অর্থনীতি

ক্লাস্টারে সমৃদ্ধ এসএমই খাতের অন্তরায় অর্থায়ন

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করছে ‘ক্লাস্টার’। পণ্যের বহমুখীকরণ, মানোন্নয়ন, বৈচিত্র্যকরণ, রপ্তানি উপযোগিতা তৈরি, ফেলনা পণ্যকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদনশীল করে তোলায় বড় ভূমিকা রাখছে এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) ফাউন্ডেশনের এ উদ্যোগ। কিন্তু শিল্পকে আরও সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান অন্তরায় অর্থায়ন।

Advertisement

এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তারা বলছেন, আধুনিক যন্ত্র বানাতে হলে ১০ শতাংশের নিচে ও সহজ শর্তে সুদহারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যাদের কারখানা আছে, তারা সম্প্রসারণ করতে চাইলেও ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে না। যদি পুঁজিসংকট কাটিয়ে ওঠা যায় তাহলে এ শিল্পখাত আরও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে।

এসএমই ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্লাস্টারগুলোর অধিকাংশ উদ্যোক্তা যেমন অর্থায়নের অভাবে আরও বেশি সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারছে না, তেমনি এসএমই ফাউন্ডেশনও অর্থের অভাবে তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে পারছে না।

অর্থনীতিবিদদের দাবি, দেশের অর্থনীতিতে এই খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এসএমই ফাউন্ডেশনকে সমন্বয়কারী সংস্থা ঘোষণা করা দরকার। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।

Advertisement

প্রশিক্ষণের জন্য একটি কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার স্থাপন করা দরকার ভৈরবে। যেখান থেকে শ্রমিকরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে উন্নত মানের জুতা তৈরি করতে পারবেন। এছাড়া স্বল্প সুদে ঋণসুবিধা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটতে পারে।- ভৈরবের পাদুকাশিল্পের উদ্যোক্তা আল-আমিন মিয়া

 

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসএমই ফাউন্ডেশনকে নতুনভাবে অর্থায়ন দিতে চেষ্টা করছে সরকার। এরই মধ্যে অর্থবিভাগকে চিঠি লেখা হয়েছে। শিগগির নতুন বরাদ্দ পাওয়া যাবে। আর উদ্যোক্তাদের ঋণের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় আন্তরিক। তবে ছোট উদ্যোক্তাদের নিয়ম-নীতি মেনে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

ক্লাস্টার সুবিধায় বদলে যাওয়া আল-আমিনের পাদুকা শিল্প

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের পাদুকাশিল্পের রূপান্তরটা খুব কাছ থেকেই দেখেছেন আল-আমিন মিয়া। তিনি নিজেও ছোট পরিসরে এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যোগ্যতা ও চ্যালেঞ্জিং মানসিকতাকে প্রতিনিয়ত ঝালিয়ে এখন সফল উদ্যোক্তা। তিনি মুন্না সুজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক।

ভৈরব পাদুকর শিল্পে জুতা ফিনিশিংয়ের কাজ করছেন একজন শ্রমিক

Advertisement

নিজের গল্প বলতে গিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৯৯০ সালে পুরান ঢাকায় পাদুকা শিল্পের সঙ্গে কাজ করা শুরু। এরপর ৯৮-এ এসে ভৈরবে শুধু স্যান্ডেল তৈরি শুরু করেছিলাম। এখন আমার প্রতিষ্ঠান থেকে রপ্তানিযোগ্য জুতা তৈরি করছে। সঙ্গে ঝুট চামড়া থেকে তৈরি হচ্ছে বেল্ট ও মানিব্যাগ।’

আরও পড়ুন

টিকে থাকার লড়াইয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা এসএমই খাতের উন্নয়নে ১১৮ সুপারিশ এসএমই মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের জয়জয়কার

নিজের অবস্থা পরিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান ভালো অবস্থায় যায় ২০১৫ সালের পরে, তার আগের বছর এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) ফাইন্ডেশনের ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে ‘পণ্য বহুমুখীকরণ’ প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। ওই সময়ের পরে আমার পণ্যের মানোন্নয়ন ও ডিজাইনে বৈচিত্র্য এসেছে। তখন থেকে সু ও লোফার জুতা তৈরি শুরু করি। তাতে বড় সফলতাও এসেছিল। এরপর ফেলা দেওয়া চামড়া বর্জ্য থেকে বেল্ট ও মানিব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণও পেয়েছি। এখন ব্যবসা ভালো যাচ্ছে।’

