প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ, বিচার ও সংস্কারের বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরেছে বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধিদল।
Advertisement
শনিবার (২৪ মে) রাত ৮টা ৫০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বিএনপি নেতারা।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আমন্ত্রণ করেছিলেন। আমরা চারজন এসেছিলাম। আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু আগে জানানো হয়নি। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমরা যা আন্দাজ করেছিলাম, তার ওপর ভিত্তি করে আমরা একটা লিখিত বক্তব্য নিয়ে এসেছি। আমরা সেটি প্রধান উপদেষ্টার সমীপে পেশ করেছি। এবং সেই ভিত্তিতে আমরা আলোচনা করেছি। তার একটি সারাংশ তুলে ধরতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি প্রথম থেকেই একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নির্বাচনী রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। আপনারা জানেন আমরা এটি প্রকাশ্যে দাবি করে আসছি।’
Advertisement
উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি তুলে ধরে মোশাররফ বলেন, ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি।’
আরও পড়ুন
আমরা অপেক্ষা করবো, বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ প্রধান উপদেষ্টার কাছে দুই বিষয়ে রোডম্যাপ চেয়েছে জামায়াত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে যমুনায় এনসিপি নেতারাতিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে পারিবারিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী। সেজন্য আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি সবচেয়ে বেশি বিএনপির। এই বিচার প্রক্রিয়া কোনোভাবে অসম্পন্ন থেকে গেলে বিএনপি সরকারের দায়িত্বে গেলে তা স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা হবে।’
দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দিয়ে মোশাররফ বলেন, ‘নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে যে, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা। যে কোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি আবার স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর দায় বর্তমান সরকার এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে।’
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ইস্যুতে মোশাররফ বলেন, ‘সম্প্রতি নানা গুজব আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলেছি যে, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি, বরং প্রথম দিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ বলেন, ‘আমাদের আলোচনার মধ্যে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন-মূলত এই তিনটি বিষয় আছে। আমরা বলেছি একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ সংস্কার চলমান বিষয়। এটা চলতেই থাকবে। আমরা আশা করেছি এই সরকার সবার সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব দেবে এবং তা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে। আর ভবিষ্যতে জনগণ যদি আমাদের ক্ষমতায় বসায়, আমরা সেই সংস্কার বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেবো।
‘আর বিচারব্যবস্থা স্বাধীন, এটাও কোনো নির্দিষ্ট দিন-তারিখ দিয়ে ঠিক করা যায় না। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ তৃণমূল পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি বিক্ষুব্ধ। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বিচার চাই। আমরা তো বিচারের পক্ষেই।’
নির্বাচনী রোডম্যাপ বিষয়ে কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এরকম কথা হয় নাই। উনি স্পেসিফিক কিছু জানান নাই। আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। হয়তো ওনারা প্রেসের মাধ্যমে জানাবেন। সেজন্য আমরা অপেক্ষা করব।’
বৈঠক নিয়ে বিএনপি সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘এখনই প্রতিক্রিয়া জানানোর দরকার নাই। ওনারা প্রেস সেকশন থেকে কী বলেন, সেটা আগে শুনি। তারপর প্রতিক্রিয়া দেবো।’
এ সময় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মূলত সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন-এই তিনটার ওপর আলোচনা হয়েছে। সংস্কারের ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার এবং ওনারাও একমত হয়েছেন যে সংস্কার ঐক্যমতের ভিত্তিতে সম্পন্ন হবে এবং তা খুব দ্রুত করা সম্ভব। বিচারব্যবস্থা বিচার বিভাগ করবে এবং বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে দ্বিমত নেই। ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব-এ আলোচনাও হয়েছে।’
উপদেষ্টাদের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও দুজন ছাত্র উপদেষ্টা, যাদের কারণে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তাদের বাদ দেওয়ার জন্য লিখিত দিয়েছি, মুখেও বলেছি।’
এই বিষয়ে সরকার কোনো আশ্বাস দিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা বলেছেন, তারা দেখবেন। আমরা আমাদেরটা বলেছি।’
কেএইচ/জেএইচ/এমএইচআর/ইএ/জেআইএম