জাতীয়

জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট চাপে বিপন্ন হচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য

জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট চাপে বিপন্ন হচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য

বাংলাদেশের প্রাণবৈচিত্র্য এখন চরম সংকটে। শহর থেকে গ্রাম, বন থেকে নদী— প্রতিটি পরিবেশেই ধ্বংসের ছাপ স্পষ্ট। উন্নয়নের নামে অবকাঠামো গড়ে তোলা, পরিকল্পনাহীন কৃষি, শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য। আজ ২২ মে, বিশ্ব প্রাণবৈচিত্র্য দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের বর্তমান প্রাণবৈচিত্র্যের অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজের (বারসিক) পরিচালক এবং প্রাণ ও প্রকৃতিবিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক রায়হান আহমেদ।

Advertisement

জাগো নিউজ: বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাণবৈচিত্র্যের অবস্থা কেমন?

পাভেল পার্থ: শুরুতেই বলবো প্রাণবৈচিত্র্যের অবস্থা ভালো নয়। বাংলাদেশে মৌমাছি থেকে শুরু করে হাতি পর্যন্ত কোনো প্রজাতির প্রাণীর জীবন সুরক্ষিত নয়, অর্থাৎ নিরাপদ জীবন নেই। তার খাদ্য উৎস নিশ্চিত নয়। প্রাণীর বিচরণ অঞ্চলও নিশ্চিত করা হয়নি।

তীব্র তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ, বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি- এ সবকিছুই প্রাণী ও প্রাণের ক্ষতি করে। তখন সঠিক পরাগায়ন হয় না। অন্যদিকে, অতিমাত্রায় দুর্যোগ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বায়ু ও শব্দদূষণ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করছে। এসব কারণে প্রাণবৈচিত্র্যের খাদ্য ও অক্সিজেন সংকট হচ্ছে

Advertisement

দেশে শুধু প্রতি বছর একটা করে প্রাণীর জরিপ করা হয়। একটা বাঘ শুমারি থেকে শুধু বাঘের অবস্থাই জানা যায়। সব প্রাণী নিয়ে করা হয় না। প্রাণবৈচিত্র‍্যের প্রাকৃতিক অঞ্চলও এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া প্রাকৃতিক বন, জলাভূমি, খাল, বিল, হাওর, বাঁওড়, দ্বীপও এখন ঝুঁকিতে। শহর-নগর মিলিয়ে সবখানে প্রাণবৈচিত্র‍্য অনেক সংকটের মুখে।

জাগো নিউজ: ঢাকায় প্রাণবৈচিত্র্যের অবস্থা কেমন?

পাভেল পার্থ: নগরের প্রাণবৈচিত্র্য আরও বেশি ঝুঁকিতে। ঢাকায় গত ১০ বছর আগেও টিকে থাকা বেজি, বানর, ব্যাঙ, বুলবুলি, শালিক, টিয়া পাখি এসব এখন দুর্লভ। বাদুর-চামচিকাও নেই। নেই প্রজাপতি ও মৌমাছি। ঢাকার জলাভূমি দিন দিন ভরাট হচ্ছে, ২৫টি খাল উধাও, নদী বিষাক্ত, জলজ প্রাণবৈচিত্র্য অনেক হুমকির মুখে। পার্ক ধ্বংস আর গাছ নিধনের কারণে উদ্ভিদ হারিয়ে যাচ্ছে। মোট কথা প্রাণী থেকে শুরু করে যত ধরনের প্রাণবৈচিত্র্য সবই বিশেষ ঝুঁকিতে।

জাগো নিউজ: দেশে প্রাণবৈচিত্র্য হ্রাসের প্রধান কারণগুলো কী কী বলে আপনি মনে করেন?

Advertisement

পাভেল পার্থ: প্রাণবৈচিত্র্য হ্রাসের বহুমুখী কারণ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো, দেশের রাষ্ট্রীয় আইনে যেসব বিভাগ প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সেই বিভাগ ও দপ্তরগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এটি শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। যেমন- শিল্প মন্ত্রণালয় যখন অপরিকল্পিত গার্মেন্টসের অনুমোদন দেয়, তখন তার বর্জ্য ওই এলাকার প্রাণবৈচিত্র্য ক্ষতি করে।

স্থানীয় মৌয়ালরা জানে, কখন কীভাবে মৌমাছির বাচ্চা রেখে মধুর চাক কাটতে হয়। খীভাবে গোলপাতা কাটতে হয়। তারা জানে কোন মাছ ধরা যাবে না। সরকার যদি জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় জনগণকে গুরুত্ব দেয়, তাদের মতামত গুরুত্ব দেয় তাহলে এটা ফলপ্রসূ হবে। বন্দুক বা বাহাদুরি দিয়ে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করা যায় না

