দেশজুড়ে

জেলাভেদে গরুর জাতভিত্তিক খ্যাতি ও বৈচিত্র্য

জেলাভেদে গরুর জাতভিত্তিক খ্যাতি ও বৈচিত্র্য

বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য। ঠিক তেমনই বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন জাতের গরু নিজেদের গুণে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। দেশীয় ও উন্নত জাতের সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে এক বৈচিত্র্যময় গবাদিপশু খাত, যা দেশে দুধ, মাংস ও অর্থনীতিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে ক্রেতাদেরও আকৃষ্ট করে এসব জাতের গবাদিপশু। কোরবানির হাটে জেলা ভেদে গরুর জাতভিত্তিক খ্যাতি ও বৈচিত্র্য দেশের পশুপালন খাতের শক্তি হিসেবে কাজ করে।

Advertisement

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশের পশুর হাটগুলোতে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে পুরোদমে। এই সময়ে গরুর জাত, আকৃতি ও উৎপত্তি এলাকার ওপর ভিত্তি করে পশু নির্বাচনে সচেতনতা বাড়ছে ক্রেতাদের মধ্যে। কোরবানির পশুর হাটে এখন শুধু বাহ্যিক আকার-আকৃতি নয়, গরুর স্বাস্থ্য, জাত ও পরিচর্যার পদ্ধতি বিবেচনা করে গরু ক্রয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেক ক্রেতা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকের।

অনেকেই সাতজন মিলে একটি গরু কোরবানি দেন। সাধারণত প্রতিজন অংশীদার ১৫-১৬ হাজার টাকার মধ্যে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সেক্ষেত্রে একটি গরুর মোট দাম যে দাঁড়ায় ওই দামের মধ্যে সবচেয়ে ভালো গরুর জাত হিসেবে রেড চিটাগাং ক্যাটল এবং নর্থ বেঙ্গল গ্রে গরুকে বেছে নেওয়া যেতে পারে।

Advertisement

আরও পড়ুন বিশালাকৃতির ৩ ষাঁড়, একসঙ্গে কিনলে ওমরাহ ফ্রি দুধ দিচ্ছে পাঁঠা, দেখতে মানুষের ভিড়

বিশেষজ্ঞ ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গরুর জাতভেদে দেহের গঠন, মাংসের পরিমাণ এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় পার্থক্য রয়েছে। ক্রেতারা এখন এসব দিক বিবেচনা করে কোরবানির পশু বেছে নিচ্ছেন। ফলে জেলার বিশেষ জাতগুলোর প্রতি চাহিদাও বাড়ছে।’

মিরকাদিম গরু-ছবি সংগৃহীত

এলাকাভেদে গরুর কোন কোন জাত জনপ্রিয় এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে অধ্যাপক আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ গরু কোরবানি হয় তার ৫০ শতাংশই থাকে ২০০-২৫০ কেজি ওজনের দেশীয় জাতের (নন-ডেসক্রিপটিভ) গরু, বাকি অংশগুলো আসে বিভিন্ন রিজিওনাল সোর্স থেকে। তাদের মধ্যে সবার প্রথমে থাকবে চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি জেলাভিত্তিক জনপ্রিয় জাত রেড চিটাগাং ক্যাটল (আরসিসি)। এ জাতের গরুগুলো লাল রঙের, মাঝারি আকৃতির ও শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন হয়। এ গরুগুলো চট্টগ্রামে খুবই জনপ্রিয় এবং একইসাথে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর উচ্চ চাহিদা রয়েছে। কোরবানিতে সাধারণত ২০০-২৫০ কেজির গরুর চাহিদা বেশি থাকে বিধায় আরসিসির এত জনপ্রিয়তা।’

