পবিত্র ঈদুল আজহা সারাবিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একটি অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসবের অন্যতম উদ্দেশ্য গবাদিপশু কোরবানি করা। দেশের জাতীয় অর্থনীতিতেও একটি বিশাল জায়গা দখল করে আছে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। মুসলমানদের এই উৎসবের উদ্দেশ্য বাণিজ্যিক না হলেও অর্থনীতিতে এর ভূমিকা অনেক। কোরবানি উপলক্ষ্যে সারা দেশব্যাপী যে লেনদেন হয়, অর্থনীতিতে তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রতিবছর সারাদেশে কোরবানি উপলক্ষ্যে সপ্তাহখানেক সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। সঠিক পরিকল্পনা ও হিসাব না রাখার কারণে এই লেনদেন থেকে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে অপরদিকে তা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। ধারণা করা হয়, কোরবানি কেবল গবাদিপশুর বেচাকেনার অর্থনীতি। প্রকৃতপক্ষে কোরবানি হলো বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক তৎপরতা; যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির চাকায় আরো গতি সঞ্চার করে। কোরবানি হলে একদিকে যেমন গবাদিপশু ক্রয় করেন কোরবানি দাতারা, তেমনি অন্যদিকে খামারি বা প্রান্তিক কৃষকরা গবাদিপশু বিক্রি করে তাদের প্রয়োজনীয় সওদা করেন।
Advertisement
এর সাথে যুক্ত হয় মসলার বিরাট বাজার, কোরবানির পশুর খাবার, জবাই করার ছুরি-চাকু, মাংস কাটার সরঞ্জামাদি, কোরবানির পশুর মাংস কাটা ও বণ্টনের জন্য কর্মীদের আয়-রোজগার, কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয়। এসব মিলিয়ে এক বিরাট অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে কোরবানিকেন্দ্রিক অর্থনীতির প্রভাব। দেশের অর্থনীতিতে কোরবানির অবদান অনস্বীকার্য। কোরবানির আগে ও পরে কোরবানির ঈদকে উপলক্ষ্য করে হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। আর এই মহা কর্মযজ্ঞকে কেন্দ্র করে লাখো-কোটি মানুষের অস্থায়ী কর্মসংস্থান এবং আয়-রোজগারের ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে দেশের জিডিপিও সমৃদ্ধ হয়।
জানা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা নিরূপণ করেছে। এ বছর কোরবানিযোগ্য সর্বমোট ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭ টি গবাদিপশুর প্রাপ্যতা আশা করা যাচ্ছে। এবার হৃষ্টপুষ্টকৃত গবাদিপশুর মধ্যে ৫৬ লাখ দুই হাজার ৯০৫ টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০ টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২ টি অন্যান্য প্রজাতি রয়েছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছরও প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫ টি গবাদিপশুর উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। গত বছর দেশে কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ; এর মধ্যে কোরবানি হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ। ২০২৪ সালে শুধু কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় উপলক্ষ্যে লেনদেন হয় ৬৯ হাজার ১শ ৪১ কোটি ১২ লক্ষ টাকা। যার সিংহভাগই যুক্ত হয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। এছাড়া গত বছর অনলাইন প্ল্যাটফরমে ৪ হাজার ৭ শ ৪০ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫.০৫ লক্ষ গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে।
কোরবানির ঈদে বাজার যেন কেউ অস্থিতিশীল করতে না পারে, চাঁদাবাজির কারণে পশুর দাম যেন না বাড়ে সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে এ মন্ত্রণালয়। এছাড়া গবাদি পশুর মধ্যে স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টি ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ জন্য সারাদেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
Advertisement
সরকারি নিয়ম অনুসারে, প্রতিটি গরু-মহিষ, দুম্বা বা ছাগল ও উটের জন্য বিক্রয়মূল্যের ৫% হারে রাজস্ব দিতে হবে (সূত্র: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন)। এবার শুধু ৫৬ লাখ দুই হাজার ৯০৫ টি গরু-মহিষ থেকেই সরকারের রাজস্ব পাওয়ার কথা প্রায় ৩০ কোটি টাকা। অন্যান্য পশু মিলিয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা। এছাড়া এবছর কোরবানি হওয়া ৫৬ লাখ দুই হাজার ৯০৫ টি গরু-মহিষের প্রত্যেকটি চামড়ার মূল্য গড়ে ১ হাজার টাকা ধরলে এর মূল্য হয় প্রায় ৫৬১ কোটি টাকা। আবার ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০ টি ছাগল-ভেড়ার প্রত্যেকটির চামড়ার মূল্য ১০০ টাকা ধরলেও এ বাবদ হয় ৬৮.৫০ কোটি টাকা। কোরবানি উপলক্ষ্যে গরু এবং ছাগলের চামড়া মিলিয়ে এই পুরো টাকা যাচ্ছে সরাসরি গরিবদের হাতে।
