ক্যাম্পাস

দেশে প্রথমবারের মত মুরগির আইবিএইচ রোগের ভাইরাসের দুই ধরন শনাক্ত

দেশে প্রথমবারের মত মুরগির আইবিএইচ রোগের ভাইরাসের দুই ধরন শনাক্ত

দেশে প্রথমবারের মতো ব্রয়লার মুরগির দেহে ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস (আইবিএইচ) রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী ফাউল অ্যাডেনোভাইরাসের দুটি সেরোটাইপ (৮বি এবং ১১) শনাক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম এবং তার গবেষক দল এটি শনাক্ত করেন।

Advertisement

বাস-ইউএসডিএর অর্থায়নে পরিচালিত ওই গবেষণায় অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলামের নেতৃত্বে কো-পিআই হিসেবে আছেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম এবং বাকৃবির স্নাতকোত্তরের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।

গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক আলিমুল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালের দিকে বাংলাদেশে হঠাৎ করে কমবয়সী (৩-৬ সপ্তাহ বয়সী) ব্রয়লার মুরগির ব্যাপক মৃত্যু হয়। খামারিরা এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। পরবর্তী সময়ে বড় বড় বাণিজ্যিক ব্রয়লারের খামারিরা মুরগি নিয়ে বিভিন্ন ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা (হিস্টোপ্যাথোলজি ও মলিকুলার ডিটেকশন) করিয়ে দেখেন এটি বার্ড ফ্লু নয়, আবার রানীক্ষেতও নয়; নতুন একটি ভাইরাস। তারা এটির শুধু আইডেন্টিফিকেশন করতে পেরেছেন কিন্তু আইসোলেশন করতে পারেননি। ব্রয়লারের মাংস সাধারণ মানুষের আমিষের উৎস, এটি বিবেচনা করেই রোগটির সমস্যার সমাধানে এই গবেষণা। গবেষণাটি সম্প্রতি প্রবন্ধ আকারে ‌‘ফ্রন্টায়ারস ইন মাইক্রোবায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস (আইবিএইচ) নতুন একটি উদীয়মান রোগ, যা ফাউল অ্যাডেনোভাইরাসের আক্রমণের কারণে হয়। ভাইরাসটির ১১টি সেরোটাইপ রয়েছে এবং পাঁচটি জেনোটাইপ রয়েছে। সেরোটাইপ ৮বি এবং ১১ সবচেয়ে মারাত্মক। রোগটি সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করে বাণিজ্যিক ব্রয়লারকে এবং লেয়ারেও আক্রমণ করতে পারে।

Advertisement

ওই ভাইরাসে আক্রান্ত মুরগির লক্ষণ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলিমুল ইসলাম জানান, অল্প বয়সী মুরগির ক্ষেত্রে বিশেষ করে ১৪ দিন বয়সী ব্রয়লার মুরগিতে রোগটি বেশি হয়। ১৫ দিন বয়স থেকে এদের খাবার খাওয়া, চলাচল ও বৃদ্ধি কমে যায়। ২১ দিনের মধ্যেই পুরোপুরি লক্ষণ দেখা যায়। অবসন্নতা, দুর্বলতা, ডায়রিয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিয়ে ৩-৪ সপ্তাহ বয়সের মধ্যেই মুরগিগুলো মারা যেতে থাকে। আক্রান্ত মুরগিগুলোর ময়নাতদন্ত করলে লক্ষ্য করা যায়, গিজার্ডের ভেতরের স্তরটা নরম হয়ে গেছে এবং টান দিলে সহজেই খসে পড়ছে। লিভার ও কিডনিতে ফোকাল নডুলার গ্রোথ এবং হার্টে হাইড্রোপেরিকার্ডিয়াম দেখা যায়। এই ভাইরাসের আক্রমণের ফলে মুরগি বড় হওয়ার আগে মারা যায়। ফলে বাজারে বিক্রি করতে না পারায় ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হন খামারিরা।

ভাইরাসটি ভার্টিক্যাল (ডিমের মাধ্যমে) ও হরিজন্টাল (খামারের এক মুরগি থেকে অন্য মুরগিতে) দুভাবেই ছড়াতে পারে বলে জানান বাকৃবির এই অধ্যাপক।

গবেষণার পদ্ধতির বিষয়ে গবেষক আলিমুল ইসলাম বলেন, কনভেনশনাল পিসিআর, আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে আমরা ভাইরাসটি নির্ণয় ও এভিয়ান এমব্রায়োতে ভাইরাসটির আইসোলেশন করেছি। আংশিক জিনোম সিকোয়েন্স অ্যানালাইসিস করা হয়েছে। তবে হোল জিনোম সিকোয়েন্স অ্যানালাইসিসের কাজ চলমান।

তিনি বলেন, মুরগিতে ভ্যাকসিনের দুটি শট এবং ফিল্ড ভাইরাসের চ্যালেঞ্জ দিয়ে দেখা গেছে, রোগটির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনটি সর্বোচ্চ কার্যকর। যে মুরগিগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আমরা এক বছর ধরে আমাদের কাছে রেখেছি এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেছি। দেখা গেছে, নতুন করে মুরগিগুলো আইবিএইচে আক্রান্ত হয়নি।

Advertisement

তবে ভ্যাকসিনটির জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন দাবি করে ওই অধ্যাপক জানান, পরীক্ষামূলকভাবে আমরা ভ্যাকসিনটির দুটি ট্রায়াল করেছি এবং তিন নম্বর ট্রায়াল করার পর ভ্যাকসিনের পেপারটি আন্তর্জাতিক জার্নালে উপস্থাপন করবো। তবে ভ্যাকসিনটি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

আসিফ ইকবাল/এসআর/জেআইএম