আল-আমিন মিয়া বলেন, ‘শুধু আমার প্রতিষ্ঠান নয়। এভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনেক প্রতিষ্ঠান এখন স্বাবলম্বী। ভৈরব থেকে বিদেশে পাদুকা রপ্তানি শুরু হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাদুকা রপ্তানি হচ্ছে। এখন এটি দেশের সবচেয়ে বড় পাদুকা প্রস্তুতকারক এলাকা। এ এলাকার কারখানার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এখন আশপাশের ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়েছে। এমনকি ভৈরব ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী বাজিতপুর আর কুলিয়ারচর উপজেলাতেও বেশ কিছু পাদুকা কারখানা গড়ে উঠেছে।’

পুঁজির অভাবে আমরা বেশি পরিমাণ পোশাক উৎপাদন করতে পারি না। যদি আমরা পুঁজিসংকট কাটিয়ে উঠতে পারতাম, তাহলে সৈয়দপুরের এই ক্ষুদ্র গার্মেন্টস খাত আরও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতো।- সৈয়দপুর এনআর গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী হামিদুর রহমান

আল-আমিনের মতো আরও কয়েকজন উদ্যোক্তা জানান, ভৈরব পাদুকা শিল্প এসএমই ফাউন্ডেশনের ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় পাল্টে গেছে। বহুমুখীকরণ নানা প্রশিক্ষণে পণ্যের মানোন্নয়ন ও ডিজাইনে এসেছে বৈচিত্র্য। আগে ভৈরব পাদুকা শিল্প ক্লাস্টারে শুধু স্যান্ডেল তৈরি হতো। ফলে শীতকালে ক্লাস্টারটির পণ্যের চাহিদা অনেকাংশে হ্রাস পেতো। ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ওই ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের জুতা তৈরির ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে উদ্যোক্তারা নানা ধরনের জুতার পাশাপাশি বিশ্ববিখ্যাত অক্সফোর্ড সু পর্যন্ত তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে।

ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়ন কী?

যে কোনো দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে ক্লাস্টারভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা একটি জনপ্রিয় ধারণা। বাংলাদেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এসএমই ফাউন্ডেশন সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা এসএমই ক্লাস্টারগুলোকে চিহ্নিত করা শুরু করে। যার ভিত্তিতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দেশের ৫১টি জেলায় ১৭৭টি এসএমই ক্লাস্টার চিহ্নিত করা হয়।

কোনো গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন বা শিল্প এলাকায় পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে একই বা সমজাতীয় উৎপাদন বা পরিষেবার অন্তত ৫০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকলে তাকে একটি এসএমই ক্লাস্টার বলা হয়। ওই সময় চিহ্নিত এসএমই ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, হ্যান্ডলুম, নকশিকাঁথা, ক্ষুদ্র গার্মেন্ট, হ্যান্ডিক্রাফটস, চামড়াজাত পণ্য ক্লাস্টার ছিল অন্যতম।

নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে

ইংল্যান্ডের বিশ্ব বরেণ্য অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড মার্শাল, ১৮৯০ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘প্রিন্সিপলস অব ইকোনমিক্স’-এ সর্বপ্রথম শিল্প ক্লাস্টার সম্পর্কে ধারণা দেন। ক্লাস্টারে অন্তর্ভুক্ত শিল্প বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য/সেবা, কাঁচামাল, শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ, হুমকি একই ধরনের হয়। ফলে সমাধানও একসঙ্গে করা সম্ভব, যা সহজতর। চীন, জাপান, আমেরিকা, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে ক্লাস্টারভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প।

এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে এসএমই ক্লাস্টারে মোট কর্মী ও শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। যেখানে ৭৪ শতাংশ নারী। আর দেশের ওই ১৭৭টি ক্লাস্টারের মোট ৭০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে বাৎসরিক টার্নওভার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।

ক্লাস্টারে কী কী সুবিধা

এসএমই ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত ৯০টি ক্লাস্টার পরিদর্শন করে উন্নয়ন চাহিদা নিরূপণ করেছে। বর্তমানে ফাউন্ডেশন ৪০টি ক্লাস্টারে নানাবিধ উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করে যাচ্ছে। ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা ও কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার ৮শ জন উদ্যোক্তা পণ্য বহুমুখীকরণ, ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, বিপণন কৌশল, অ্যাকাউন্টিং, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, অনলাইন মার্কেটিং, ভ্যাট-ট্যাক্স, ব্যবসায়িক নিরাপত্তাসহ নানাবিধ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

