দিনাজপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণের ৩২ বছরেও সংস্কার না হওয়ায় বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিক, চালক ও ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। টার্মিনালের মূল চত্বর ব্যবহার করতে না পারায় বাধ্য হয়ে প্রধান সড়কে যাত্রী ওঠানামা করতে হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে অপ্রীতিকর বিভিন্ন ঘটনা।
Advertisement
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, ১৯৯৩ সালে দিনাজপুর শহরের মির্জাপুর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৩ সালে উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সংস্কার হয়নি এটির। দীর্ঘ ৩২ বছরে কোনো মেরামত বা সংস্কার না হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে করে যেখানেই বাসগুলো ধোয়া-মোছার জন্য পানি ব্যবহার করা হয় সেখানেই পানি জমে যায়। সামান্য বৃষ্টিতেই টার্মিনালে পানি জমে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
যাত্রীদের জন্য নেই টয়লেট কিংবা বসার কোনো ব্যবস্থা। এতে করে যানবাহন চলাচল ও যাত্রী ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটছে। যাত্রী বিশ্রামাগারের ছাদ ও দেয়ালের আস্তরণ খসে পড়ছে। ধরেছে শ্যাওলা। জানালা দরজাগুলোও ভাঙা। খানাখন্দকে ভরা টার্মিনালটিতে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাও নেই। পূর্বপাশে একটি পুকুর থাকলেও সেখানে পানি যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।
উপশহর ২নং ব্লকের মনিকা রায় টার্মিনালে এসেছিলেন বাসে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে যেতে। তিনি বলেন, সঙ্গে ব্যাগ ও কিছু জিনিসপত্র রয়েছে। কিন্তু অটোরিকশা নিয়ে টার্মিনালের ভেতরে ঢুককে পারিনি। খানাখন্দের কারণে অটোর চালক ভেতরে ঢুকতে চায়নি। এতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
Advertisement
শ্রমিকদের অভিযোগ, টার্মিনালে বসার জায়গা কম, বিশ্রামের কোনো সুব্যবস্থা নেই, টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী। যাত্রীদের বসার চেয়ারগুলোও ভেঙে গেছে। বহুবার পৌরসভার কাছে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অথচ পৌরসভার সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা পরিশোধ করা হয় নিয়মিতভাবে।
হালিম বাবু নামে এক বাসচালক বলেন, প্রায় সময় যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল থেকে বাস নিয়ে বের হওয়ার সময় খানাখন্দকে পড়ে গাড়ির স্প্রিং ও পাত ভেঙে যায়। ফলে আর ট্রিপ মারতে পারি না। অনেক সময় যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হয়। এতে করে আমরা যেমন বিড়ম্বনায় পড়ি, তেমনি যাত্রীরাও হয়রানিতে পড়েন।
দিনাজপুর মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ১৯৯৩ সালে বেগম খালেদা জিয়া দিনাজপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করেন। এরপর ৩২ বছরেও কোনো সংস্কার হয়নি। পতিত সরকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক হিংসা পরায়ণ হয়ে টার্মিনালটির কোনো উন্নয়ন হতে দেয়নি। অবহেলা অযত্নে পড়ে থাকায় এই টার্মিনালটি এখন মাদক ক্রেতা বিক্রেতাদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা হলেই এখানে মাদক বিক্রি ও সেবন হয়ে থাকে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করা না হলে আমরা বাস চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো। আমরা বাস টার্মিনালটি সংস্কারে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসকসহ পৌর প্রশাসকের দৃষ্টি কামনা করছি।
পৌরসভার প্রশাসক ডিডিএলজি মো. রিয়াজ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পুরোপুরি অবগত আছি, এরইমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সংস্কার হবে। আরইউটিডি প্রকল্পের আওতায় এলে উন্নয়ন কাজ করা হবে। দিনাজপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীণ রুটে চার শতাধিক বাস চলাচল করে।
Advertisement
এফএ/এমএস