অর্থনীতি

বাজেটে বাড়তে-কমতে পারে যেসব পণ্যের দাম

বাজেটে বাড়তে-কমতে পারে যেসব পণ্যের দাম

২ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এবার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

Advertisement

প্রতিবারের মতো এবারও বেশকিছু পণ্যে বাড়বে কর। এতে ওইসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। একই সঙ্গে কর ছাড়সহ কিছু সুবিধাও পাবে কোনো কোনো খাত। এর ফলে ওইসব খাতের পণ্যের দাম কমতে পারে আসন্ন বাজেটে।

যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

ব্যবহার কমাতে প্লাস্টিক জাত হোম ও কিচেন ওয়্যারসহ প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের ভ্যাট দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে পারে সরকার। হেলিকপ্টার আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হতে পারে। যার মধ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর থাকছে। এর ফলে হেলিকপ্টারে যাতায়াতে ভাড়া বাড়বে।

কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টারের সেবার ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের খরচ বাড়বে।

Advertisement

একাধিক গাড়ি থাকলে সিসিভেদে ২৫ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত পরিবেশ সারচার্জের বিধান রয়েছে এখন। এটি বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হতে পারে।

দ্বিগুণ হচ্ছে ভ্যাট, প্লাস্টিক পণ্য-এসি-ফ্রিজের দাম বাড়তে পারে

রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এসির ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন উপকরণ- প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড, চার্জার, ব্যাটারি, হাউজিং, ক্যাসিংসহ অন্যান্য উপকরণে ভ্যাট ২ শতাংশের জায়গায় ৪ শতাংশ করা হতে পারে। এলপিজি সিলিন্ডারের ভ্যাটহার বেড়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।

বাড়বে বাড়ি নির্মাণের খরচ। সিমেন্টশিট উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ, ফেরো ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ অ্যালয় উৎপাদন পর্যায়ে এক হাজার টাকা প্রতি টন থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা প্রতি টন করা হতে পারে। ফেরো সিলিকন অ্যালয়ের উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি টনে ভ্যাট এক হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করা হতে পারে। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির সেবা পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। লিফট উৎপাদনে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ করা ও নির্মাণ সংস্থার সেবার বিপরীতে ভ্যাট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।

অন্যদিকে ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকারসহ এ জাতীয় পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি ছিল। আসছে বাজেটে এসব পণ্যে ৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হতে পারে

Advertisement

আরও পড়ুনরাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬১৪ কোটি টাকা বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য

ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলারের ভ্যাট বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে। কটন সুতা, কৃত্রিম আঁশ ও অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি ইয়ার্নের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানো হতে পারে।

যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে

বাজেটে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের উৎসে কর কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। এর ফলে চাল, ডাল, আটা, লবণ, ভোজ্যতেলসহ একাধিক কৃষি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমতে পারে।

যাত্রীসেবার মান বাড়াতে ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাসের জন্য আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। ফলে যাত্রীবাহী বাসের দাম কমতে পারে। বর্তমানে ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাসের জন্য ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়।

পরিবেশবান্ধব পণ্য যেমন সুপারির খোল দিয়ে তৈরি তৈজসপত্র ও হাতে তৈরি মাটির পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি হতে পারে। এসব পণ্য কেনাকাটায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয় ক্রেতাকে।

কম্পিউটার ও কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের ফল ক্রয়ের জন্য স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের ওপর উৎসে কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হতে পারে।

আগামী বাজেটে এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়। এছাড়া বাইরেও এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির ফলে বিদ্যুৎ, শিল্পের উৎপাদন ও পরিবহন খাতে ব্যয় কমতে পারে।

স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাকেটজাত তরল দুধ, পলিপ্রোপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবারে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হতে পারে। এছাড়া ই-বাইকের উৎপাদন ও উপকরণ আমদানি, ফ্রিজ-এসির কম্প্রেসার উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব আসতে পারে বাজেট প্রস্তাবনায়।

ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীর বিদ্যুৎ ক্রয়ের কর, বিদেশি ক্রেতার এজেন্টের কমিশন বা পারিশ্রমিকের কর কমতে পারে। এছাড়া জমি ও ফ্ল্যাট বেচাকেনায় নিবন্ধন খরচ ও উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব আসতে পারে।

এবার বাজেট প্রস্তাবনায় রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা কমতে পারে। ৩৯ সেবার ক্ষেত্রে এখন রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকছে। ১২ ধরনের সেবার ক্ষেত্রে শুধু টিআইএন দাখিল করলেই হবে।

এসএম/কেএসআর/জেআইএম