এছাড়া ক্লাস্টারে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে সহায়তা মিলছে এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে। পণ্যের প্রচার ও দেশে-বিদেশে বাজার সম্প্রসারণে ওয়েবসাইট তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ফাউন্ডেশন আয়োজিত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মেলা ও ম্যাচমেকিং কর্মসূচিতে ক্লাস্টারের পণ্য বিক্রি ও প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়।

ক্লাস্টারগুলোর অধিকাংশ উদ্যোক্তা যেমন অর্থায়নের অভাবে আরও বেশি সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারছে না, তেমনি এসএমই ফাউন্ডেশনও অর্থের অভাবে তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে পারছে না।- এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী

এছাড়া সেগুলোতে এক্সপোজার ভিজিটের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা পণ্যের বাজার, কাঁচামালের উৎস, উৎপাদন পদ্ধতি, বাজারজাতকরণ পদ্ধতি শেয়ারের মাধ্যমে নতুন ক্রেতা ও বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে। ক্রেডিট হোলসেলিং কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন ক্লাস্টারের প্রায় দুই হাজার ১৩২ জন উদ্যোক্তার মধ্যে ঋণ বিতরণ করেছে ফাউন্ডেশন।

ক্লাস্টারে বদলের হাওয়া

এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ডিজাইন ও পণ্য বহুমুখীকরণের ধারাবাহিক ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে এখন দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার শাঁওইল বাজার এলাকার ১৬টি গ্রাম যেন এক শিল্পপল্লী। এই শিল্পপল্লীর পুরোটাই তাঁতশিল্প নির্ভর। আগে ওই এলাকায় শুধু সাধারণ মানের কম্বল তৈরি হলেও এখন গায়ের চাদর, তোয়ালে, বিছানার চাদর, পাপোশ, মোজা, মাফলারসহ নানা পণ্য তৈরি হচ্ছে। ওই এলাকা এসএমই ফাউন্ডেশনের বিশেষ ক্লাস্টার চিহ্নিত হওয়ার পরে ঋণ পাওয়া সহজ হয়েছে, অন্য সুবিধাও মিলছে।

আরও পড়ুন

এক লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান এসএমই মেলায় ২০ কোটি টাকার ক্রয়াদেশ, বিক্রি ১৩ কোটি

শাঁওইল বাজার হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেড়-দুই লাখ টাকা দিয়ে পাওয়ার লুম কেনার সামর্থ্য সবার নেই। তাই সহজ শর্তে অর্থায়ন বা ঋণসুবিধা পেয়ে এখন সেটা অনেকে করতে পারছে। ক্লাস্টার হওয়ার পরে মিলছে ঋণ। এছাড়া এলাকার বাজারের উন্নয়ন, রাস্তা মেরামত ও বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।’

পুরোনো মেশিনের বদলে নতুন নতুন মেশিনের ব্যবহার বাড়ছে ক্লাস্টারগুলোতে

বলদিয়া ক্রিকেট ব্যাট ক্লাস্টার

ক্লাস্টার হওয়ার পরে বলদিয়া ক্রিকেট ব্যাট ক্লাস্টারে পলিসি অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন এসেছে। সেখানে ছোট ছোট মিস্ত্রি এখন জাদুকরী ব্যাটের কারিগর। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক মেশিন ব্যবহার করে উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের ফিনিশিংয়ে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে পণ্যের দাম ও উৎপাদনের হারও বেড়েছে অনেকাংশে।

সৈয়দপুরের ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শিল্প

এদিকে সৈয়দপুর ক্ষুদ্র গার্মেন্টস শিল্প ক্লাস্টারে ম্যানুয়াল মেশিনের পরিবর্তে অটোমেটেড ও সেমি-অটোমেটেড মেশিনের ব্যবহার বেড়েছে। যে কারণে ওই ক্লাস্টারের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে গত কয়েক বছরে। তথ্য বলছে, এসএমই ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সৈয়দপুরে বাড়িতে বাড়িতে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক ক্ষুদ্র পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় ঝুট কাপড় থেকে পোশাক তৈরি করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছে প্রায় ৫শ পরিবার। এলাকাটি দেখে মনে হয় প্রতিটি বাড়ি যেন পোশাক কারখানা। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি এখানকার তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে ভারত, ভুটান ও নেপালে।

দেশের অর্থনীতিতে এই খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এসএমই ফাউন্ডেশনকে সমন্বয়কারী সংস্থা ঘোষণা করা দরকার। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।- সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান

