বাসাবো তরুণ সংঘে যোগ দিই। এর পর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ক্লাব ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব হয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব মোহামেডানে যোগ দিই। টানা ৩ মৌসুম মোহামেডানে খেলেছি।

Advertisement

জাগো নিউজ : এই মৌসুমে আপনার স্মরণীয় ম্যাচ কোনটা?জাহিদ হাসার শান্ত : বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় পর্বে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচটা আমার স্মরণীয় ম্যাচ। আমরা ১০ জন নিয়ে খেলেছিলাম। অনেক টাফ ম্যাচ ছিল।

জাগো নিউজ : আপনার তো বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলারও অভিজ্ঞতা আছে। কোনো প্রতিযোগিতায় খেলেছেন?জাহিদ হাসান শান্ত : ২০২২ সালে বাহরাইনে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের দলে ছিলাম। তবে কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি। ২০২৩ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের বিপক্ষে খেলেছি।

জাগো নিউজ : ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ৩৮ জনের দলে ডেকেও কোনো অনুশীলন না দেখে কোচ আপনাকে বাদ দিয়েছিলেন। তখন কি মন খারাপ হয়েছিল?জাহিদ হাসান শান্ত : আসলে প্রথমবার ডাক পেয়েছিলাম। সবার সাথে অনুশীলন করতে পারলে ভালো লাগতো। খারাপ তো একটু লেগেছিলই। তবে এভাবে সান্ত্বনাও নিয়েছি, হয়তো উৎসাহ দিতেই আমাকে ডাকা হয়েছিল। ভাগ্যে থাকলে ভবিষ্যতে ডাক পাবো।

জাগো নিউজ : এবার ডাক পাবেন সেটা কি আভাস পেয়েছিলেন? কিংবা নিজে কতটা আশাবাদী ছিলেন? জাহিদ হাসান শান্ত : অপেক্ষায় ছিলাম, দেখি কী হয়! আমি বলবো ডাক পাওয়া না পাওয়ার বিষয়ে আমার প্রত্যাশা ছিল ফিফটি-ফিফটি।

জাগো নিউজ : ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচের পরই ২৩ জনের দল চূড়ান্ত করবেন কোচ। চূড়ান্ত দলে টেকার বিষয়ে কতটা আশাবাদী আপনি?জাহিদ হাসান শান্ত : আশাবাদী তো থাকবোই। আমার লক্ষ্য থাকবে কোচের নির্দেশনা অনুযায়ী অনুশীলন করার, যাতে ২৩ জনের দলে থাকতে পারি। আর যদি ২৩ জনের দলে জায়গা করে নিয়ে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই, তাহলে নিজের জায়গাটা ধরে রাখার জন্য যত পরিশ্রম করার করবো।

জাগো নিউজ : যদি সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পান, তাহলে আপনার সতীর্থ হবেন হামজা চৌধুরী ও শামিত সোমের মতো তারকা খেলোয়াড়। এমন এক ম্যাচে অভিষেক হলে সেটা তো দারুণ এক ব্যাপার হবে আপনার জন্য, তাই না?জাহিদ হাসান শান্ত : অবশ্যই। হামজা চৌধুরী ও শামিত সোমদের মতো খেলোয়াড়ের সাথে খেলার সুযোগ পেলে সেটা হবে আমার জন্য রোমাঞ্চকর।

জাগো নিউজ : হামজা-শামিতের সাথে খেলছেন, তাদেরকে বল পাস দিচ্ছেন; এমন কিছু কল্পনা করেন?জাহিদ হাসান শান্ত : আসলে তাদের মতো ফুটবলারের সাথে খেলতে পারা, ড্রেসিংরুম শেয়ার করা তো বিশাল ব্যাপার। কল্পনায় তো অনেক কিছুই ভাবি। আগে দেখি বাস্তবে কী হয়।

জাগো নিউজ : আপনার দেশে-বিদেশি প্রিয় খেলোয়াড় কে ?জাহিদ হাসান শান্ত : দেশে তপু বর্মন, বিদেশি স্পেনের জেরার্ড পিকে। আমার গ্রামে অনেকে আমাকে তপু ভাই, তপু দা বলেও ডাকে। ওরা বলে আমি নাকি তপু বর্মনের মতো খেলি।

জাগো নিউজ : অবসরে কী করেন?জাহিদ হাসান শান্ত: মোবাইলে ফুটবল গেমস খেলি।

জাগো নিউজ : ধন্যবাদ।জাহিদ হাসান শান্ত : আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরআই/এমএমআর/এএসএম