ক্যাম্পাস

মাদক-বিশৃঙ্খলায় বেসামাল শেকৃবি

মাদক-বিশৃঙ্খলায় বেসামাল শেকৃবি

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) এখন মাদকের ছড়াছড়ি। বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। এতে জড়িয়ে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হ‌ওয়া শিক্ষার্থীরাও। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথাযথ ‘তদারকি ও বিচারহীনতাই’ এজন্য দায়ী বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, গত কয়েক মাসে বেশ কিছু র‍্যাগিংয়ের ঘটনা, রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ মাদকের একাধিক ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সন্ধ্যা নামলেই ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ও আবাসিক হলের ছাদে বসছে মাদকের আসর। বিজয়-২৪ হলের নির্দিষ্ট কিছু ফ্লোর, ‘এ’ ও ‘বি’ ব্লকের ছাদ, কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল, শেরেবাংলা হল এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলা হলের ছাদসহ বেশ কিছু কক্ষে নিয়মিত চলে মাদক সেবন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ও গবেষণা মাঠেও নিয়মিত বসছে মাদকের আসর। ছুটির দিনগুলোতে আসছেন বহিরাগত মাদকসেবীরাও। সব মিলিয়ে মাদকের ছড়াছড়িতে অস্বস্তিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন শেকৃবির নবাব হলে মাদকসহ ৫ জন আটক শেকৃবি ক্যাম্পাস যেন মাদকের ‘হটস্পট’ শেকৃবির গবেষণার মাঠ যেন মাদকের ‘আড্ডাখানা’

শুধু শিক্ষার্থী কিংবা বহিরাগতরাই নন, ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধেও মাদকসেবনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম এলাকায় অবস্থানরত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই এলাকায়ও নিয়মিত মাদকের আসর বসে। তাদের অভিযোগ, এসব কার্যকলাপে কয়েকজন কর্মচারীর সম্পৃক্ততা রয়েছে।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ও গবেষণা মাঠেও নিয়মিত বসছে মাদকের আসর। ছুটির দিনগুলোতে আসছেন বহিরাগত মাদকসেবীরাও। সব মিলিয়ে মাদকের ছড়াছড়িতে অস্বস্তিতে পড়ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে জানান, ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরের বেশ কিছু এজেন্টের মাধ্যমে মাদকের সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক দিন দিনই খুব সহজলভ্য হয়ে পড়ছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসে সরবরাহ করা মাদকের অধিকাংশ‌ই আসছে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প, আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজার ও বাণিজ্যমেলার মাঠের আশপাশের এলাকা থেকে।

এর আগে অভিযান চালিয়ে বহিরাগতসহ মাদক সেবনরত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আটক করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে জানান, প্রশাসন স্বপ্রণোদিত হয়ে কখনো অভিযান চালান না। শিক্ষার্থীরা ফোনে খবর দিলেই শুধু তারা আসেন। অনেক সময় খবর পেয়েও আসেন না। আবার হাতেনাতে ধরলেও সবসময় ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

Advertisement

গত ৯ মে রাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, পাল্টাপাল্টি মিছিল ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এক পক্ষ এটিকে ‘বোমাবাজি’, অন্য পক্ষ ‘ককটেল বিস্ফোরণ’ বলে দাবি করে। তবে এ নিয়ে এখনো কোনো তদন্ত কমিটি গঠন বা পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মাদকের বিস্তার থামাতে আমরা নিয়মিত টহল কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছি। তবে আমাদেরও তো ফ্যামিলি লাইফ আছে। মাঝরাতে ফোন করলে সবসময় যাওয়া সম্ভব হয় না।- প্রক্টর ড. আরফান আলী

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে র‍্যাগিং চলাকালে শিক্ষার্থীরা প্রক্টর‌ ও ছাত্র পরামর্শককে ফোনে না পেয়ে সরাসরি উপাচার্যকে অবহিত করেন। রাত পৌনে ২টার দিকে উপাচার্য ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেন।

এর প্রায় দুই মাস পর গত ২১ এপ্রিল এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদের এক শ্রেণিকক্ষে জুনিয়রদের ফোন বন্ধ করে সিনিয়ররা ব্যাগিং দিচ্ছে- এমন অভিযোগ পেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র পরামর্শক উপস্থিত হয়ে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করেন।

আরও পড়ুন মাদক সম্পৃক্ততায় কুবির ৫ শিক্ষার্থী বহিষ্কার ক্যাম্পাসে বসে মাদক সেবন, নারীসহ চারজন ধরা

এ ঘটনায় অনুষদভিত্তিক ছাত্র সংগঠন জড়িতদের তদন্তের দাবি করে বিবৃতিও দেয়। দুটি ঘটনায়ই তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্তু একটি ঘটনায় তিন মাস ও অন্যটিতে এক মাস পার হলেও কাউকে শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। ভুক্তভোগীরা এখন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, বিচারহীনতার কারণেই ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন এসব ঘটনা বাড়ছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আরফান আলী জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রদলের মিছিলে বিস্ফোরণ সম্পর্কে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে তাদের উভয় পক্ষকে ডেকে সতর্ক করেছি, যেন পরবর্তীসময়ে এমন ঘটনা আর না ঘটে। আর মাদকের বিস্তার থামাতে আমরা নিয়মিত টহল কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছি। তবে আমাদেরও তো ফ্যামিলি লাইফ আছে। মাঝরাতে ফোন করলে সবসময় যাওয়া সম্ভব হয় না।

র‍্যাগিং বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে। প্রতিবেদন হলে শৃঙ্খলা বোর্ডের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

সাইদ আহম্মদ/এমকেআর/এএসএম