ধর্ম

মক্কার ঐতিহাসিক ১০ মসজিদ

মক্কার ঐতিহাসিক ১০ মসজিদ

মওলবি আশরাফ

Advertisement

মক্কা মুকাররমা ইসলামের পবিত্রতম নগরী, যেখানে প্রতিটি পাথর, প্রতিটি অলিগলি ইসলামি ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সাক্ষী। এই নগরীর কেন্দ্রে রয়েছে কাবা ও মসজিদুল হারাম যা মুসলিম বিশ্বের কিবলা ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্রবিন্দু। রয়েছে আরও বেশ কিছু ঐতিহাসিক মসজিদ—যেগুলো ইসলামের প্রাথমিক যুগের স্মৃতি বহন করে। হজের আগে বা পরে সময় থাকলে এই মসজিদগুলো দেখতে যাওয়া, প্রতিটি মসজিদের ইতিহাসের সাথে পরিচিতি হওয়া আপনার হজযাত্রাকে আরও তাৎপর্যময় করে তুলতে পারে। এখানে আমরা মক্কার ১০টি মসজিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরছি:

১. মসজিদে হারামকাবা শরিফকে ঘিরে থাকা মসজিদটিই কোরআনের ভাষায় মসজিদে হারাম। হজ ও ওমরাহ পালনের কেন্দ্রস্থল এই মসজিদ। এই মসজিদ প্রথম নির্মাণ করেন হযরত ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)। এরপর বিভিন্ন যুগে বহুবার এই মসজিদের সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ হয়েছে। বর্তমান রূপে এটি বিশ্বের অন্যতম সর্ববৃহৎ মসজিদ, যেখানে একসাথে কয়েক লক্ষ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

২. মসজিদে নামিরাহএই মসজিদটি আরাফার ময়দানে অবস্থিত। রাসুল (সা.) বিদায় হজের সময় এখানে ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করেন। ৯ জিলহজ এই মসজিদ থেকে হজের খুতবা দেওয়া হয়। মসজিদটিতে লক্ষাধিক মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির নির্মাণকাল জানা যায় না, ধারণা করা হয় হিজরি দ্বিতীয় শতকের মাঝামাঝি, আব্বাসি আমলে প্রথম নির্মাণ করা হয়, এরপর কয়েক দফা পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করার পর বর্তমান রূপ পায়।

Advertisement

৩. মসজিদে জিনএর অবস্থান জান্নাতুল মুয়াল্লার কাছাকাছি। কোরআনের সুরা জিন (আয়াত ১-২) অনুযায়ী একদল জিন এখানে রসুলের (সা.) কাছে কোরআন তেলাওয়াত শুনে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এই ঘটনার স্মরণে তৃতীয় হিজরি শতকে মসজিদটি নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ইবরাহিম বেগ ১১১২ হিজরিতে মসজিদটি পুনরায় নির্মাণ করেন।

৪. মসজিদে বাইয়াতমিনা এলাকায় জামরাতের কাছে এর অবস্থান। নবুয়তের দ্বাদশ বছরে মদিনার একদল সাহাবি রসুল (স)-এর হাতে বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করেন। পরের বছর একই স্থানে একটি বড় দল বাইয়াত গ্রহণ করে রাসুলকে (সা.) মদিনায় হিজরতের অনুরোধ করেন। ইসলামের ইতিহাসে যা আকাবার শপথ নামে বিখ্যাত। ১৪৪ হিজরিতে খলিফা আবু জাফর মনসুর এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।

৫. মসজিদে জিরানামসজিদটি মক্কা থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার উত্তর পূর্বাংশে তায়েফের দিকে অবস্থিত। এটি নির্মিত হয় রাসুলের (সা.) জীবদ্দশায়। ৮ম হিজরিতে হুনাইন যুদ্ধের পর রাসুল (সা.) এই জায়গা থেকে ইহরাম বেঁধে ওমরাহ পালন করেছিলেন।

৬. মসজিদে আয়েশামক্কা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে তানঈম এলাকায় এর অবস্থান। এটি মিকাত (ইহরাম বাঁধার স্থান) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই মসজিদের নাম হযরত আয়েশার (রা.) নামে রাখা হয়েছে কারণ তিনি এই জায়গায় ইহরাম বেঁধেছিলেন। আব্বাসি খলিফা আল মুতাওয়াক্কিলের আমলে ২৪০ হিজরিতে এই মসজিদটি নির্মিত হয়।

Advertisement

৭. মসজিদে মাশআরে হারামমুজদালিফায় অবস্থিত। হজের সময় হাজিরা এখানে রাত্রিযাপন করেন এবং কংকর সংগ্রহ করেন। রাসুল (সা.) এখানে হজের সময় অবস্থান করেছিলেন। এই জায়গার কথা কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। মসজিদটির প্রাথমিক নির্মাণ রাসুলের (সা.) সময়কালেই হয়।

৮. মসজিদে হুদাইবিয়ামসজিদে হারাম থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ৬ষ্ঠ হিজরিতে এখানে হোদায়বিয়ার সন্ধি হয়। এই জায়গায় দুটো মসজিদ আছে, একটি পুরাতন, অন্যটি নতুন। দুটো মসজিদকেই মসজিদে হোদায়বিয়া বলা হয়। তবে নতুন মসজিদটিকে অনেকে ‘মসজিদে শুমাইসি’-ও বলে। মসজিদটি মিকাত (ইহরাম বাঁধার স্থান) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৯. মসজিদে ইজাবা

এই মসজিদটি মক্কা নগরীর মাআবাদা এলাকায় অবস্থিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) এখানে মাগরিবের নামাজ আদায় করেছিলেন বলে বর্ণিত আছে। ধারণা করা হয়, মসজিদটি হিজরি তৃতীয় শতকে নির্মিত হয়। সর্বশেষ মূল কাঠামো ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হয় ১৩৯৪ হিজরিতে। আধুনিক নকশায় নির্মিত মসজিদটির আয়তন বর্তমানে প্রায় ৪০০ বর্গমিটার।

১০. মসজিদে খাইফ

মিনার দক্ষিণে ছোট জামরার কাছে এই মসজিদটির অবস্থান। এটি ছিল রাসুলের (সা.) নামাজের স্থান। সাহাবায়ে কেরামও এই জায়গায় বিশেষভাবে নামাজ পড়তেন বলে জানা যায়। যুগে যুগে মুসলিম শাসকরা মসজিদটি সংস্কার ও সম্প্রসারণ করেছেন। সর্বশেষ বড় সংস্কার হয় ১৪০৭ হিজরি (১৯৮৭ খ্রি.) সালে। ওএফএফ/জিকেএস