অর্থনীতি

পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ডিএসইর প্রধান সূচক

পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ডিএসইর প্রধান সূচক

পতনের বৃত্ত থেকে কিছুতেই বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। মাঝে মধ্যে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও পরবর্তীতেই আবার টানা দরপতন হচ্ছে। এমন অব্যাহত দরপতনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে।

Advertisement

শনিবার (২৪ মে) ডিএসই এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনের অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। ফলে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।

২০১৯ সালের শেষদিকে মহামারি করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারিতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। জনজীবনের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় ২০২০ সালের মার্চে।

এরপর দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন শুরু হয়। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে, টানা ৬৬ দিন শেয়ারবাজার বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটে। করোনা মহামারির সময় দেশের শেয়ারবাজারে যেমন ভয়াবহ দরপতন দেখা গিয়েছিল, এখন আবার সেই ধরনের ভয়াবহ দরপতন দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

অব্যাহত পতনের মধ্যে শনিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৮ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৪৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ১৯ আগস্টের পর সূচকটি এখন সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক এখন সর্বনিম্ন অবস্থানে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৫৩ পয়েন্টে নেমে গেছে।

দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে মাত্র ৭৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭১টির। আর ৫২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩৬টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৬০টির দাম কমেছে এবং ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ২০টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৫২টির দাম কমেছে এবং ১১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৮টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৯টির এবং ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ২৯টির দাম কমেছে এবং ৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

Advertisement

দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৭৮ কোটি ২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৫৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ২৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অবশ্য আগের কার্যদিবসে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ডিএসইতে গত বছরের ৪ আগস্টের পর সব থেকে কম লেনদেন হয়।

এদিন টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেনে হয়েছে শাহিনপুকুর সিরামিকের শেয়ার। কোম্পানিটির ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকার। আট কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বিচ হ্যাচারি, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল, এনআরবি ব্যাংক, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, সিটি ব্যাংক, ওরিয়ন ইনফিউশন এবং ফু-ওয়াং ফুড।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৫টির এবং ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

এমএএস/এমএএইচ/জেআইএম