বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। অর্থসংকটের কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা আবেদন করেও টাকা পান না। এতে জীবনের শেষ সময়েও নিদারুণ কষ্টে দিন কাটে অবসরে যাওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের।
Advertisement
তাদের এ সংকট নিরসনে এবার বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডে’ দুই হাজার কোটি টাকা এবং ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টে’ ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
অবসরে যাওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এ দুটি প্রতিষ্ঠানে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ায় খুশি ভুক্তভোগীরা। তাদের প্রত্যাশা প্রায় পাঁচ বছর ধরে ঝুলে থাকা আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।
তবে অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, স্থায়ী তহবিল ও মূলধন তহবিল গঠনে এ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে আবেদন করে দিনের পর দিন ঘুরতে থাকা শিক্ষক-কর্মচারীরা হঠাৎ করেই অর্থ ছাড় পেয়ে যাবেন, তেমনটি নয়। সরকার এ দুটি প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটতে তহবিল গঠনে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।
Advertisement
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী সুবিধা বোর্ডে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি দিয়ে ‘স্থায়ী তহবিল’ গঠন করা হবে। গত ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট অধিশাখার সম্মতিপত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়। সম্মতিপত্রে সই করেছেন সিনিয়র সহকারী সচিব শাহরিয়ার জামিল।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সহায়তা কার্যক্রমের অধীন ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অনুকূলে ‘স্থায়ী তহবিল’ গঠনে অন্যান্য অনুদান খাতে দুই হাজার কোটি টাকা অর্থ বিভাগের ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত’ হতে বরাদ্দ প্রদানে নির্দেশক্রমে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।
সম্মতিপত্রে বলা হয়েছে, ‘বরাদ্দকৃত এ অর্থ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জারিকৃত সংশোধিত কর্তৃত্ব অর্পণ আদেশের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।’ এতে বেশ কিছু শর্তজুড়ে দেওয়া হয়েছে।
শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫-এর প্রবিধান ৬ অনুযায়ী অধিক আয়ের লক্ষ্যে বোর্ডের অনুকূলে স্থায়ী তহবিল হিসেবে দুই হাজার কোটি টাকা লাভজনক সরকারি সিকিউরিটি বা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। সিকিউরিটি বা ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করার এক সপ্তাহের মধ্যে তার প্রমাণক অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে।
Advertisement
স্থায়ী তহবিল হিসাব থেকে বিনিয়োগকৃত ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ শেষে তা নবায়ন বা পুনরায় ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করতে হবে এবং ট্রেজারি বন্ডকৃত স্থায়ী তহবিল থেকে কোনো অর্থ অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। শুধু সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ চলতি তহবিলে জমা করে সেখান থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।
২০০ কোটি টাকার মূলধন তহবিল পেলো কল্যাণ ট্রাস্টপৃথক সম্মতিপত্রে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে মূলধন তহবিল গঠনে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। অবসর বোর্ডের মতো এখানেও অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কল্যাণ ট্রাস্টের বরাদ্দেও তিনটি শর্ত দেওয়া হয়েছে।
সেগুলো হলো—
>> কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯-এর প্রবিধান ৭-এ বর্ণিত ‘মূলধন তহবিল’ হিসেবে কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে দুইশো কোটি টাকা অধিক আয়ের লক্ষ্যে সিকিউরিটি বা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে।
>> সিকিউরিটি বা ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করার এক সপ্তাহের মধ্যে তার প্রমাণক অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।
>> ‘মূলধন তহবিল’ হিসাব থেকে বিনিয়োগকৃত ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ শেষে তা নবায়ন বা পুনরায় ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করতে হবে। ট্রেজারি বন্ডকৃত মূলধন তহবিল থেকে কোনো অর্থ অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। শুধু সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ সাধারণ তহবিলে জমা করে সেখান থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।
বুধবার (২৮ মে) বিকেলে দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট মিলিয়ে প্রায় ৭৫ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন অনিষ্পন্ন হয়ে জমা পড়ে আছে। অর্থ সংকটে কারণে আবেদনকারীদের টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
এএএইচ/এমআরএম/এমএস