তিনি আরও বলেন, মাংসে (লিন মিট) চর্বির পরিমাণ কম এমন একটি গরুর জাত উন্নয়ন হয়েছে মুন্সিগঞ্জ জেলায়, যা মিরকাদিম গরু নামে পরিচিত। এ গরুগুলোর ওজন সাধারণত ২০০-৩০০ কেজির মধ্যেই হয়। লিন মিট কোয়ালিটির কারণে রাজধানীর পুরান ঢাকার মানুষের কাছে এটি অত্যধিক জনপ্রিয়। ডেইরি রিজিওন পাবনা জেলায় একটি গরুর জাত উন্নয়ন হয়েছে, যা পাবনা ক্যাটল নামে সুপরিচিত। মূলত দুধের জন্য জাতটি জনপ্রিয় হলেও এই জাতের ষাঁড়গুলো কোরবানির বাজারে খুবই জনপ্রিয়। এই জাতের অধিকাংশ গরুর রং সাদা হয়। সাদা মেশানো ছাই রঙেরও হয় এই গরু। এছাড়া লাল, ধূসর বা মিশ্র বর্ণেরও হয় পাবনা ক্যাটল। গড় ওজন হয় ৪৫০-৫০০ কেজি। এ জাতের গরুগুলো যারা এক্সিকিউটিভ লেভেলে আছেন, ব্যবসায়ী এবং যাদের ইনকাম বেশি তারাই পছন্দ করেন।

Advertisement

গরুর জাতভেদে দেহের গঠন, মাংসের পরিমাণ এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় পার্থক্য রয়েছে। ক্রেতারা এখন এসব দিক বিবেচনা করে কোরবানির পশু বেছে নিচ্ছেন। ফলে জেলার বিশেষ জাতগুলোর প্রতি চাহিদাও বাড়ছে।

আরও পড়ুন জমেনি হাট, বড় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা কোরবানির হাট মাতাবে ফরিদপুরের ‘রাজাবাবু’

অধ্যাপক আজাদ বলেন, বগুড়ার কাহালু, সারিয়াকান্দিতে একটি গরুর জাত উন্নয়ন করা হয়েছে, যা নর্থ বেঙ্গল গ্রে (এনবিজি) নামে সুপরিচিত। এর গায়ের রং সাদা তবে গলার অংশটি কালো হয়। এ জাতের গরুগুলোর ওজন আরসিসির মতোই হয়। এর ওজন এবং রঙের কারণে গরুটির চাহিদা দেশব্যাপী অনেক বেশি। তবে দেশে সংকর জাতের গরুর চাহিদাও দিন দিন বেড়েই চলছে।

রেড চিটাগং ক্যাটল-ছবি সংগৃহীত

মাংসের গুণাগুণের বিবেচনায় কোন জাত ভালো তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি ওই মাংসের কোয়ালিটি সবচেয়ে ভালো। সেই হিসেবে আমার মতে মাংসের গুণাগুণ বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো জাত হচ্ছে পাবনা ক্যাটল। তবে যারা চর্বিমুক্ত মাংস পছন্দ করেন তাদের জন্য ভালো হবে মিরকাদিম গরু।

যে গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি ওই মাংসের কোয়ালিটি সবচেয়ে ভালো। সেই হিসেবে আমার মতে মাংসের গুণাগুণ বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো জাত হচ্ছে পাবনা ক্যাটল। তবে যারা চর্বিমুক্ত মাংস পছন্দ করেন তাদের জন্য ভালো হবে মিরকাদিম গরু।

আরও পড়ুন ‘বাদশা’র ওজন ৩৫ মণ, কিনতে লাগবে ১৫ লাখ টাকা সিরাজগঞ্জে গরু চুরির হিড়িক, বাদ যাচ্ছে না কোনো রাত!

দামের দিক থেকে কোন গরুর জাত বেশি উপযোগী- এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আজাদ বলেন, কোরবানির গরু কেনার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর দাম। গ্রামীণ অঞ্চলের বাস্তবতা অনুযায়ী, অনেকেই সাতজন মিলে একটি গরু কোরবানি দেন। সাধারণত প্রতিজন অংশীদার ১৫-১৬ হাজার টাকার মধ্যে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সেক্ষেত্রে একটি গরুর মোট দাম যে দাঁড়ায় ওই দামের মধ্যে সবচেয়ে ভালো গরুর জাত হিসেবে আরসিসি (রেড চিটাগাং ক্যাটল) এবং নর্থ বেঙ্গল গ্রে (এনবিজি) গরু বেছে নেওয়া যেতে পারে।

সবশেষ অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, গরুর জাতভেদে ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বাংলাদেশের গবাদিপশু খাতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। পরিকল্পিতভাবে এই খাত এগিয়ে নিতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে আমি আশাবাদী।

এমএআইকিউ/এসএইচএস/এমএফএ/এএসএম