পরিবেশের শত্রু হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে প্লাস্টিক। যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তবে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক এখন আর ফেলনা জিনিস নয়। এগুলো প্রক্রিয়াজাত করে আয় হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
Advertisement
খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে গড়ে উঠেছে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ‘বিসমিল্লাহ প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি’। মহামুনি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় নিজস্ব জায়গায় কারখানাটি গড়ে তুলেছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও রাজনীতিক মো. আবুল কাশেম।
আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পণ্য কুড়িয়ে আনছেন ফেরিওয়ালারা। সেগুলো কিনে নিয়ে কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করছেন আবুল কাশেম। এতে একদিকে ফেলনা প্লাস্টিক বিক্রি করে যেমন অর্থ আয় হচ্ছে, তেমনি সুরক্ষিত হচ্ছে পরিবেশ।
সম্প্রতি মানিকছড়ির ‘বিসমিল্লাহ প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি’ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে কাজ করছেন ২০-২২ জন শ্রমিক। এদের মধ্যে নারী শ্রমিকও রয়েছেন। ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে কেনা ব্যবহার অনুপযোগী প্লাস্টিকের বোতল, ঝুড়ি, বালতি, জগ ও মগ বাছাই করে আলাদা করছেন। পরে এসব প্লাস্টিক পণ্য মেশিনে ফেলে গুঁড়া করা হচ্ছে। পরে সেগুলো পানিতে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রক্রিয়াজাতকরণ শেষে এসব চিপস চলে যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদের হাতে।
Advertisement
বিসমিল্লাহ প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিতে কাজ করছিলেন শ্রমিক মেমাচিং মারমা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাড়ির পাশে নিয়মিত কাজের পরিবেশ পেয়ে আমরা খুশি। এখানে কাজ করে সংসারে বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়েছে। পুরোনো প্লাস্টিক পণ্য পানিতে ধোয়ার কাজ করে মাসে ৮-১০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
দেশে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার বাড়ছে দেশে প্লাস্টিক শিল্পের বাজার ৪০ হাজার কোটি টাকা প্লাস্টিক পণ্যে বিপ্লবে বাংলাদেশ পলিথিন ও প্লাস্টিক বন্ধে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় চান ব্যবসায়ীরাআবুল কাশেমের কারখানায় পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পণ্য সরবরাহ করেন স্থানীয় ফেরিওয়ালা মো. ওবায়দুল্লাহ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে মানুষ জানতো না যে, প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার শেষে তা আবার বিক্রি করা যায়। তাই বাড়ির আশপাশে, হাট-বাজারের যত্রতত্র খালি বোতল ও অন্যান্য পণ্য ফেলে রাখতো। এখন ব্যবহার অনুপযোগী প্লাস্টিক পণ্য বিক্রি করতে নিজেরাই জমিয়ে রাখছে। আমি তাদের কাছ থেকে কিনে কারখানায় বিক্রি করছি।’
কথা হয় বিসমিল্লাহ প্লাস্টিক ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী মো. আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, রংভেদে প্রতিকেজি পুরোনো প্লাস্টিক পণ্য ২০-৫০ টাকায় কেনা হয়। পরে এগুলো প্রক্রিয়াজাত করে কেজি ৭০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি করেন।
Advertisement
মানিকছড়ি, রামগড়, মাটিরাঙ্গা, লক্ষ্মীছড়ি, ফটিকছড়ি, নাজিরহাট ও হেঁয়াকোসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিমাসে অন্তত ২০ লাখ টাকার পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পণ্য সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা হয় বলে জানান আবুল কাশেম।
তিনি বলেন, এসব পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে দেশে রেমিট্যান্স আসছে। অন্যদিকে ফেলনা প্লাস্টিক পণ্য বিক্রি করে স্থানীয়রা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) খাগড়াছড়ি জেলার উপব্যবস্থাপক মো. আলী আল রাজী জাগো নিউজকে বলেন, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বাইরে রপ্তানি হচ্ছে। বিষয়টি খুব ইতিবাচক।
তিনি বলেন, কেউ যদি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করে নতুন করে কিছু করতে পারেন তা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কেউ চাইলে এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে বিসিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া হবে।
এসআর/এমএস