  নকশিকাঁথা

জামালপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নকশিকাঁথা ক্লাস্টারে পণ্যের ডিজাইন ও সেলাইয়ের উন্নতি ঘটেছে। আগে ক্লাস্টারগুলোতে কাঁথা তৈরিতে গতানুগতিক ডিজাইন ও সেলাই প্রাধান্য পেতো। ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ধারাবাহিকভাবে ডিজাইন, সেলাইয়ের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে বৈচিত্র্য, ব্লক ও বাটিকের সংমিশ্রণে ডিজাইনে আমূল পরিবর্তন এসেছে। এটা তাদের উৎপাদন খরচ কমানো ও উৎপাদন হার বাড়ানোর পাশাপাশি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে বেড়েছে। উভয় ক্লাস্টারে বর্তমানে নকশিকাঁথার পাশাপাশি এখন থ্রি-পিস, টু-পিস, বেড-কাভার, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন হয়।

ছোট ছোট কারখানাগুলো এখন বড় হচ্ছে, একসঙ্গে কাজের ব্যবস্থা হচ্ছে শত শত মানুষের

আগর-আতর

রপ্তানিমুখী আগর-আতর ক্লাস্টারের উন্নয়নে মৌলভীবাজারের বড়লেখার আগর-আতরের ব্যবসা এখন আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সুজানগরের আগর-আতর সম্প্রতি জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্যের স্বীকৃতিও পেয়েছে। সৌদি আরব ও কুয়েতে সুগন্ধি আগর কাঠ ও আতর রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া আগর কাঠ পরিবহনের সমস্যা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বন আইনে পরিবর্তন করে নিষ্পত্তি হওয়ায় আগর কাঠ পরিবহন সহজতর হয়েছে।

লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং

বগুড়ায় লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বা হালকা প্রকৌশল খাতের উদ্যোক্তারা রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের পার্টস, পণ্য উৎপাদনে সক্ষম। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তারা পণ্যের গুণগত মান রক্ষায় সক্ষম হতো না। এসএমই ফাউন্ডেশন সেজন্য বিস্তর প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এখন দেশে-বিদেশে বগুড়ার বিভিন্ন ধরনের কৃষিযন্ত্র ও হালকা প্রকৌশল শিল্পের এখন ব্যাপক সুনাম। দেশের কৃষি যন্ত্রপাতির বার্ষিক চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ পূরণ হয় এখানে তৈরি যন্ত্রে।

এখন বগুড়া সদর এলাকায় এখন কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরির ৫শ ওয়ার্কশপ, অন্য হালকা প্রকৌশল পণ্যের ৫শ এবং ঢালাইশিল্পের (ফাউন্ড্রি) ৭৫টি কারখানা রয়েছে। এছাড়া কৃষি যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কয়েক হাজার ওয়ার্কশপ রয়েছে। বগুড়া শহর ও শহরতলির আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এসব কারখানা। প্রায় দুই হাজার ধরনের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি হয় এখানে। এর মধ্যে সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প, সেচপাম্প, টিউবওয়েল, পিটি চেইন কভার, ফুয়েল পাইপ, অয়েল ক্যাচার, এয়ার ক্লিনার, সাইলেন্সার, চেইন কাভার উল্লেখযোগ্য।

বগুড়া লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাস্টারের পাশাপাশি পাবনা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাস্টার, যশোর লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তার পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়নে হিট অ্যান্ড সার্ফেস ট্রিটমেন্ট, ফাউন্ড্রি, সিএনসি ও মেশিন লার্নিং, টেস্টিং ইত্যাদি বিষয়ে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন।

এসএমই ফাউন্ডেশনকে নতুনভাবে অর্থায়ন দিতে আমরা চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে অর্থবিভাগকে চিঠি লিখে ফেলেছি। আশা করছি শিগগির নতুন বরাদ্দ পাওয়া যাবে।- শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিসিক, এসএমই ও বিটাক) মো. নূরুজ্জামান

একইভাবে যশোরের নকশিকাঁথা ও ক্রিকেট ব্যাট শিল্প ক্লাস্টার, সাভারের আর্টিফিশিয়াল জুয়েলারি, মানিকগঞ্জের বাঁশ-বেত শিল্প, পটুয়াখালীর বাউফলের মৃৎশিল্প, ঝালকাঠির শীতলপাটি শিল্প ক্লাস্টারের উন্নয়নে বহুমুখী কার্যক্রম চলছে।

