জাতীয়

এভারেস্ট জয়ের ছবি প্রকাশ করলেন শাকিল

এভারেস্ট জয়ের ছবি প্রকাশ করলেন শাকিল

বাংলাদেশের সন্তান ইকরামুল হাসান শাকিল কক্সবাজার থেকে প্রায় ১ হাজার ৩৭২ কিলোমিটার পথ হেঁটে গত ১৯ মে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেন। এভারেস্টের চূড়ায় ওড়ান লাল-সবুজের প্রিয় বাংলাদেশের পতাকা। এভারেস্ট জয়ের সেই পরম আকাঙ্ক্ষিত ছবি প্রকাশ করেছেন তিনি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২২ মে) নিজের ফেসবুকে ইতিহাস গড়া সেই ছবি প্রকাশ করেন শাকিল।

সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেছেন তিনি। পদযাত্রা করে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে কম সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তিনি। শাকিল এটা করেছেন সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে। এতে দেশের মানুষের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পদযাত্রা করে এভারেস্ট জয়ের শাকিলের এই অভিযানের নাম ছিল ‘সি টু সামিট’। অভিযানের আয়োজক বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব। টাইটেল স্পন্সর দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ ‘প্রাণ’। সহযোগী স্পন্সর হিসেবে রয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), স্ন্যাকস পার্টনার মিস্টার নুডলস, গিয়ার পার্টনার মাকলু-ই-ট্রেডার্স নেপাল ও ওরাল হেলথ সিস্টেমা টুথব্রাশ, নিউজ পার্টনার জাগো নিউজ ও রেডিও পার্টনার জাগো এফএম।

Advertisement

১৯ মে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে সুস্থভাবে বেসক্যাম্পে পৌঁছেছেন ইকরামুল হাসান শাকিল। ২০ মে দুপুর সাড়ে ১২টায় ইকরামুল হাসান শাকিল পেজ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

ইকরামুল হাসান শাকিল পেজে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘শাকিল সুস্থভাবে বেসক্যাম্পে নেমে এসেছেন। তবে ৮০০০ মিটার চড়াইয়ের ধকল এখনো রয়ে গেছে। সুস্থ হয়ে উঠুক এ শুভ কামনা।’

শাকিলের এ সফল অভিযানে শুভেচ্ছা জানিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এবং অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মি. নুডলস। একই দিনে প্রতিষ্ঠানের দুটি পেজ থেকে এ শুভেচ্ছা জানানো হয়।

আরও পড়ুন বিশ্বরেকর্ড গড়ে শাকিলের এভারেস্ট জয় ভাঙা ঘর থেকে এভারেস্টের চূড়ায় শাকিল, গর্বিত এলাকাবাসী কেমন ছিল শাকিলের প্রথম অভিযান

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পেজে লেখা হয়েছে, ‘পায়ে হেঁটে কতদূর যাওয়া যায়? যখন লক্ষ্য অটুট থাকে, নিজের ওপর বিশ্বাস অটল থাকে, কোটি মানুষের ভালোবাসা পাশে থাকে আর প্রাণের বাংলাদেশ হৃদয়ে থাকে—তখন পায়ে হেঁটে পৌঁছানো যায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়াতেও!

Advertisement

বাংলাদেশের সাহসী সন্তান ইকরামুল হাসান শাকিল ‘সি টু সামিট’ অভিযাত্রায় ঠিক তেমনটাই করে দেখিয়েছেন। পলিথিন দূষণ হ্রাস ও কার্বন নিঃসরণ রোধে সবাইকে সচেতন করতে তিনি কক্সবাজার থেকে পায়ে হেঁটে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ অভিযাত্রিক হিসেবে মাত্র ৮৪ দিনে পাড়ি দিয়েছেন ১৩৭২ কিলোমিটার এবং পৌঁছে গেছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া মাউন্ট এভারেস্টে। গড়েছেন ৩টি বিশ্বরেকর্ড। এই অসাধারণ অভিযাত্রায় গর্বিত স্পন্সর হিসেবে শাকিলের সাথে থাকতে পেরে প্রাণ পরিবার আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত।’

মি. নুডলস পেজে লেখা হয়েছে, ‘সি টু সামিট অভিযাত্রায় স্ন্যাকস পার্টনার মি. নুডলসকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের শাকিল পায়ে হেঁটে জয় করেছেন মাউন্ট এভারেস্ট, গড়েছেন অনন্য ৩টি বিশ্বরেকর্ড। তাঁকে জানাই অভিনন্দন। দুঃসাহসিক এই অর্জনে শাকিলের সাথে থাকতে পেরে মি. নুডলস আনন্দিত ও গর্বিত।’

বাংলাদেশের গাজীপুরের কালিয়াকৈরের স্বপ্নবাজ এ তরুণের আগে ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে প্রায় ১২শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পদচিহ্ন রাখেন। শাকিল তার চেয়ে সপ্তাহখানেক কম সময়ে পাড়ি দিয়েছেন আরও একশ কিলোমিটার বেশি। ম্যাকার্টনি রেকর্ড গড়েছিলেন ৩৪ বছর বয়সে। শাকিল সেটা করে দেখালেন ৩১ বছর বয়সে।

সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন শাকিল। এর আগে আরও ছয়জন বাংলাদেশির পা পড়েছে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায়। তারা হচ্ছেন মুসা ইব্রাহীম, এম এ মুহিত, নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজরীন, খালেদ হোসেন ও বাবর আলী।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ইনানি সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু হয় শাকিলের পদযাত্রা। ৯০ দিনের মধ্যে ‘সি টু সামিট’ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে অভিযান শুরু করেন তিনি। যাত্রাপথে বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের প্রায় এক হাজার ৩৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এভারেস্টের ২৯ হাজার ৩১ ফুট উঁচু শিখরে আরোহণ করলেন শাকিল।

এর আগে ২০১৩ সালে শাকিল কলকাতা থেকে হেঁটে ১১ দিনে ঢাকায় পৌঁছান। তখনই যোগ দেন বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবে। পর্বতারোহণের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন ভারত থেকে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো ২০ হাজার ২৯০ ফুট উচ্চতার কেয়াজো-রি পর্বতশৃঙ্গ জয় করতে যান এম এ মুহিতের নেতৃত্বে সাত পর্বতারোহী। তাদের একজন শাকিল।

শেষ পর্যন্ত মুহিত, শাকিল ও কাজী বাহলুল শৃঙ্গটি জয় করেন। ২০১৭ সালে লারকে পিক জয়ের অভিযানেও ছিলেন তিনি। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে খুব কাছাকাছি গিয়ে তা জয় করা হয়নি। পরের বছর ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেইনিয়ারিং থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণের সময়েই তিনি জয় করেন ‘দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২’ শৃঙ্গ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের আট পর্বতারোহী ‘হিমলুং’ জয়ের অভিযানে নামেন। সেই দলে অংশ নিয়ে তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমলুং-এর চূড়ায় পা রাখেন।

এমএমএআর/জিকেএস