বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা সাক্ষাৎকার স্থগিত করার ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলমান ক্ষমতার লড়াইয়ের আরেকটি ধাপ। যদিও নীতি পরিবর্তন হতে পারে বা বাস্তবে এটি যতটা কঠিন মনে হচ্ছে, ততটা না-ও হতে পারে। তারপরেও এটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় সাফল্যগাথার ওপর আরেকটি আঘাত।
Advertisement
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। অথচ বিদেশিদের কাছে সেবা বিক্রি কঠিন করে তোলা একেবারেই বেমানান। কিছু সমর্থক মনে করেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা আমেরিকান শিক্ষার্থীদের আসন দখল করে নিচ্ছে। যা এক ধরনের ভুল ধারণা। প্রকৃতপক্ষে, উচ্চ টিউশন ফি দিয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের শিক্ষা ব্যয় অনেকাংশে বহন করে। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বের অন্যান্য প্রতিযোগীর তুলনায় বহুমুখী ও প্রতিভাবান শিক্ষার্থী আকর্ষণে এগিয়ে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো আরও উদ্ভাবনী ও গতিশীল হয়। সেইসঙ্গে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সফট পাওয়ার’ সারা বিশ্বে বিস্তৃত হয়।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখছে। তাদের চোখে বিশেষ করে অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ‘জাগরণবাদ’ ও ইহুদিবিরোধিতার আঁতুড়ঘর। এসব প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতের ডেমোক্র্যাট নেতা তৈরির কারখানা, যা তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি।
অবশ্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের কিছু সত্যতা রয়েছে। তারা ইহুদি বিরোধিতার বিষয়ে উদাসীন থেকেছে, রক্ষণশীল মতকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি। তবে সেটি সমগ্র উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার ওপর এই আক্রমণাত্মক নীতির যৌক্তিকতা দেয় না। এই নীতির আওতায় দেখা যাচ্ছে: ‘ভুল’ মত প্রকাশের দায়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিতাড়ন, আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত, সরকারি গবেষণা তহবিল স্থগিত, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে নতুন কর আরোপের পরিকল্পনা।
Advertisement
ভাইস-প্রসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স অতীতে ক্যাম্পাসে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকোচনের সমালোচনা করেছেন। এখন তিনিই বিদেশি শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাই ও মতের জন্য বিতাড়নের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। যা দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সেই স্থান, যেখানে শিক্ষার্থীরা নতুন চিন্তা-ভাবনা অনুসন্ধান করে।
বিশ্ব প্রতিভা অর্জনের প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবসময়ই সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার ছিল। এর ফলে বিজ্ঞান, ব্যবসা ও শিল্পে দেশটি লাভবান হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান নীতিগুলো এই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে দেবে। যেসব বিদেশি মেধাবী শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার সামর্থ্য রাখে, তাদের সামনে বিকল্প রয়েছে। কে চায় এমন দেশে পড়তে যেতে, যেখানে রাষ্ট্রপ্রধানই আপনাকে অপছন্দ করে, যেখানে যেকোনো সময় আপনার ভিসা বাতিল হতে পারে, আপনার বার্তালাপ নজরদারির আওতায় থাকবে, এবং আপনি চাকরিও পেতে নাও পারেন?
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতটাই ভালো যে, এখনো অনেকে সেখানে পড়তে আগ্রহী হবে। তবে প্রাথমিক লক্ষণগুলো বলছে, এসব পদক্ষেপ সত্যিই বিদেশি আবেদনকারীদের নিরুৎসাহিত করছে। ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা মনে করছেন, তারা যেন শিক্ষাব্যবস্থাকে শৃঙ্খলায় আনছে। কিন্তু এই নীতিগুলো আমেরিকান উচ্চশিক্ষাকে মধ্যম মানে নামিয়ে আনবে।
এমএসএম
Advertisement