জাতীয়

দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণা

দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণা

অভিন্ন চাকরি বিধি বাস্তবায়ন, হয়রানি বন্ধ, মামলা প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবিতে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

Advertisement

দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ সেবা সচল রেখে কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন।

শুক্রবার (২৩ মে) রাতে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই বার্তা দেওয়া হয়।

বার্তায় বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারী আরইবি-পবিস অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং জরুরি সেবায় সব চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তৎকালীন সরকার কমিটি গঠন করলেও আরইবি সংস্কার কাজ বাধাগ্রস্ত করে আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ২৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকেবিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত, মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার-রিমান্ড-কারাবন্দি করে এবং শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীকে বরখাস্ত করে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করে।

Advertisement

বার্তায় বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের অক্টোবর মাসে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের খসড়ায় আরইবি-পবিস সংস্কারের বিকল্প তিনটি মডেল প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৮ মাসেও কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি।

এছাড়া সম্প্রতি জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২৫ এর প্রস্তাব ‘এক ও অভিন্ন চাকরিবিধির মাধ্যমে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য জানানো হয়।

বার্তায় জানানো হয়, বিদ্যমান সংকট নিরসনে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ বিভাগকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে দফায় দফায়গণস্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি প্রদান এবং আলোচনার সুযোগ চাওয়া হলেও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। অন্যদিকে আরইবি কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের প্রমাণ পেয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেসরকারের সহযোগিতা চেয়েও সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ তথা সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় গত ২১ মে থেকে বিদ্যুৎ সেবা চালু রেখে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।

বার্তায় বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আরইবি আগের মতো সরকারের কাছে ভুল বার্তা দিয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য চাকরিচ্যুতি ও বিভিন্ন শাস্তির হুমকি, জোরপূর্বক সমিতির জিএমদের নিকট থেকে ভিডিও বার্তা ও আন্দোলনের বিপরীতে ব্যানার নিয়ে ছবি শেয়ারের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে বিদ্যুৎ সেবা চালু রাখার জন্য সমিতিতে যে সকল জনবল রয়েছে তারাও আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়েছে। পরিতাপের বিষয় হলো, বিদ্যুৎ সেবা চালু রেখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের পরও মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে আরইবির মাঠ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সমিতির কর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও হামলা করা হচ্ছে। এসব ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় বার্তায়।

Advertisement

একই সাথে আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণসহ বিদ্যমান সংকট নিরসনে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করা হয় বার্তায়।

দাবিগুলো হলো—

১. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন-পীড়নের মাধ্যমে কর্মপরিবেশ অস্থিতিশীলকারী, অত্যাচারী আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণ।

২. এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ অথবা দেশের অন্যান্য বিতরণ সংস্থার ন্যায় পুনর্গঠন।

৩. মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার, লাইন শ্রমিক এবং পৌষ্য কর্মীদের চাকরি নিয়মিতকরণ।

৪. মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল।

৫. গ্রাহক সেবার স্বার্থে লাইনক্রুসহ সব হয়রানি ও শাস্তিমূলক বদলি আদেশ বাতিল এবং বরখাস্ত ও সংযুক্ত কর্মীদের অবিলম্বে পদায়ন করতে হবে।

৬. জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা/শিফটিং ডিউটি বাস্তবায়নের জন্য অতিদ্রুত জনবলের ঘাটতি পূরণ করতে হবে।

৭. পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড গঠন করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড একীভূত করে অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং অনিয়মিতদের নিয়মিত করণসহ দুই দফা দাবিতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী।

এনএস/এমআরএম