আইন-আদালত

আপনারা স্বাধীন, এর-ওর ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছেন, এভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না

আপনারা স্বাধীন, এর-ওর ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছেন, এভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালত বলেছেন, যেসব প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে, তা সাংবিধানিকভাবে ও সমভাবে নির্বাচন কমিশনের মৌলিক ম্যান্ডেটের (আইনগত বা বিচারগত) ভেতরে পড়ে।

এর আগে শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীর প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা (নির্বাচন কমিশন) ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বাধীন। এরপরও এর ওর ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছেন। এভাবে বললে গ্রহণযোগ্য হবে না।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণার গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে ইশরাকের শপথগ্রহণ ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য শুনতে চেয়েছিলেন আদালত। নোটিশ ইস্যুর পর বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মোহাম্মদ ইয়াসীন খান।

Advertisement

আরও পড়ুন

ইশরাকের মেয়র পদ-শপথের বিষয়ে সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত ইসিরইশরাকের শপথ: আদালতের রায়ের অপেক্ষায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়

শুনানিতে প্রধান বিচারপতি নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীকে বলেন, নির্বাচন কমিশন কেন ছিল না?

জবাবে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মোহাম্মদ ইয়াসীন বলেন, কমিশনের কাছে কোনো কাগজ/নথি ছিল না। এই মামলার কোনো কাগজ কমিশনে পাঠানো হয়নি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা তো পার্টি ছিলেন। আর এখানে নোটিশ করে এনেছি। এটা অ্যালার্মিং।

Advertisement

মোহাম্মদ ইয়াসীন বলেন, কমিশন বলেছে, তারা কোনো পক্ষ অবলম্বন করবে না। এজন্য সেখানে (নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে) যায়নি। আর হাইকোর্ট কোনো রুল ইস্যু না করায় সেখানে যায়নি।

এ সময় রিটকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমাদের নোটিশই ছিল আপিল করার জন্য। তারা নোটিশের পর তাড়াহুড়ো করে রাতের বেলা গেজেট করেছে। পরে আমরা রিট করেছি।

এরপর প্রধান বিচারপতি নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আপিলের কী করলেন? এটা মৌলিক প্রশ্ন। জুলাই-আগস্টের পরবর্তী ম্যাসেজ হচ্ছে- আপনারা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান ও নিরপেক্ষভাবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন।

আপলি বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আপনারা কী করেছেন?

জবাবে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী বলেন, চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাত হোসেনের শপথের পর কোনো কথা ওঠেনি। তাই এখানে কিছু করার ছিল বলে মনে করিনি। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়ার পরও তারা দেননি। তাই আদালত অবমাননা হতে পারে মনে করে কমিশন গেজেট করেছে ইসি।

আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীকে বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। তাহলে মতামতের জন্য কেন পাঠিয়েছেন? সংবিধান ক্ষমতা দিয়েছে। এরপরও ডানে-বাঁয়ে তাকাবেন কেন? আপনারা ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বাধীন। এরপরও এর ওর ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছেন। এভাবে বললে গ্রহনযোগ্য হবে না।

এ সময় আইনজীবী সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ বাংলা ও ইংরেজী উভয় ভাষায় পাঠ করে শোনান। নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী বলেন, কমিশন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমাদের কোনো কিছু বলেনি। উচিৎ ছিল গুরুত্ব দিয়ে অ্যাপেয়ার করা।

এসময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, আপনারা স্বাধীন। কী ম্যাসেজ দিচ্ছেন আপনি? সারাদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে।

শুনানি শেষে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণার গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আদেশের পর রিটকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমরা আশা করবো নির্বাচন কমিশন আপিল দায়ের করবে। আর যদি তারা আপিল করতে ব্যার্থ হয় তাহলে আমরা আবার আইনগত ব্যবস্থা নেবো। এখন গেজেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। শপথ পড়ানোর কোনো সুযোগ নেই আর।

উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে সংসদ নির্বাচনে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী জয়ী হয়েছিলেন। তখন নির্বাচনের ফলাফল চ্যালঞ্জে করে শুধাংশ শেখর হালদার হাইকোর্টে ইলেকশন পিটিশন ফাইল করেছিলেন। সেখানে তিনি জয়লাভ করেন। পরে দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল ফাইল করেন। তা নিষ্পত্তি হবার আগেই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তখন আপিল বিভাগ মামলাটি অকার্যকর বলে খারিজ করে রায় দেন। সুতরাং এটা ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই যে, মেয়াদ শেষ হবার পরও মামলা ছিল বলে শপথ নিবেন।

আদেশের পর ইশরাকের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, তারা গেজেট স্থগিত চেয়েছিল, তা স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ। আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে- নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে এবং তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। নির্বাচন কমিশন আপিল করার যুক্তি না থাকায় আপিল করবে না বলে আগেই জানিয়েছে। আজকে আদেশ হলো- আবেদনকারীকে লিভ দেননি, কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। নিষ্পত্তি করে বলেছেন ইসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। এখন নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিবে। সিদ্ধান্তের আলোকে সরকার শপথ পড়াতে বাধ্য।

এফএইচ/এএমএ/জেআইএম