হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেফতার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনসহ চারজন সন্ত্রাসীকে বুধবার (২৮ মে) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে আদালতে নেওয়া হয়। পৌনে ৪টার দিকে তাদের আদালতের এজলাসে হাজির করা হয়। এসময় আসামিদের মাথায় হেলমেট, শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতকড়া পরানো ছিল। তবে আদালতে হাতকড়া পরানো নিয়ে আপত্তি জানান সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন।
Advertisement
তিনি রিমান্ড শুনানির আগে আদালতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন আমাকে কাঠগড়ায় রাখা হয়েছে। এখনো হ্যান্ডকাফ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে কেন? এ কেমন বিচার?
এরপর শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালত সুব্রত বাইন ওরফে মো. ফাতেহ আলীর (৬১) আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া গ্রেফতার অন্য তিন আসামির ছয়দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তারা হলেন- আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ (৫৩), এম এ এস শরিফ (২৫) ও মো. আরাফাত ইবনে মাসুদ (৪৩)।
রিমান্ড শুনানির আগে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, এখন বলে আমি চান্দাবাজি করি, ছিনতাই করি। আরে ভাই তদন্ত করে দেখেন কে আমার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করলো। এ আধুনিক যুগে যদি চাঁদাবাজ না ধরতে পারেন, তাহলে কী লাভ সাংবাদিকতা করে। আমার টাকা থাকলে আমি নিজেই একটা পত্রিকা খুলে নিতাম, টিভি খুলে নিতাম। কিন্তু আমার এত পাওয়ারের দরকার নেই। আমি পাওয়ারকে সিজদা করি।
Advertisement
তিনি বলেন, আমি বাঁচার জন্য অস্ত্র রাখি। আমি যদি বলি অস্ত্র রাখি না, তাহলে এটা মিথ্যা হবে। লিয়াকত, মুরগি মিলন এরা আমার শত্রু ছিল। এদের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমি এ জায়গায় এসেছি।
২০২২ সালের রমজান মাসের ২৬ তারিখ ভারত থেকে আমাকে বাংলাদেশে ঢুকানো হয়। এরপর আমাকে আড়াই বছর আয়নাঘরে রাখা হয়েছে। আয়নাঘরে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। পরে ৫ আগস্ট রাত তিনটার সময় আমাকে চোখ বেঁধে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে ছেড়ে দেয়।
তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, সাংবাদিকরা যেন তদন্ত করে সত্যিটা লেখে। আমি যা সেটাই যেন লেখে। সত্যি কথা লিখবেন। হলুদ সাংবাদিক হবেন না। ৮৯ সাল থেকে আমার বিরুদ্ধে লিখতেছে। আপনারা কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিছু লিখবেন না। সাংবাদিকদের বোঝা উচিত, তারা কী লিখছে, তার প্রভাবে কী হতে পারে। আমার পরিবার আছে। ৬১ বছর বয়স হয়ে গেছে।
পরে এজলাসে বিচারক এলে কথা বলা বন্ধ করেন সুব্রত বাইন। এরপর শুনানি শেষে বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে হাতিরঝিল থানার অস্ত্র মামলায় তার আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। এসময় বিচারক উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সতর্কতার সঙ্গে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশনা দেন। এসময় সুব্রত বাইন বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন- স্যার, রিমান্ডে যেন আমার নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। এসময় বিচারক বলেন, হ্যাঁ, নামাজের ব্যবস্থা করবো।
Advertisement
এর আগে ২৭ মে সকালে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী। পরে তার আরও দুই সহযোগী এম এ এস শরিফ (২৫) ও মো. আরাফাত ইবনে মাসুদকে (৪৩) গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
এমআইএন/এমএএইচ/