রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ লেবার পার্টিকে নিবন্ধন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, দলটিকে প্রতীক বরাদ্দ দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায় প্রকাশের ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
Advertisement
এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী ও এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ লেবার পার্টি নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করে। ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই ইসি সেই আবেদন নামঞ্জুর করে। পরে ইসির এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ওই বছর ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। রিটে প্রাথমিক শুনানির পর ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ লেবার পার্টিকে নিবন্ধন দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।’
এরপর রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে সেটি যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়। আদালত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে নিবন্ধন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
Advertisement
আইনজীবী আরও বলেন, ‘দলটিকে নিবন্ধন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং নিবন্ধন দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—রুলে এসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছিল। চূড়ান্ত শুনানির পর সেই রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে।’
তিনি জানান, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ লেবার পার্টিকে নিবন্ধন দিয়ে প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, ২০২৩ সালে ওই রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও মাঠপর্যায়ের কার্যালয় সক্রিয় রয়েছে কি না, তা দুই দফা যাচাই করেছে ইসি। ওই দুই দফার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নতুন দলকে নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে।
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে হলে ২১ জেলা ও ১০০ উপজেলা বা থানায় কার্যকর কমিটি ও কার্যালয় থাকতে হবে এবং প্রতিটি উপজেলায় দলের অন্তত ২০০ জন ভোটার থাকতে হবে। দুই দফায় এসব দলের মাঠ কার্যালয় ও কমিটি যাচাই করেছে ইসি। ওই দুই ধাপের প্রতিবেদন কমিশন সভায় তোলা হয়। এতে যারা শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে, তারা নিয়মানুযায়ী নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
Advertisement
১৯৭৪ সালে মাওলানা আবদুল মতীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরেই ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হলে লেবার পার্টিও নিষিদ্ধ হয়। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি ১৯৭৭ সালের ২২ অক্টোবর মাওলানা আবদুল মতীন ও মাওলানা গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে পুনরুজ্জীবন লাভ করে।
বর্তমানে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। ২০০৭ সাল থেকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলটি জাতীয়তাবাদী চেতনায় সমমনা দল হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও অংশগ্রহণ করে আসছে। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট (বর্তমানে ২০ দলীয় জোট) গঠিত হলে বাংলাদেশ লেবার পার্টি অন্যতম শরিকদল হিসেবে জোটের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখছে।
এফএইচ/কেএএ/