একই ভাবে স্থানীয় সরকার, পানিসম্পদ, সড়ক, কৃষিসহ এসব খাতও সমান দায়ী। কৃষিতে অতিমাত্রা ও অপরিকল্পিত কীটনাশক এবং বিষের কারণে মৌমাছি, প্রজাপতি, ব্যাঙ, শামুক হুমকির মুখে। এই কীটনাশকের কারণে তো দেশীয় নানান প্রজাতির মাছও আজ বিলুপ্তির পথে।

আরও পড়ুন দুর্যোগে বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা দেবে কে? বাঘ কমে যাওয়া সুন্দরবনের বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে ১১টি: জরিপ

প্রাণবৈচিত্র্য হ্রাসের আরেকটি কারণ হলো রাষ্ট্র সমানভাবে সব প্রাণবৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দেয় না। রাষ্ট্র যেভাবে বাঘকে গুরুত্ব দেয়, সেভাবে গুইসাপকে গুরুত্ব দেয় না। যত বেশি হাতি নিয়ে প্রকল্প করছে, তত কম প্রকল্প আছে রানি মাছ রক্ষা নিয়ে। প্রাণবৈচিত্র্য সম্পূর্ণ খাদ্য শৃঙ্খলের বিষয়। একটা ছোট মাছ না থাকলে বড় মাছ বাঁচবে না। তাই প্রকৃতিতে প্রতিটি প্রাণকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

আমাদের আইনেও সমস্যা আছে। বৃহৎ উন্নয়নের জন্য সংবিধানের আইন লঙ্ঘন করে। আর শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, আলোক দূষণ, প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষতি করছে নিয়মিত। আন্তর্জাতিকভাবে বন্যপ্রাণীর পাচারও জীববৈচিত্র্য হ্রাসের অন্যতম কারণ।

জাগো নিউজ: জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে আমাদের দেশের প্রাণী ও উদ্ভিদের ওপর প্রভাব ফেলছে?

পাভেল পার্থ: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র লবণাক্ততা, বরেন্দ্র অঞ্চলে তীব্র খরা, হাওর অঞ্চলে পাহাড়ি ঢল, হঠাৎ বন্যা- এসব কারণে প্রাণের ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিটি উদ্ভিদের তার নিজস্ব তাপমাত্রায় পরাগায়ন হয়। তাই তীব্র তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ, বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি- এ সবকিছুই প্রাণী ও প্রাণের ক্ষতি করে। তাদের তখন সঠিক পরাগায়ন হয় না। অন্যদিকে, অতিমাত্রায় দুর্যোগ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করছে। এসব কারণে প্রাণবৈচিত্র্যের খাদ্য সংকট ও অক্সিজেন সংকট হচ্ছে।

তবে জলবায়ু পরিবর্তন এককভাবে প্রাণবৈচিত্র‍্যের ক্ষতি করছে না। আমাদের পরিবেশগত সংকট, রাসায়নিক দূষণ আর উন্নয়ন- যাবতীয় সংকট জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আমাদের হালদা রক্ষা করতে হবে, কারণ হালদা দ্বিতীয়টি নেই। হাকালুকি লাগবে, কারণ এটিও হটস্পট। টাঙ্গুয়ার হাওর দেশে অদ্বিতীয়। সুন্দরবন একটিই, তাই সেখানে রামপালকে জায়েজ করা যাবে না। কারণ, এগুলোর বিকল্প আর নেই।

জাগো নিউজ: প্রাণী জগতে কোন কোন প্রজাতি বর্তমানে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে?

পাভেল পার্থ: বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রাণী আর সবচেয়ে ছোট প্রাণীটা বেশি ঝুঁকিতে আছে। হাতি বেশি ঝুঁকিতে। কারণ হাতির কোনো আবাসস্থল আমরা নিরাপদ রাখিনি। ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ স্থানে হাতি বেশি থাকে। হাতির বিচরণ অঞ্চল মানুষ আর রাষ্ট্র দখল করেছে। পাহাড়ের পাশে গ্রাম তৈরি হচ্ছে, উন্নয়ন হচ্ছে, বৃহৎ স্থাপনা হচ্ছে, বাগান হচ্ছে। হাতির প্রাকৃতিক খাবার নেই। এ কারণে হাতি লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। তাতে মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে, মানুষ মারা যাচ্ছে এবং হাতিও মারা যাচ্ছে। হাতিকে তাদের প্রাচীন বিচরণভূমি ছেড়ে দিতে হবে।

