বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুর ১২টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত এই সভায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান জনাব খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মোহসিন চৌধুরী, কমিশনার মো. আলী আকবর এবং বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও অন্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা সভায় বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এ সময় দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পথে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং করণীয়সমূহের কথা উঠে আসে।
Advertisement
মতবিনিময় সভায় পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট নিরসনে নতুন ফান্ড আনয়ন ও সরকারের পুঁজিবাজার সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ, অন্যান্য সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ, ডিভিডেন্ড ট্যাক্স ও ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স মওকুফকরণ, পুঁজিবাজারে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং কোম্পানিগুলোকে আরও দায়বদ্ধ করা, পুঁজিবাজারে সব অনিয়ম-কারসাজির বিরুদ্ধে তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রেখে সংস্কার বাস্তবায়ন, পুঁজিবাজারের প্রতি সবার আস্থা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাবনার কথা বলা হয়। এছাড়াও এ সময় বাইব্যাক আইন বা শেয়ার পুনঃক্রয় আইন চালুর উদ্যোগ গ্রহণ, ইস্যুয়ার কোম্পানিসমূহের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিকাশ ও উন্নয়ন, পুঁজিবাজারে ভালো বহুজাতিক কোম্পানিসমূহকে এবং ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তকরণে উদ্যোগ গ্রহণ, গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার সাধন, বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান, ইস্যুয়ার কোম্পানিসমূহের আর্থিক বিবরণীর স্বচ্ছতা ও যথার্থতা নিশ্চিতকরণে অডিটরের দায়িত্ব নিরূপণ ও ব্যবস্থা গ্রহণ, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রণোদনা প্রদান, আইসিবির বাজার সহায়ক ভূমিকা নিশ্চিতকরণ, পুঁজিবাজারের সব স্তরে দক্ষতা-পেশাদারত্ব নিশ্চিতকরণ, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সংযোগ বৃদ্ধি, বিএসইসিতে পরামর্শ বক্স স্থাপন ও সময়ে সময়ে মতবিনিময় সভা আয়োজনসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং বিএসইসির চেয়ারম্যান-কমিশনাররা বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের বিভিন্ন মতামত এবং প্রশ্নের জবাব দেন।
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরকার পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। বিনিয়োগকারীদের মতামতসমূহ নিয়ে সরকার কাজ করবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক এমন পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হবে।
তিনি সবাইকে দেশ ও জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং কাজ করার আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি শীর্ষ (অ্যাপেক্স) সংগঠন বা ফোরাম গঠনের অনুরোধ জানান যাতে আগামীতে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরকার ও বিএসইসির সংযোগের সুযোগ বাড়ে এবং সংযোগ আরও কার্যকরী হয়।
Advertisement
সভায় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফলপ্রসূ ও ইতিবাচক আলোচনা হয় এবং বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনায় নিয়ে আগামীতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে সরকার ও বিএসইসির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়।
সভায় বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা তথা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এ ধরনের সংযোগের ফলে আগামীতে সবার মিলিত প্রচেষ্টায় পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলে আশা করে বিএসইসি।
এমএএস/এএমএ/জেআইএম