ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৭৮ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সিকদার গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী ও ন্যাশনাল ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক মনোয়ারা সিকদারসহ এজাহারনামীয় ১৫ আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। শনিবার (২৪ মে) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন।
Advertisement
দুদকের পক্ষে উপ-পরিচালক জি এম আহসানুল কবীর নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত বাকিরা হলেন- ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উজ্জামান খান, চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল, পরিচালক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি, পরিচালক তওসিফ সাইফুল্লাহ্, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ রইস উদ্দিন, দেশ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হাসান টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্রডওয়ে রিয়েলে এস্টেটের শেয়ার হোল্ডার আরিফ হাসান, ন্যাশনাল ব্যাংকের কোম্পানি সেক্রেটারি ও সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম বুলবুল, একই ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ওয়াদুদ, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোসতাক আহমেদ (সি এম আহমেদ), সাবেক পরিচালক পারভীন হক সিকদার, পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক পরিচালক খলিলুর রহমান, সাবেক পরিচালক মাবরুর হোসেন ও সাবেক সাব রেজিস্টার মো. রজব আলী।
নিষেধাজ্ঞার আবেদনে বলা হয়, ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখা থেকে ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নামে পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৬২ কোটি টাকা নগদে উত্তোলনের ব্যবস্থা করে ঋণের উদ্দেশ্য বহির্ভূত খাতে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে ঋণের আসল ৪৯০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
Advertisement
গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনাদায়ে সুদ ও অন্যান্য চার্জ বাবদ প্রাপ্য ১৭৮ কোটি ৮৯ লাখ ১১ হাজার ৪১২ টাকা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি সাধন করার অপরাধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। মামলার এজাহার নামীয় আসামিরা দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন মর্মে বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সিকদার পরিবার ও দেশ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের কতিপয় কর্মচারীর নামে ভুয়া তথ্য দিয়ে ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামের একটি কাগুজে ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত করেন। এ কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিতে ১৬ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখায় ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নামে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন।
প্রকল্পের জমি কোম্পানির নিজস্ব জমি না হওয়া সত্ত্বেও নিজস্ব জমি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে একই ব্যাংকের শাখা থেকে হাসান টেলিকম লিমিটেডের নামে গৃহীত ঋণের মর্টগেজ করা সম্পত্তির তথ্য গোপন করে তা মর্টগেজ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে ব্যাংকিং নীতিমালা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংকের নির্বাহী ও কিছু অসৎ কর্মকর্তার সহযোগিতায় অবৈধভাবে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর ও তা উত্তোলন করে ভিন্ন খাতে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে ঋণের আসল ৪৯০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনাদায়ে সুদ ও অন্যান্য চার্জ বাবদ ১৭৮ কোটি ৮৯ লাখ ১১ হাজার ৪১২ টাকা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি সাধন করেন। এতে তারা দণ্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এসব অপরাধে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Advertisement
এমআইএন/এমআইএইচএস/এমএস