এছাড়া ইরাবতী ডলফিন, সামুদ্রিক ও পাহাড়ি কচ্ছপ প্রায় বিলুপ্ত। দেশে ভোদড় (উট বিড়াল), বন ছাগল, গোর খোদক প্রাণী, বনরুই, তক্ষক প্রায় বিলুপ্ত। কীটপতঙ্গের মধ্যে বন মৌমাছি, মাকড়সা, সবুজ ব্যাঙ প্রায় বিলুপ্ত। মাছের মধ্যে রানি মাছ, মেনী মাছ, নানিদ মাছ, মহাশোল বিলুপ্তির পথে। গাছের ক্ষেত্রে পারুল, তমাল, চম্পা ফুল খুঁজেই পাওয়া যায় না। বন খেজুর, শাপলা, বুনো কাটা গোলাপ, কাটা বুনো ফল, লুকলুকি, ডেউয়া, কুচ- এসব গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আরও অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ আছে, এ সবই আমাদের বনের বৈশিষ্ট্য এবং পরিবেশের উপযোগী।

জাগো নিউজ: এসব বৈচিত্র্য হ্রাসে প্রাণীর কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে?

পাভেল পার্থ: বনে যদি উদ্ভিদের বৈচিত্র্য না থাকে, তাহলে ওই বনে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ, সরীসৃপ, উভচর প্রাণী ও পাখিদের না খেয়ে থাকতে হবে। এটা একটা চক্র। বিভিন্ন পাখি ও পোকা-মাকড় বিভিন্ন গাছে তাদের বাসা বানায়, আবার বিভিন্ন সাপ বিভিন্ন পাখি ও কীটপতঙ্গ খেয়ে বেঁচে থাকে। যেমন- ধনেশ কাটগাছ ছাড়া বাসা বানায় না, চিল অনেক উঁচু গাছে বাসা বানায়। সুতরাং বনে সব গাছ, উদ্ভিদ, কীটপতঙ্গ ও সব ধরনের প্রাণবৈচিত্র্য থাকা জরুরি। আবার এসব বন ও বাগান অনেকের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম। যেমন- সুন্দরবন ও পাহাড়ি অঞ্চল, সিলেটের হাওর।

জাগো নিউজ: প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের কী দুর্বলতা দেখতে পান?

পাভেল পার্থ: বাংলাদেশের চা বাগানে মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার হয়। বিশেষ করে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার। আবার এসব এলাকা জীববৈচিত্র্যের হটস্পট। এই এলাকার চা বাগানে এমন বিষ ব্যবহার হচ্ছে, যেগুলো সব গিয়ে পড়ছে সিলেটের হাওরগুলোতে। সরকার অবহেলা করছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয় নেই। এটা বড় সমস্যা। হঠাৎ কোনো বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এলে সেটার উদ্ধার ভালোভাবে হচ্ছে না। উদ্ধারের পর সব প্রাণীর রেসকিউ সেন্টার এক রকম নয়, সব প্রাণীকে সব বনে ছাড়া যায় না। এই যে আগ্রাসী প্রজাতির গাছ ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি নিষিদ্ধ করলো, এটা আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

আমাদের নীতি ও আইনের ফাঁক আছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে বলা আছে, প্রাকৃতিক বনভূমি বা প্রাকৃতিক যে কোনো কিছু রক্ষা করতে হবে। কিন্ত অধিগ্রহণ আইনে বলা আছে, সরকার চাইলে যে কোনো কিছু অধিগ্রহণ করতে পারবে। দুটিই কন্টাড্রিক্ট। গাজীপুরে প্রাকৃতিক বন চিড়িয়াখানার মতো বানিয়ে বহু বন্যপ্রাণী হত্যা করা হয়েছে।

জাগো নিউজ: বন্যপ্রাণী রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ কি যথেষ্ট?

পাভেল পার্থ: প্রাণবৈচিত্র্য নিয়ে সরকার বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা করে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। সরকারের জাতীয় বাজেটে নির্দিষ্ট করে প্রাণবৈচিত্র্য বিষয়ক কোনো বাজেট এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। বাজেট বরাদ্দ হয় মন্ত্রণালয়ের জন্য, সেখানে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেগুলো নিচে পড়ে যায়। ফলে তা মনোযোগ পায় না। স্থানীয় বন বিভাগের অফিস সব আইন জানে না। আমি এটা দায়িত্ব নিয়ে বলছি। বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যপ্রাণীর ওপর আক্রমণ হয়, মেরে ফেলা হয়। আইন না জানার কারণে বন বিভাগ কি শাস্তি দেবে নিজেরাই সেটা জানে না।

আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের উন্নয়ন এথনোকোসেন্ট্রিক, অর্থাৎ মানুষকেন্দ্রিক চিন্তা। উন্নয়ন করা হয় মানুষের কথা চিন্তা করে, প্রাণবৈচিত্র্যের কথা চিন্তা করা হয় না। ধান চাষ করতে গিয়ে বিষ দিয়ে সব মেরে ফেলছে, বিল্ডিং করতে গিয়ে গাছপালা কেটে ফেলছে। তাই রাষ্ট্রকে তার মানুষকেন্দ্রিক উন্নয়ন দর্শন থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রতিবেশকেন্দ্রিক উন্নয়ন দর্শন গ্রহণ করতে হবে।

জাগো নিউজ: স্থানীয় জনগণের ভূমিকা কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণে?