ক্লাস্টারের প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ

দেশের এসব ক্লাস্টারের উদ্যোক্তারা সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছেন জাগো নিউজকে। বিশেষ করে তারা এখনো সম্পূর্ণ নতুন পণ্য বাজারজাতকরণ, কারখানা সম্প্রসারণে যথাযথ অর্থায়ন, প্রযুক্তিগত ও পণ্যের মানোন্নয়ন এবং উদ্যোক্তা সক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, কাজের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

ভৈরবের পাদুকাশিল্পের আল-আমিন মিয়া বলেন, ‘প্রশিক্ষণের জন্য একটি কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপন করা দরকার ভৈরবে। যেখান থেকে শ্রমিকরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে উন্নত মানের জুতা তৈরি করতে পারবেন। এছাড়া স্বল্প সুদে ঋণসুবিধা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটতে পারে।’

কারখানায় কাজ করছেন এক তরুণ

ভৈরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি বলেন, ‘নানা প্রশিক্ষণের পরেও পাদুকা কারখানায় অনেক অদক্ষ শ্রমিক রয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে উৎপাদন বাড়বে।’

এগিয়ে যাওয়ায় প্রধান অন্তরায় অর্থায়ন

এদিকে যথাযথ অর্থায়নের কথা বলেছেন বেশিরভাগ উদ্যোক্তা। বগুড়া লাইটিং ইঞ্জিনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের সভাপতি গোলাম আযম বলেন, ‘বগুড়ার হালকা প্রকৌশল শিল্পের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হলে আমাদের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সমস্যা দূর হবে। এতে উৎপাদন ব্যয় কমবে, বিদেশে রপ্তানিও বাড়বে। দীর্ঘদিন এ দাবি করা হলেও সেটা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ভারী শিল্প হওয়ায় অনেক সময়ই ব্যাংকঋণ নিতে হয়। কিন্তু চড়া সুদহার আরেকটি সমস্যা। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের দাবি, আরও আধুনিক যন্ত্র বানাতে হলে ১০ শতাংশের নিচে ও সহজ শর্তে সুদহারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’

ক্রিকেট ব্যাট ক্লাস্টারে এসএস ট্রেডার্সের কর্ণধার ইয়াকুব আলী বলেন, ‘করোনার পরে এখানকার প্রায় ২০টি ক্ষুদ্র কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এখানকার উদ্যোক্তাদের মূল সমস্যা হলো- তারা স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদি জামানতবিহীন পর্যাপ্ত ঋণ পাচ্ছেন না ব্যাংকগুলো থেকে। এছাড়া যাদের কারখানা আছে, তারা সম্প্রসারণ করতে চাইলেও ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে না।’

সৈয়দপুর এনআর গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী হামিদুর রহমান বলেন, ‘পুঁজির অভাবে আমরা বেশি পরিমাণ পোশাক উৎপাদন করতে পারি না। যদি আমরা পুঁজিসংকট কাটিয়ে উঠতে পারতাম, তাহলে সৈয়দপুরের এই ক্ষুদ্র গার্মেন্টস খাত আরও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতো।’

সাভারের আর্টিফিশিয়াল জুয়েলারি শিল্পের উদ্যোক্তা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘একদম নতুন ডিজাইনের কোনো গহনা তৈরি করলে, সেটা বাজারজাতকরণে সমস্যা হয়। এছাড়া অনলাইনে প্রচারের ক্ষেত্রে ছোট উদ্যোক্তারা প্রাধান্য পায় না। এসএমই ফাউন্ডেশনের মেলায় অংশগ্রহণ করাও দুষ্কর হয় ছোটদের জন্য।’

যা বলছে এসএমই ফাউন্ডেশন

দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় দেড় লাখ সিএমএসএমই উদ্যোক্তাকে সরাসরি সেবা দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। পাশাপাশি ১১ হাজারের বেশি উদ্যোক্তাকে সহজ শর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ বিতরণ করেছে সংস্থাটি। তবে উদ্যোক্তাদের মতো অর্থায়ন সমস্যা রয়েছে খোদ এ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনেরও।

সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনোয়ার হোসেন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্লাস্টারগুলোর অধিকাংশ উদ্যোক্তা যেমন অর্থায়নের অভাবে আরও বেশি সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারছে না, তেমনি এসএমই ফাউন্ডেশনও অর্থের অভাবে তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে পারছে না।’

উদ্যোক্তাদের ঋণের ব্যাপারে সব সময় বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তরিক। তবে ছোট উদ্যোক্তাদের নিয়ম-নীতি মেনে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে বেশ সীমাবদ্ধতা রয়েছে।- বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান

তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার সময় দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল অর্থবিভাগ থেকে। আর করোনার সময় প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৩শ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এই টাকায় স্থায়ী আমানত (এফডিআর) হিসেবে রেখে আয় দিয়ে এত বড় ফাউন্ডেশন চলছে। যা আমরা ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে ২৩টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দিচ্ছি এসএমই উদ্যোক্তাদের। তবে বাস্তবতা, উদ্যোক্তাদের টেকসই উন্নয়নে আমাদের আরও প্রচুর ফান্ড দরকার। আমরা বারবার সরকারকে বলেছি, কোনো ফান্ড পাইনি। যে কারণে আমাদের একটি সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।’

আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এছাড়া এ ফাউন্ডেশনে জাতীয় বাজেটে কোনো বরাদ্দ থাকে না। প্রতি বছর অন্য সংস্থা যেমন বাজেট পায়, আমরা পাই না। আমরা চাই দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে এ ফাউন্ডেশনকে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। যা দিয়ে প্রান্তিক এলাকাগুলোর অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেওয়া সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘এ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি, ক্লাস্টারগুলোর নানা সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করার। ৪০টি ক্লাস্টারে উন্নয়ন কাজ চলছে।’

আনোয়ার হোসেন চৌধুরী আরও জানান, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে নানা ধরনের কর্মসূচি থেকে সুবিধা পেয়েছেন প্রায় ৩৫ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। এসএমই ফাউন্ডেশন গত অর্থবছরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে ৬৯২টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ২৩টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এসএমই ফাউন্ডেশন চুক্তি করেছে।

ময়মনসিংহে বিভাগীয় এসএমই উদ্যোক্তা–ব্যাংকার সম্মেলন ২০২৩ আয়োজন, নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ওয়ানস্টপ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘উই হেল্প’ উদ্বোধন, ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০২৪–এ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন করা হয়।

এছাড়া ১৯তম মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস ২০২৩–এ এসএমই ফাউন্ডেশনের অংশগ্রহণ, ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা নিয়ে অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণ, গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের নিয়ে চারটি জেলায় এসএমই ক্লাস্টার প্রদর্শন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে ১৪১টি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

কারখানা বড় হলে তরুণদের কর্মসংস্থানও বাড়ে

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ দেশের মূল চালিকাশক্তি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। তাদের ও সার্বিক অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে এসএমই ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দেশের অর্থনীতিতে এই খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এসএমই ফাউন্ডেশনকে সমন্বয়কারী সংস্থা ঘোষণা করা দরকার। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিসিক, এসএমই ও বিটাক) মো. নূরুজ্জামান এনডিসি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসএমই ফাউন্ডেশনকে নতুনভাবে অর্থায়ন দিতে আমরা চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে অর্থবিভাগকে চিঠি লিখে ফেলেছি। আশা করছি শিগগির নতুন বরাদ্দ পাওয়া যাবে।’

উদ্যোক্তাদের ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ক্লাস্টারে যেসব উদ্যোক্তা নানা নিয়ম-নীতি এবং কাগজপত্রের অভাবে ঋণ নিতে পারছেন না, তাদের ফাউন্ডেশন রিকমেন্ডেশন নিয়ে কিছুটা অগ্রাধিকার দেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণের যে প্যাকেজগুলো ঘোষণা করা হয় সেখানে ক্লাস্টারভিত্তিক উদ্যোক্তাদের যুক্ত করে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের ঋণের ব্যাপারে সব সময় বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তরিক। তবে ছোট উদ্যোক্তাদের নিয়ম-নীতি মেনে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে বেশ সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি রয়েছে যে, সার্বিক ঋণের ২৫ শতাংশ অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দেওয়ার জন্য। এর মধ্যে আবার ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তারা পাবেন, সেটাও বলে দেওয়া রয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো অনেক সময় এ ২৫ শতাংশ ঋণের টার্গেট পূরণ করতে পারছেন না। কারণ তারা বলছেন, তারা ‘পটেনশিয়াল কাস্টমার’ পান না, যারা ঋণের কিস্তি দিতে সক্ষম।’

‘ফলে অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এক হাজার পটেনশিয়াল উদ্যোক্তা তৈরি করে তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করছে। দেশের ব্যাংকগুলো এখন আন্তরিক হয়েছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে, তবে সেজন্য ঋণগ্রহীতাদেরা সীমাবদ্ধতা কাটাতে হবে।’ বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র।

এনএইচ/এএসএ/এমএস