ফিচার

সাত দেশের সাত চা!

সাত দেশের সাত চা!

মো. বিল্লাল হোসেন

Advertisement

আজ বিশ্ব চা দিবস। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কমবেশি চা খাওয়ার চল রয়েছে। এই চা-তেও আছে নানান বৈচিত্র্য। স্বাদে, গন্ধে, রেসিপি, ইতিহাসে আছে ভিন্নতা। চা দিবসে আজ চলুন জেনে আসা যাক সাতটি ভিন্ন দেশের সাত ধরনের চায়ের ব্যতিক্রমী গল্প।

চীন

চায়ের আদি নিবাস হচ্ছে চীন। এখানে নানা ধরনের চা পাওয়া যায়। তবে ব্যতিক্রমধর্মী এক ধরনের চা এখানে পাওয়া যায় যেটি ‘গম্ফু চা’। ‘গম্ফু চা’ হলো এমন চা যেটি দক্ষতার সহিত নিপুণভাবে বানানো হয় এবং চাইনিজ টি সেটে পরিবেশন করা হয়। চীনে এই চা খাওয়ার উৎসবও হয়ে থাকে যা ‘গম্ফু চা উৎসব’ নামে পরিচিত। এছাড়া চীনারা আমাদের মতো দুধ, চিনি, মালাই দিয়ে চা বানিয়ে খায় না। বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুধু চায়ের পাতা ফুটিয়ে পান করে। বিভিন্ন ধরনের চা পান করে চীনারা।

তাইওয়ান

তাইওয়ানের জনপ্রিয় ও ভিন্নধর্মী একটি চা হলো ‘বাবল চা’। এটি ‘বোবা’ নামেও পরিচিত। আমাদের দেশেও এই চা এখন বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন কফি শপ কিংবা শপিং মলে ঘুরতে ঘুরতে এই চা উপভোগ করা যায়। তাইওয়ানে এই চা ১৯৮০ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয় এবং এটি তৈরি করা হয় চা, দুধ, ফ্রুট জুস ও ট্যাপিওকা বল (ক্যাসাভার মূল দিয়ে তৈরি এক ধরনের এডিবল বল) দিয়ে।

Advertisement

আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনার একটি ইউনিক চা হলো ‘এরবা মেট’। এটি চা তৈরি করা হয় চায়ের শুকনো পাতা দিয়ে এবং পেয়ালার মত দেখতে এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী পাত্রে এটি পরিচেবশন করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই চা চুমুক দিয়ে পান করেন না তারা। পেয়ালার সঙ্গে একটি পাইপ দেওয়া হয়, যার নাম ‘বম্বিলা’। এই বম্বিলা দিয়েই এই বিশেষ চা পান করার নিয়ম।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যে সকালের চা বা ‘ব্রেকফাস্ট টি’ খুবই জনপ্রিয়। ইংলিশ ব্রেকফাস্ট টি শুধু চায়ের স্বাদই নয়, বরং এটি ব্রিটিশ সংস্কৃতির একটি অংশ। সকালের নাশতার সময় খাওয়া হয় সেই কারণে নাম ব্রেকফাস্ট টি। সাধারণভাবে গরম পানি দিয়ে তৈরি করে দুধ মেশানো হয়। অনেকেই মধু বা চিনি যোগ করেন স্বাদ অনুযায়ী। এটি অনেকটা আমাদের দেশের মত চিনি দিয়ে লাল চা সঙ্গে বিস্কুট বা কুকিজ দেওয়া হয়। তবে এর স্বাদ হয় গাঢ়।

মরক্কো

‘ট্রেডিশনাল মিন্ট টি’ হচ্ছে মরক্কোর খুবই জনপ্রিয় চা। এটি তৈরি করা হয় চা ও পুদিনা পাতার সংমিশ্রণে। বাড়িতে নতুন অতিথি আসলে এই চা পরিবেশন করা হয়। এই চা পরিবেশন করার দারুণ একটি ধরণ রয়েছে সেটি হলো যিনি আতিথেয়তা করছেন তিনি এমনভাবে কাপের মধ্যে চা ঢালবেন যেন কাপের অন্তত ৩০ সে.মি উপর থেকে চা পড়ে এবং কিছু ফেনা উৎপন্ন। এছাড়া এটিকে সম্মানের নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

জাপান

জাপানের সবচেয়ে স্পেশাল চা হলো ‘মাচা টি’ । এটি সাধারণত সবুজ চায়ের পাতার গুড়ো গরম পানিতে মিশিয়ে তৈরি করা হয়। জাপানে এই চা ‘ওয়াগাসি’ নামক এক ধরনের মিষ্টির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।

Advertisement

তুরস্ক

তুরস্কের চায়ের ঐতিহ্য অনেক পুরোনো। এখানে কড়া ফ্লেভারের অতিরিক্ত গরম চা খুবই জনপ্রিয় এদেশে। বলা হয়ে থাকে তার্কিশ চা এতই গরম থাকে যে, যে কোনো সময় আঙুল পুড়ে যেতে পারে। এই চা টিউলিপ আকৃতির পাত্রে পরিবেশন করা হয়। তার্কিশদের সকালের নাস্তা, বিকাল, সন্ধ্যা কিংবা অতিথি অ্যাপ্যায়নে চা থাকা চাই চাই। চায়ের সঙ্গে রুটি, মধু খান তারা।

আরও পড়ুন

চায়ের ইতিহাসে লুকিয়ে আছে শ্রমিকের নীরব কষ্ট সিলেটের মণিপুরী শাড়ি বাংলার নতুন সাংস্কৃতিক পরিচয়

লেখক: প্রভাষক, খাদ্য প্রকৌশল ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

কেএসকে/এমএস