পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট, যার উচ্চতা প্রায় ৮,৮৪৯ মিটার। এখানে এক পা সামনে বাড়ানো মানেই জীবনকে বাজি রাখা। আর এই জীবন বাজিতে ১৯৫৩ সালের ২৯ মে প্রথম সফল হয়েছেন এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে। তারা সর্বপ্রথম এভারেস্টের চূড়ায় উঠেন এবং এভারেস্ট জয় করেন।
Advertisement
বিশ্বের বহু দেশের পাশাপাশি এভারেস্টের মতো সেই শীতল মৃত্যুপুরীতে উঠে গেছে বাংলাদেশের সাত জনের নাম। তারা সবাই সফলভাবে এভারেস্ট জয় করেছেন। তাদের হাত ধরেই এভারেস্টে উড়েছে লাল-সবুজের পতকা, পৌঁছেছেন ইতিহাসে। চলুন জেনে নেই সেই সাত সাহসীর গল্প-যারা এভারেস্ট ছুঁয়ে এনে দিয়েছেন বাংলাদেশকে নতুন এক উচ্চতা।
১. মুসা ইব্রাহীম২০১০ সালের ২৩ মে বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৫ মিনিটে মুসা ইব্রাহীম বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী হিসেবে ইতিহাস গড়েন। তিনি তিব্বতের উত্তর দিকের পথ ব্যবহার করে চূড়ায় পৌঁছান। সে সময় কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের উপ-মিশনপ্রধান নাসরিন জাহান মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট জয়ের তথ্য নিশ্চিত করেন।
২০০০ সালে পাহাড়ে চড়ার মাধ্যমে তার পর্বতারোহণের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৭ সালে তিনি ‘নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ‘মিশন ২০১০: ভিশন এভারেস্ট’ ঘোষণা করেন। এই ক্লাবের মাধ্যমে তিনি দেশের যুবকদের পর্বতারোহণে উৎসাহিত করেন। এছাড়া ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মুসা ইব্রাহিম আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমাঞ্জারোর চূড়া জয় করেন।
Advertisement
২০১১ সালের ২১ মে এম এ মুহিত বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন। পরের বছর ২০১২ সালের ২০ মে তিনি আবারও এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন। ফলে তাকে বাংলাদেশের একমাত্র দুইবারের এভারেস্টজয়ী করে তোলে। তিনি ‘বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব’-এর সদস্য ছিলেন এবং পর্বতারোহণের পাশাপাশি তরুণদের প্রশিক্ষণেও ভূমিকা রেখেছেন।
৩. নিশাত মজুমদার২০১২ সালের ১৯ মে সকাল নয়টা ৩০ মিনিটে নিশাত মজুমদার এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখে বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী হন। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার জন্য। তিনি ২০০৩ সালে এভারেস্ট বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ চূড়া কেওক্রাডং জয় করেন। যার উচ্চতা ৩,১৭২ ফুট। নিশাত মজুমদার ২০০৭ সালে ভারতের দার্জিলিং মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তার এই সাফল্য দেশের নারীদের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।
৪. ওয়াসফিয়া নাজরীন২০১২ সালের ২৬ মে শনিবার সকাল পৌনে ৭টায় ওয়াসফিয়া নাজরীন এভারেস্ট জয় করেন। এবং এর ফলে তাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় নারী এভারেস্টজয়ী করে তোলে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে 'বাংলাদেশ অন সেভেন সামিটস' অভিযানের অংশ হিসেবে সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেন। এছাড়া, তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত কেটু জয় করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পর্বত জয়ের এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।
৫. মোহাম্মদ খালেদ হোসেনমোহাম্মদ খালেদ হোসেন ২০১৩ সালের ২১ মে এভারেস্ট জয় করেন। তিনি সজল খালেদ নামে পরিচিত। দুর্ভাগ্যবশত, চূড়া জয় করার পর নামার পথে ৮,৬০০ মিটার উচ্চতায় ‘অজানা কারণে’ মারা যান খালেদ। এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে মৃত্যুবরণকারী প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন তিনি। তার এই আত্মত্যাগ এভারেস্ট জয়ের একটি ইতিহাস। এর আগে খালেদ সিকিমের ফ্রে পর্বত, নেপালের মাকালু, হিমালয়ের বাংলাদেশ-নেপাল ফ্রেন্ডশিপ পিক এবং অন্নপূর্ণা রেঞ্জের সিংগুচুলি পর্বত জয় করেন।
Advertisement
২০২৪ সালের ১৯ মে সকাল ৮:৩৫ মিনিটে বাবর আলী এভারেস্ট জয় করেন, যা এক দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশের পুনরায় চূড়া ছোঁয়ার মুহূর্ত। একই অভিযানে তিনি লোৎসে শৃঙ্গও জয় করেন, যা তাকে বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এক অভিযানে দুটি শৃঙ্গ জয়ের কৃতিত্ব এনে দেয়। এছাড়া ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের দশম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং অন্যতম কঠিন পর্বত অন্নপূর্ণা-১ জয় করেন বাবর আলী। যার উচ্চতা ২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রামভিত্তিক ট্রেকিং ক্লাব ‘ভার্টিকাল ড্রিমার্স’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ সম্পাদক।
৭. ইকরামুল হাসান শাকিলসর্বশেষ ২০২৫ সালের ১৯ মে সকাল পৌণে সাতটায় ইকরামুল হাসান শাকিল এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন। তার এই এভারেস্ট জয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কেনো না তিনি ২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকত থেকে হেঁটে ৮৪ দিনে ১,৩৭৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে পৌঁছান। তার এই অভিযানের নাম ছিল ‘সি টু সামিট’। এ অভিযানের মাধ্যমে তিনি পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেন। মাত্র ৮৪ দিনে তার এই অসাধ্য সাধন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট জয়ের দ্রুততম রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আজ ২৯ মে এভারেস্ট জয় করে বিকেল চারটায় দেশের মাটিতে পা রাখবেন।
আরও পড়ুন চুলের মুঠি গাছে বেঁধে ঝুলে রইলেন ২৫ মিনিট দৌড় নয়, কচ্ছপের স্থির পদক্ষেপই এনে দেয় সাফল্যকেএসকে/জিকেএস