জাতীয়

এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ ৪ দাবিতে অসহযোগ কর্মসূচির ডাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ ৪ দাবিতে অসহযোগ কর্মসূচির ডাক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের অপসারণসহ চার দাবিতে অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

Advertisement

বুধবার (২১ মে) দুপুরে আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতারা বলেন, শুরু থেকেই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, আমাদের এই নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির ব্যাপকতা ও যৌক্তিকতার বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঠিক তথ্য না দিয়ে আড়াল করেছেন, যা পরিস্থিতিকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

এ অবস্থায় আমাদের বর্তমান দাবিসমূহ হচ্ছে- জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

Advertisement

এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থাসমূহ, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মসূচির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবিসমূহের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হবে। পাশাপাশি এনবিআর এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে স্ব স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতামুক্ত থাকবে।

আরও পড়ুন বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি, এবার অবস্থান কর্মসূচির ডাক কলমবিরতি সাময়িক স্থগিত, আলোচনার প্রস্তাব সরকারের

এছাড়া আগামী ২৪ মে ও ২৫ মে কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহ ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এই দুইদিন কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। আর আগামী ২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত কর কমিশনার হাসিনা আক্তার, ডেপুটি কমিশনার (কাস্টমস) শাহাদাত জামিল প্রমুখ।

Advertisement

অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে গতকালের বৈঠক সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতকাল অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দুই উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতেই অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমি মিটিং দীর্ঘ করবো না। কর থেকে একজন ও কাস্টমস থেকে একজন, সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি থেকে যে কোনো তিনজন কথা বলতে পারবেন। আমি ছয়-সাত মিনিটের বেশি দেবো না। কেবিনেট সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে আরেকটি মিটিং আছে, আমি তাদের বসিয়ে রাখতে পারবো না এবং সময় গণনার জন্য কে থাকবেন সেটিও জিজ্ঞাসা করেন। ঐক্য পরিষদের মোট ১৩ জন প্রতিনিধির মধ্যে মাত্র দুজন প্রতিনিধি বক্তব্য রাখার সুযোগ পান।

সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয় যে, এনবিআরের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সংস্কারের পক্ষে এবং তারা চান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পূর্ণাঙ্গ, টেকসই ও কার্যকরভাবে সংস্কার করা হোক। এসময় এনবিআর সংস্কার কমিটির সদস্যরাও বক্তব্য রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পরামর্শক কমিটির বক্তব্যের শেষে দুইজন উপদেষ্টা বক্তব্য রাখেন। আমরা আশা করেছিলাম যে, পরামর্শক কমিটির সদস্যদের বক্তব্যের ধারাবাহিকতা দুইজন উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্যে পাবো। কিন্তু পরিতাপের সঙ্গে আমরা জানাচ্ছি যে, তারা জারি করা অধ্যাদেশের পক্ষে কথা বলেন এবং অধ্যাদেশটি ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। কোনটি সঠিক, কোনটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য, কোনটি দেশের জন্য সর্বোত্তম হবে সে বিষয়ে তারা কিছু বলেননি। সবশেষে সভায় অর্থ উপদেষ্টা জানান- বাস্তবায়ন পর্যায়ে আমাদের কনসার্ন অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করবেন। মিটিং শেষে অর্থ উপদেষ্টা গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। তার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন- দেশের স্বার্থে, ব্যবসায়ীদের স্বার্থে, দশের স্বার্থে যে অধ্যাদেশ অনুমোদন হয়েছে তা থাকবে, তবে আমাদের যে জিনিসগুলো আছে তা অ্যাডভাইসরি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে বিধি বা অন্যকিছু করে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করা হবে। এ বিষয়ে আর কোনো আলোচনা নয় তিনি জানিয়েছেন। আমাদের আন্দোলন চলবে কি চলবে না সে বিষয়ে কিছু আসে-যায় না।

এসএম/ইএ/এমএস