অন্যদিকে প্রতিবছর ঈদুল আজহায় বছরে উৎপাদিত মোট চামড়ার প্রায় ৬০ শতাংশ সংগৃহীত হয়। চামড়াশিল্প দেশের প্রধান রপ্তানি খাতগুলোর অন্যতম। আয়ের দিক থেকে দেশে তৈরি পোশাক খাতের পরে দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি পণ্য হলো চামড়া। শিল্প আয়ে এ খাতের অবদান ২ শতাংশ আর রপ্তানির ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশীয় জিডিপিতে চামড়াশিল্পের অবদান প্রায় শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ। কোরবানির ওপর ভর করেই টিকে আছে বিপুল সম্ভাবনার এ খাতটি। বাংলাদেশ থেকে ইতালি, নিউজিল্যান্ড, পোল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর চামড়াজাত পণ্য রফতানি করা হয়। তাছাড়া কোরবানির সময় চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রায় হাজার কোটি টাকার ব্যবসা জড়িত। লবণ হলো চামড়া সংরক্ষণের অন্যতম উপাদান। জানা যায় দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত লবণের মজুদ রয়েছে। আগামী কোরবানির ঈদে চামড়া শিল্পের জন্য লবণের সংকট হবে না। কোরবানি উপলক্ষ্যে লবণের ব্যবসাও চাঙ্গা হয়। চামড়া সংরক্ষণে প্রয়োজন হয় বিপুল জনবলের। এসময় শ্রমিকরা পান তাদের শ্রমের চড়ামূল্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণেও লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
কোরবানির বর্জ্যেও অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনার কথা বলছেন গবেষকরা। যেই বর্জ্য ঈদ-পরবর্তী ভোগান্তির কারণ, সেই বর্জ্যেই লুকিয়ে আছে শত কোটি টাকার সম্পদ! সচেতনতার অভাবে রপ্তানিযোগ্য পশুর উচ্ছিষ্ট নষ্ট হচ্ছে। কোরবানির ঈদে বর্জ্য হিসাবে হাড়, শিং, নাড়িভুঁড়ি, পেনিস, মূত্রথলি, রক্ত, চর্বি, পিত্ত ও চামড়ার ওয়েস্টেজ অংশ ফেলে দেওয়া হয়। এসব উচ্ছিষ্ট শতভাগ রপ্তানিযোগ্য। জানা যায়, গরুর হাড় দিয়ে তৈরি হয় জীবন রক্ষাকারী ক্যাপসুলের কভার। নাড়ি দিয়ে তৈরি হয় অপারেশনের সুতা। চর্বি দিয়ে সাবান। নাড়িকোষ দিয়ে তৈরি হয় জাপানের জনপ্রিয় খাবার সুসেড রুল। পেনিস দিয়ে তৈরি স্যুপ, যা বিভিন্ন দেশে অভিজাত খাবার হিসেবে বিবেচিত। এর দামও বেশি। এভাবেই পশুবর্জ্য মানুষের কোনো না কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়। এগুলো রপ্তানি করলে শত কোটি টাকা আয় করা সম্ভব শুধু কোরবানি ঈদকেন্দ্রিক। শুধু তাই নয়,বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোরবানির বর্জ্য দিয়ে উৎকৃষ্ট জৈবসার তৈরি করা যাবে, যা মাটির উর্বরতা বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। ছাগল, ভেড়া, মহিষের উচ্ছিষ্টাংশ ব্যবহার করে দেশের পশু ও মৎস্য খাদ্যের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা যায়।
অন্যদিকে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার বিপুল সম্ভাবনার উৎস এই কোরবানির ঈদকে ক্রেতা- বিক্রেতা উভয়ের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছেন । মন্ত্রণালয় বলেছেন, দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি গবাদি পশু থাকায় চলতি বছরে কোরবানি ঈদের জন্য পশু আমদানি করা হবে না। অবৈধ পথে কোনোভাবেই গবাদি পশু প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না । এমনকি কোরবানি শুরুর একমাস আগে (৪ মে) থেকেই গবাদি পশুর অবৈধ অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ আছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
Advertisement
কোরবানির ঈদে বাজার যেন কেউ অস্থিতিশীল করতে না পারে, চাঁদাবাজির কারণে পশুর দাম যেন না বাড়ে সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে এ মন্ত্রণালয়। এছাড়া গবাদি পশুর মধ্যে স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টি ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ জন্য সারাদেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লালনপালন বিষয়ে ৮৩ হাজার ৬৫৬ জন খামারিকে প্রশিক্ষণ, ৬ হাজার ৬০০টি উঠান বৈঠক, ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৮টি জনসচেতনতামূলক লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে।
তাছাড়া স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে খামারিদের প্রশিক্ষণ চলমান আছে এবং জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে ৫৩ হাজার ২৬৩টি খামার পরিদর্শন করে খামারিদের স্টেরয়েড/ হরমোন এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাছাড়া এবারও কোরবানির পশু পরিবহনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে । এবার বাসে বা পরিবহনের লকআপে কেউ যেন ছাগল ও ভেড়া পরিবহন না করে সে বিষয়ে সচেতনতাসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। প্রাণিকল্যাণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ পরিহার করতে হবে এবং যথাযথ পরিবহণের মাধ্যমে পরিবহণ নিশ্চিত করতে হবে। তা ব্যত্যয় হলে প্রাণিকল্যাণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ছিনতাইরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে পশু পরিবহণ নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (বিজিবি এবং বাংলাদেশ পুলিশ), জেলা প্রশাসন, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতা গ্রহণ করা হবে বলেও জানা যায় মন্ত্রণালয়সূত্রে।
