নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো দিয়েই প্রতিনিয়ত পার হচ্ছে ২০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ পর্যন্ত সাঁকো থেকে পড়ে দুজন নিহতও হয়েছেন। এছাড়া রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার সময় বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্বজনদের। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন হলেও সেতু আর হচ্ছে না। শুধুই আশ্বাস দিয়ে গেছেন জনপ্রতিনিধিরা।
Advertisement
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ইউনিয়নের চরখোর্দ্দা গ্রামের বুড়াইল নদীতে এই সেতু হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে সেতুর বদলে বাঁশের সাঁকোই ভরসা স্থানীয়দের।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের সংযোগ সড়কে এ সাঁকোটি। তিন ইউনিয়নের ২৭ গ্রাম ছাড়াও গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার কয়েকটি উপজেলার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এ পথ ধরে যাতায়াত করেন।
স্থানীয়রা বলেন, শুরুর দিকে জায়গাটা বুড়াইল নদী নামে পরিচিত ছিল। আকারে ছোট হওয়ায় কখনো বাঁশের সাঁকো, আবার কখনো কাঠের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতো দুই পারের গ্রামবাসী। বুড়াইলের পাশ দিয়ে ছিল তিস্তা নদী।
Advertisement
২০০১ সালের দিকে তিস্তা ভেঙে বুড়াইলে সংযোগ হয়। সেই থেকে বেড়ে যায় পানির প্রবাহ বুড়াইলে। ভাঙনের ফলে বাড়তে থাকে নদীর প্রস্থও। আর তখন থেকে তিস্তার শাখা নদী হিসেবে পরিচিতি পায় এটি।
সেতু নির্মাণের দাবিটা মূলত এখান থেকেই জোরালো হয়ে ওঠে। কিন্তু এখনো সেতু হয়নি। কেবলমাত্র আশ্বাসই মিলেছে। ফলে ২৪ বছরেও সেতুর দেখা পাননি স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী বহুদিন ধরে খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু আজও সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয়রা কয়েক মাস পর পর নিজ খরচে সাঁকোটি মেরামত করছেন।
উপজেলার চরখোর্দ্দা গ্রামের বাসিন্দা মা. আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের এই ভোগান্তি কেউ দেখতে আসে না। আর ভোগান্তি কবে শেষ হবে জানি না। কতবার কত লোক এসে মাপ নিলো। কিন্তু কোনো কাজ হলো না।
Advertisement
আরেক ভুক্তভোগী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সেতু না হওয়ায় ক্ষোভ কেবল আমার একার নয়, লাখো মানুষের। এ সাঁকোয় চলাফেরা অনেক গ্রামের। তারাপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দা, ঘগোয়া, লাঠশালা, বৈরাগী পাড়া ও পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বজড়া ও গুনাইগাছ ইউনিয়নের চরবিরহীম, সাধুয়া, দামারহাট, নাগড়াকুড়া ও থেথরাসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে এ পথ ধরে। দিনে প্রায় ১৫-২০ হাজার লোকের চলাচল। বহু লোকে সেতু করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়, কিন্তু হয় না।
ঘগোয়া গ্রামের মো. আবদুল মুত্তালেব মিয়া বলেন, ‘ইলেকশন যখন আসে তখন সবাই বলে, এটা করি দেমো, ওটা করি দেমো। যেই ভোট পার হয়, তখন আর কাউকে পাওয়া যায় না।’
পথচারী মো. বাবর আলী বলেন, ‘সাঁকো ভাঙলে আর নদীতে পানি বাড়লে সাংবাদিক আসে। ছবি তোলে, ভিডিও করে। আর হামারগুলার বক্তব্য নেয়। ব্রিজ তো হয় না। এখন আমরা সাংবাদিকদের ওপরও বিরক্ত।’
এ বিষয়ে কথা হয় তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ ব্রিজটা ধরানো আছে। সয়েল টেস্ট হয়েছে। বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সেতুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু করা হবে।
এ এইচ শামীম/জেডএইচ/জেআইএম