আইন-আদালত

দিনের ভোট রাতে হয়েছিল তখন তো আদালত স্যুয়োমোটো আদেশ দেননি

দিনের ভোট রাতে হয়েছিল তখন তো আদালত স্যুয়োমোটো আদেশ দেননি

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে দায়ের করা রিট আবেদন শুনছেন হাইকোর্ট। রিট আবেদন শুনানির এক পর্যায়ে ইশরাক হোসেনের আইনজীবী আদালতকে বলেন, পুরো ঢাকা শহর কলাপস। বিপুল সংখ্যক পিপলসে সুপ্রিম কোর্টের আশেপাশেসহ পুরো ঢাকা কলাপস।

Advertisement

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর রিট শুনানিতে এমন তথ্য জানান ইশরাক হোসেনের এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

এ সময় আদালত ইশরাক হোসেনের বিষয়ে স্যুয়োমোটো (স্বপ্রণোদিত) আদেশ দিতে পারেন কি না জানতে চাইলে অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, যখন দিনের ভোট রাতে হয়েছিল তখন তো কোন আদালত স্যুয়োমোটো (স্বপ্রণোদিত) আদেশ দেননি।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের গেজেট স্থগিত চেয়ে করা রিটের ওপর আদেশের জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

বুধবার (২১মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শুনানি শেষে আদেশের জন্য এ দিন ঠিক করেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাক হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন ও খান জিয়াউর রহমান।

এর আগে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও ইসির গেজেট প্রকাশ নিয়ে মো. মামুনুর রশিদ নামে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী লিগ্যাল নোটিশ দেন। তবে তাতে সাড়া না মেলায় ১৩ মে রিট করা হয়। রিটটি মঙ্গলবার শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ১২ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। দুপুর ১টা থেকে প্রায় ২টা পর্যন্ত শুনানি চলে। পরে বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা আবারও শুনানি হয়। আজও সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা শুনানি হয়।

বুধবার শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, আমরা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য রুল এবং স্থিতাবস্থা দেবো। আমরা সবাইকে শুনতে চাই।

Advertisement

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আবেদনকারীর আইনগত এখতিয়ার নেই। আদালত বলেন, আমরা তো স্বপ্রণোদিত হয়েও দিতে পারি। কায়সার কামাল বলেন, আমাদের হ্যাম্পার হবে। আদালত বলেন, হ্যাম্পার হবে না। কায়সার কামাল বলেন, তারা তাপসের পক্ষে মামলা করেছে। যিনি মামলা করেছেন তার কোনো অধিকার নেই। তিনি সেখানে প্রতিদ্বন্দী ছিলেন না। এখানে পলিটিক্যাল মোটিভ থাকতে পারে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, রিট খারিজ চাচ্ছি। ওনার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল, আমার তো মনে হয় না এখানে যারা উপস্থিত আছেন কারও রক্তক্ষরণ হয়নি।

রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, এটাতে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল দেওয়া উচিত। আমরা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের ভুলগুলো দেখিয়েছি। আবেদনকারীর আইনগত অধিকার আছে সেটা দেখিয়েছি। ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, যখন তাপস বসেছে তখন তো আসা উচিত ছিল। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা শহর ব্লকেড। ইশরাকের পক্ষে হাজার হাজার জনগণ আন্দোলন করছে। আর আবেদনকারীর পক্ষে ১০ জন লোকও তো নেই।

আদালত বলেন, আমরা তো স্বপ্রণোদিত হয়েও দিতে পারি। মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের মামলায় স্বপ্রণোদিত রুলের কোনো নজির নেই। এটা হলে প্রত্যেকটা নির্বাচনই চ্যালেঞ্জ হবে। গেজেটের পর শপথ পড়াতে হবে। এটা আইন।

কায়সার কামাল বলেন, অতীতে কোর্ট রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হয়েছে। এটা হাইলি পলিটিক্যাল মোটিভেটেড। এই সময়ে এই বিষয়ে রুল দেওয়া কতটা যৌক্তিক হবে? ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, যখন দিনের ভোট রাতে হয়েছিল তখন তো কোন আদালত স্যুয়োমোটো (স্বপ্রণোদিত) আদেশ দেয়নি। তিনি আরও বলেন, প্রশ্ন উঠবে অতীতের কোনো নির্বাচনে কেন স্বপ্রণোদিত আদেশ দেয়নি। এটাতে রুল হলে মানুষ ভাববে ৫ আগস্টের আগের ধারাবাহিকতা এখনো বিচার বিভাগ থেকে যায়নি।

আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, গত সরকারের পতনের পরপরই বর্তমান সরকার ১২ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করেছে। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল জুলাই-আগস্টের স্পিরিটকে বাইপাস করে একটা অকার্যকর মামলায় রায় দিয়েছেন।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমি গত সরকারের সময় সংসদ নির্বাচন করতে গেলে ওসি আমাকে গুলি করেছিল। তখন তো কোর্ট স্বপ্রণোদিত আদেশ দেয়নি। সাবেক প্রধান বিাচারপতি এসকে সিনহাকে ক্যানসারের রোগী বানিয়ে দেশ ছাড়া করেছে। তখন তো কোর্ট স্বপ্রণোদিত আদেশ দেননি। শুনানি শেষে আগামীকাল সকালে আদেশের জন্য দিন ধার্য করে দেন হাইকোর্ট।

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে আইনি নোটিশ দিয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। তবে নোটিশর পর রাতেই গেজেট প্রকাশ করা হয়।

নোটিশের বিষয়ে ওই সময় আইনজীবী বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে দ্রুত রায়টি দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এমন কোনো আদেশ দিতে পারেন না যে আদেশের কোনো কার্যকারিতা নেই। এখানে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া অধ্যাদেশের মাধ্যমে মেয়র পদশূন্য করে দেওয়া হয়েছে।

এফএইচ/এসএনআর/এমএস