খেলাধুলা

‘জাতীয় দল থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিতে চেয়েছিলাম’

‘জাতীয় দল থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিতে চেয়েছিলাম’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়েছিলেন পেশাদার ফুটবলে খেলার লক্ষ্য নিয়ে। দশ বছরের অধিক সময় ধরে খেলছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। দেশের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা এবার থামলেন। জাতীয় দলের পর্বটা শেষ হয়েছে বছর চারেক আগেই। তারপরও চালিয়ে যাচ্ছিলেন ক্লাব ফুটবল।

Advertisement

অবশেষে আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে আবেগময় ফুটবলে খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানলেন রানা। সর্বশেষ বাদার্স ইউনিয়নের জার্সিতে খেলা এ গোলরক্ষকের জাতীয় দল থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেওয়া হয়নি। নিতে চেয়েও পারেননি নানা কারণে।

মোহামেডানের জার্সিতে ক্লাব ফুটবলে অভিষেক হওয়ার পর আশরাফুল ইসলাম রানা পরবর্তীতে খেলেছেন চট্টগ্রাম আবাহনী, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও বর্তমানে ব্রাদার্স ইউনিয়নে। সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের জার্সিতে। আবাহনীতে খেলা হয়নি তাঁর। বসুন্ধরা কিংসে একবার যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত যাননি। জাতীয় দলের জার্সিতে ম্যাচ খেলেছেন ২৫টি।

বুট-জার্সি খুলে ফেলে জাগো নিউজের কাছে এক সাক্ষাৎকারে ক্যারিয়ারের আদ্যপান্ত জানালেন আশরাফুল ইসলাম রানা। প্রশ্ন : একটা আভাস ছিল খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানবেন। শেষ পর্যন্ত সেই আভাসকেই বাস্তবতায় রূপ দিলেন?

Advertisement

আশরাফুল রানা : আগেই বলেছিলেন ২০২৪-২৫ মৌসুমেই আমি খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নিতে চাই। তারপর আমি নিজেকে কোচিং পেশায় নিয়োজিত করবো। আমি নতুন নতুন গোলরক্ষক তৈরি করতে চাই। কোচিং পেশায় যোগ দেওয়ার এবং দেশের নতুন নতুন গোলরক্ষক তৈরির লক্ষ্যেই আমি খেলা ছেড়ে দিলাম। প্রশ্ন : জাতীয় দল থেকে আনুষ্ঠানিক অবসরে যাবেন এমন আভাস আপনি দিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। শেষ পর্যন্ত নিরবেই শেষ হলো লাল-সবুজ জার্সির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ। আপসোস আছে কোনো?

আশরাফুল রানা : ওই সময় অবসর নিলে সেটা আনুষ্ঠানিকভাবেই হতো। কোচরা আমাকে তখন অবসরে যেতে নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, কয়েক মাস বা সর্বোচ্চ এক বছর খেলে যেন অবসরে যাই। মাসুদ কায়সার ভাই, হাসান আলম মামুন ভাই এবং বিপ্লবরা তখন সহকারী কোচ ছিলেন। তাঁরাও জানতেন বিষয়গুলো। তবে প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা তখন সম্মতি দেননি আমাকে অবসরে যাওয়ার। সে সময় আমাকে না আটকালে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরটা হয়ে যেতো। প্রশ্ন : তখন কী মনে করে অবসরে যেতে চেয়েছিলেন এবং কোচ ক্যাবরেরাকে কী বলেছিলেন?

আশরাফুল রানা : তখন আমি কোচকে (হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা) বলেছিলাম, যেহেতু আনিসুর রহমান জিকো খেলতেছে তাই আমি অবসরে যেতে চাই। আমার তখন মনে হয়েছিল ওই পরিস্থিতিতে জুনিয়র গোলরক্ষকদের সুযোগ দেওয়া উচিত। কারণ, আমি তখন জাতীয় দলের খেলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। সুযোগ না পেলে দলে থেকে লাভ নেই ভেবেই অবসর নেওয়ার ইচ্ছার কথা বলেছিলাম। প্রশ্ন : আনুষ্ঠানিক অবসর হয়নি। তাহলে কোন ম্যাচটি আপনার জাতীয় দলের হয়ে শেষ ছিল?