এবার এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (হট লাইন-১৬৩৫৮) চালু থাকবে। যেকোনো সমস্যা সমাধানে ফোন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহাসড়কে বা যেখানে হাট বসালে যান চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কিছু যাতে না হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জেলা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে। জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে উপজেলা ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সাথে একযোগে কাজ করবে। সড়কে বা সেতুতে কোরবানির পশুবাহী গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়াসহ যাতে রাস্তায় পশু আটকে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি না করা হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম চিকিৎসা দিবে ও মনিটরিং করবে । সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভার উদ্যোগে প্রতিটি হাটে উপযুক্ত ও নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের ক্যাম্প স্থাপন করাসহ দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট থাকবে। ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের সেবা কর্মীদের জন্য অ্যাপ্রোন, মাস্ক, চেয়ার-টেবিল, বালতি, মগ ইত্যাদি সরবরাহ করা হবে।
গত বছরের মতো এবারও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় ১৯টি পশুর হাটে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে ২০টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য ৫টি কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ২টি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সমন্বয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, কন্ট্রোল রুম পরিচালনাসহ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক টিম গঠন করা হবে। তাছাড়া সারাদেশে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রাথমিক চিকিৎসা পরামর্শ, কোরবানির পশু নিরাপদ ও কোরবানি উপযোগী কিনা, কোরবানির পশু চেনার উপায়, সঠিক পদ্ধতিতে চামড়া ছাড়ানো ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় করণীয় বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবে।
এছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকবে। এ বছর সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক এর মাধ্যমে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর বিশেষ ভেটেরিনারি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে। মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত মনিটরিং টিম ঢাকা শহরে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিং করবেন। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গঠিত মনিটরিং টিম সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিং করবেন। এছাড়া বিটিভির পাশাপাশি সকল বেসরকারি টিভি চ্যানেলে অনুমোদিত সতর্কীকরণ বার্তা টিভিসি, জিঙ্গেল, ডকুমেন্টারি, টকশো ও স্ক্রল আকারে প্রচারের ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচারসহ লিফলেট, ফোল্ডার, পোস্টার বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে মন্ত্রণালয়ের প্রচার সেল হিসাবে খ্যাত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, এবার স্বাস্থ্যসম্মতভাবে কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণ বিষয়ে ১৫ হাজার ৩৬৯ জন পেশাদার ও ২১ হাজার ২০৮ জন অপেশাদার মাংস প্রক্রিয়াজাতকারী (কসাই) কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে অবৈধ উপায়ে গবাদিপশুর অনুপ্রবেশ রোধে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আন্তঃসীমান্তবর্তী জেলাসমূহে গবাদিপশুর অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিজিবি, বাংলাদেশ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, জেলা প্রশাসন, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সমন্বিতভাবে কাজ করবে। রবিবার (৪ মে ২০২৫) পর থেকে গবাদি পশুর অবৈধ অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোরভাবে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বিশেষকরে এবার সরকারি উদ্যোগে কোরবানির পশু সরবরাহের জন্য থাকছে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা । এছাড়া ট্রেন ও নৌপথেও পশু সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রাণিকল্যাণ আইন ২০১৯ মেনে চলতে হবে। গবাদি পশুর হাটে পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের যৌথ সহযোগিতায় গবাদি পশুর হাটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য অপসারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তাছাড়া স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে পশু কোরবানির বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। প্রাণিস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপদ মাংস নিশ্চিতকরণে প্রাণিকল্যাণ আইন-২০১৯ প্রতিপালন করতে হবে। গবাদি পশুর হাট ও পরিবহনের সময় পর্যাপ্ত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
সর্বোপরি, সরকারের নানামুখী উদ্যোগে বাংলাদেশ এখন গরু-ছাগল তথা মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এতে করে দেশের গবাদিপশু দিয়েই দেশের কোরবানির চাহিদা একদিকে যেমন মেটানো যাচ্ছে অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির চাকাও সচল হচ্ছে।
লেখক : গণযোগাযোগ কর্মকর্তা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।alam4162@gmail.com
এইচআর/জিকেএস