পাভেল পার্থ: প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় জনগণ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। তারা ঐতিহাসিকভাবে লোকজ জ্ঞানের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে। যেমন- স্থানীয় মৌয়ালরা জানে, কখন কীভাবে মৌমাছির বাচ্চা রেখে মধুর চাক কাটতে হয়। কীভাবে গোলপাতা কাটতে হয়। তারা জানে কোন মাছ ধরা যাবে না। সরকার যদি জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় জনগণকে গুরুত্ব দেয়, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয় তাহলে এটা ফলপ্রসূ হবে। বন্দুক বা বাহাদুরি দিয়ে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করা যায় না। এটা রক্ষার জন্য এ বিষয়গত জ্ঞান জরুরি।

আরও পড়ুন রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড সুন্দরবন অর্ধেকে নেমেছে পদ্মার আয়তন, শুকিয়ে যাচ্ছে শাখা নদীও

জাগো নিউজ: উন্নয়ন আর বৈচিত্র্য রক্ষায় ভারসাম্য কীভাবে করা যেতে পারে?

পাভেল পার্থ: নগরে ভারসাম্য বেশি জরুরি। সেজন্য নগর বন তৈরি করতে হবে। নগরে প্রচুর গ্রিন স্পেস দরকার। ঢাকায় যে উদ্যান বা পার্ক টিকে আছে, প্রয়োজনে আইন করে তা রক্ষা করতে হবে। যতটুকু বেঁচে আছে, রক্ষা খুবই জরুরি। আমাদের হালদা রক্ষা করতে হবে, কারণ হালদা দ্বিতীয়টি নেই। হাকালুকি লাগবে, কারণ এটিও হটস্পট। টাঙ্গুয়ার হাওর দেশে অদ্বিতীয়। সুন্দরবন একটিই, তাই সেখানে রামপালকে জায়েজ করা যাবে না। কারণ, এগুলোর বিকল্প আর নেই।

জাগো নিউজ: শিক্ষা ও গণসচেতনতার মাধ্যমে কীভাবে প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করা যেতে পারে?

পাভেল পার্থ: প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় প্রতিটি প্রাণী নিয়ে গবেষণা ও তথ্য থাকতে হবে। গণসচেতনতা তৈরি করতে সিভিল সোসাইটি, রাজনৈতিক সংগঠন, স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন, গণমাধ্যম, একাডেমিক পর্যায়ের সবাইকে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতি উপজেলায় কমিটি গঠন করতে হবে। এখন তরুণরা সারাদেশে প্রচুর বন্যপ্রাণী উদ্ধার করছে। তারা অনেক দূরে গিয়ে সহানুভূতিশীল হয়ে নিজ দায়িত্বে কাজ করে যাচ্ছে।

তরুণরা ফেসবুকে কমিউনিটি খুলে প্রাণী সম্পর্কে জানছে, খোঁজখবর রাখছে। তাই সরকারের উচিত প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় তরুণ সমাজ ও পরিবেশবাদী সংগঠনকে যুক্ত করা। সর্বোপরি আমাদের পাঠ্যপুস্তকে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় জনগণ কীভাবে ভূমিকা রাখবে তা যুক্ত করতে হবে।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশে কোন অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি সংরক্ষণযোগ্য প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য?

পাভেল পার্থ: আমার মনে হয়, দেশের প্রতিটি এলাকাই প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য জরুরি। এটা হলো আমার প্রতিবেশগত দর্শন। হাওর-বাঁওড় বিল থেকে শহর-নগর ও পাহাড়-সমতল প্রতিটি জায়গায় প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবুও আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে হাওর ও জলাভূমি অঞ্চল এবং সুন্দরবন সবচেয়ে বেশি সংরক্ষণযোগ্য। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামকে গুরুত্ব দিতে হবে। সিলেটের সীমান্তবর্তী অঞ্চল লাউয়াছড়া, সাতছড়ি, রেমাকালেঙ্গা, মাধবকুণ্ডকে গুরুত্ব দিতে হবে।

আরএএস/এমকেআর/এমএফএ/জিকেএস