আশরাফুল রানা : ২০২১ সালে যে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছিল মালদ্বীপে, সেখানেই। নেপালের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ ছিল আমাদের। ৭৯ মিনিটে আনিসুর রহমান জিকো লালকার্ড পাওয়ার পর কোচ আমাকে মাঠে নামিয়েছিলেন বিপলু আহমেদকে বসিয়ে। বাকি সময়টুকু খেলেছিলাম। মালেতেই আমার শেষ ম্যাচ ছিল জাতীয় দলের জার্সিতে। তারপর থেকে আর জাতীয় দলের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই। প্রশ্ন : ক্লাব ক্যারিয়ারের শুরুটা কীভাবে ছিল?

Advertisement

আশরাফুল রানা : ২০১৪ সালে মোহামেডান দিয়ে শুরু আমার ক্লাব ক্যারিয়ার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ছেড়ে আমি যোগ দিয়েছিলাম দেশের অন্যতম সেরা ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাবে। এখন পর্যন্ত চলছে, আলহামদুলিল্লাহ। দেশের বড় বড় ক্লাবে খেলেছি। শুধু আবাহনীতে খেলা হয়নি। বসুন্ধরা কিংসে যাওয়ার সুযোগ ছিল। তবে তখন আমার মনে হয়েছিল শেখ রাসেল সেরা দল ছিল তাই সেখানেই থেকে যাই। প্রশ্ন : অনেক ফুটবলার বিদায়বেলায় আপসোসের কথা বলেন। অনেক অতৃপ্তির কথা বলেন। আপনার কোনো আপসোস বা অতৃপ্তি আছে কি? ফুটবল থেকে আরো কিছু চাওয়া বা পাওয়ার ছিল আপনার?

আশরাফুল রানা : না। ফুটবল থেকে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে লাখো-কোটি শুকরিয়া যে, এ পর্যন্ত ফুটবল থেকে যা পেয়েছি তাতে আমি খুবই খুশি।

প্রশ্ন : কোনো অতৃপ্তি আছে কি?

আশরাফুল রানা : হ্যাঁ, একটা অতৃপ্তি আছে আমার। আমাদের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল। সেভাবে রেজাল্ট দিতে পারিনি। বিশেষ করে র্যাংকিংয়ের কথা বলবো। আমার একটা প্রত্যাশা ছিল অবসরের আগে যেন র্যাংকিং ১৬৫ থেকে ১৭০ এর মধ্যে থাকে। দুর্ভাগ্য আমার সময়ে হয়নি। আশা করবো এখন তরুণ যারা আছেন তারা দেশের ফুটবল এগিয়ে নেওয়া চেষ্টা করবে। প্রশ্ন : নতুনদের জন্য আপনার কী বার্তা থাকবে?

আশরাফুল রানা : আমরা র্যাংকিংয়ে দেশটাকে প্রত্যাশানুযায়ী নিতে পারিনি। এখন যারা খেলছেন এবং আগামীতে যারা খেলবেন তাদের প্রতি আমার শুভকামনা থাকবে। তারা যেন নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দিয়ে দেশের ফুটবলকে যেন অনেক ওপরে তুলতে পারেন। প্রশ্ন : আপনি যখন মোহামেডানে আসলেন তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে এসেছিলেন তাই না?

আশরাফুল রানা : হ্যাঁ। আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করতাম। সেখান থেকে সরাসরি মোহামেডানে যোগ দেই। শুধুমাত্র প্রফেশনাল ফুটবলে খেলার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়েছিলাম। প্রশ্ন : ঘরোয়া ফুটবলে বেশিরভাগ বড় ক্লাবে খেলেছেন। একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্লাব ফুটবলে এসেছিলেন। সেই চ্যালেঞ্জ নিশ্চয়ই জয় করেছেন?

আশরাফুল রানা : আগেই বলেছি ওভার-অল ফুটবলেই আমি খুশি। ওই সময় একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেনাবাহিনী থেকে বেরিয়ে যোগ দিয়েছিলাম মোহামেডানে। আমার নিজের ওপর আস্থা ছিল। আল্লাহর রহমতও ছিল। প্রশ্ন : সেনাবাহিনীর মতো প্রতিষ্ঠান থেকে মোহামেডানে। ওই শুরুর সময়ে ক্লাবের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যা ছিল কি?

আশরাফুল রানা : ওই সময় মোহামেডানের কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে খেলোয়াড়-সবাই আমাকে সাপোর্ট করেছে। গোলরক্ষক কোচ ছিলেন নয়ন ভাই। আমার অনেক কিছুরই ঘাটতি ছিল তখন। সবাই সবক্ষেত্রে আমাকে সহায়তা করেছেন।

আরআই/এমএইচ/এএসএম