দেশজুড়ে

৫০ হাজারে বিক্রি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর!

৫০ হাজারে বিক্রি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর!

বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলায় অসহায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মাণ করা আশ্রয়ণ প্রকল্প, ফেইস-২ এর অধিকাংশ ঘর ৫০ হাজার থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে।

Advertisement

অভিযোগ রয়েছে, শুরুতেই ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে। নিজের নামে জমি ও বাড়ি আছে এমন ব্যক্তিদের নামে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সচ্ছল ব্যক্তিরা ওইসব ঘরে বসবাস না করে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছেন। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দের ঘরে থাকছেন তাদের স্বজনরা। অথচ প্রকৃত গৃহহীনরা ঘর না পেয়ে কাটাচ্ছে মানবেতর জীবন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ফেইস-২ এর ঘর নির্মাণ করা হয় ২০১৩ সালে। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প শুরু হয় ২০২০ সালে ও ঘর হস্তান্তর করা হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানের এসব প্রকল্পের প্রতিটি ঘর ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কেউ ভাড়া দিয়ে রাখছেন অন্য পরিবারের কাছে। সম্প্রতি বানারীপাড়া উপজেলার কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের টিউবওয়েল নষ্ট, ভরসা খাল-বিলের পানি নিজের দালান বাড়ি তবুও পেয়েছেন সরকারি ঘর দলবল নিয়ে চোখের সামনে গুঁড়িয়ে দিলো আশ্রয়ণ কেন্দ্র

বানারীপাড়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, ফেইস-২ এর আওতায় কয়েকটি ধাপে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সহস্রাধিক ঘর নির্মাণ করে উপজেলা প্রশাসন। নির্মাণকাজের মধ্যেই ঘর বরাদ্দের জন্য ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আবেদন নেওয়া হয়। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে ধাপে ধাপে তাদের মাঝে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।

Advertisement

বানারীপাড়া সদর উপজেলার উত্তরপাড় আবাসন প্রকল্পে ঘর ক্রয় করে বসবাসকারী শ্যামল মন্ডল বলেন, ৯ বছর আগে রোকেয়া বেগমের কাছ থেকে কিছু টাকার বিনিময়ে ঘর নিয়েছি। তিনি সম্পর্কে আত্মীয় হন। এখনো মাঝে মাঝে বেড়াতে আসেন।

এ ব্যাপারে রোকেয়া বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আত্মীয়, তাই থাকতে দিয়েছি। টাকার কোনো বিষয় নেই। যে টাকার কথা বলা হয়, তা সামনের বারান্দা নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য খরচ হয়েছে।

একই প্রকল্পের ১৪৫ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ মুন্নি বেগমের নামে। কিন্তু তিনি বরাদ্দ নিয়ে ভ্যানচালক রুস্তম আলীর কাছে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে অন্যত্র বসবাস করছেন। একইভাবে ফাইজুল হকের ঘর নাজমা বেগম ১ লাখ টাকায় কিনে বসবাস করছেন।

বানারীপাড়া সদর উপজেলার উত্তরপাড় আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা শাহআলম গোমস্তা, খলিলুর রহমান ও হাসিনা জাগো নিউজকে বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও ঘর রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে ৪টি ঘর বিক্রি করে দিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন তারা। বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও অনেক পরিবারই ঘরে না থেকে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার ঘরে তালা লাগিয়ে কর্মস্থলের দোহাই দিয়ে থাকছেন না মাসের পর মাস।

Advertisement

এদিকে বিভিন্ন জায়গায় দরখাস্ত করেও ঘর না পেয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকায় ঘর কিনে বসবাস করছেন বলে জানান সোহাগ।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে শাহজাহান বলেন, সোহাগ তার দূর সম্পর্কে আত্মীয় হন। তাই তাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে, এখানে টাকার কোনো বিষয় নেই।

বানারীপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মহসিন-উল-হাসান বলেন, কিছুদিন আগে এখানে যোগদান করেছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি অথবা ভাড়ার বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো। তাছাড়া আশ্রয়ণের ঘরগুলোর বিষয়ে এসিল্যান্ড ও ইউএনও স্যার ভালো বলতে পারবেন।

বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বায়েজিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি ও ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি নিয়ম বহির্ভূত। যদি কেউ ঘর বিক্রি করে থাকে কিংবা ভাড়া দিয়ে থাকে তাহলে তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঘর বিক্রি অথবা ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করা হবে। পরবর্তীতে প্রকৃত গৃহহীনদের মাঝে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে।

এফএ/জেআইএম