আইন-আদালত

ইশরাকের শপথ বন্ধে রিটকারীকে জরিমানার আর্জি

ইশরাকের শপথ বন্ধে রিটকারীকে জরিমানার আর্জি

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে দায়ের করা রিট আবেদনের ওপর প্রথম দিনের শুনানি শেষ। আজ বুধবার (২১ মে) আবারও শুনানি নিয়ে আদেশের দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট।

Advertisement

শুনানিতে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন রিটকারীর আইনজীবী। অন্যদিকে, আবেদন খারিজ করে রিটকারীকে জরিমানা করার আর্জি জানানো হয়েছে ইশরাক হোসেনের আইনজীবীর পক্ষ থেকে।

মঙ্গলবার (২০ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিট আবেদনের ওপর শুনানি হয়। আরও শুনানির জন্য বুধবার (২১ মে) আদেশের দিন ঠিক করেছেন আদালত। আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশ দেবেন আদালত।

আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। অপরদিকে, ইশরাক হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তাদের সহযোগিতা করেছেন ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মাকসুদ উল্লাহসহ অন্যান্য আইনজীবীরাও। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. মাহফুজুর রহমান মিলন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান।

Advertisement

ইশরাক হোসেনের শপথ না পড়াতে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন আদালতে শুনানিতে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনালে মামলার সময়ে ইশরাককে জয়ী ঘোষণা করতে হবে সেই মর্মে কোন প্রতিকার চায়নি। একইসঙ্গে ইশরাক বেশি ভোট পেয়েছে, সেরকম কোন কিছুই আবেদনে ছিল না। বরং আবেদনে ভোটের ফলাফলে ইশরাক কম ভোট প্রাপ্ত হয়েছে মর্মে উল্লেখ আছে।

পরবর্তী সময় ইশরাকের আবেদন দুইবার সংশোধন করা হয়েছে। যা আইনসম্মত নয়। কারণ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের মামলায় কোন আবেদন ৩০দিন পর সংশোধন করা যায় না।

অপরদিকে, যে কোন আবেদন মামলার পক্ষ বা তার এজেন্ট (পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির মাধ্যমে) এফিডেভিটের মাধ্যমে সংশোধন করতে পারে। কিন্তু ইশরাকের মামলায় সংশোধন আবেদন করেছেন রাজিব বেপারী নামে বরিশালের এক ব্যক্তি এবং আরেকটি সংশোধনী আবেদন করেন একজন আইনজীবীর ক্লার্ক মনজুরুল ইসলাম। অথচ কোন পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নেই। সুতরাং এই এফিডেভিট গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। তবুও আদালত তা গ্রহণ করে সেই মর্মে আদেশ দিয়েছেন।

মামলার আবেদনে যে সব সাক্ষীদের নাম উল্লেখ ছিল তাদের কাউকেই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে মামলায় ৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে কমিশনের মাধ্যমে। ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনে বসে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। কমিশন নিয়োগের দরখাস্তে বলা হয়েছিল ইশরাক অসুস্থ। অথচ অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য কমিশনে কেন নেওয়া হয়েছে তার কোন ব্যাখ্যা নেই। সাক্ষীরা ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে যেতে পেরেছেন, কিন্তু আদালতে যেতে পারেননি। এতে প্রতীয়মান হয় তারা ঘরে বসে সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন।

Advertisement

ইশরাক বেশি ভোট পেয়েছে বা ইশরাক জয়ী হয়েছে মর্মে আদালত তার রায়ের কোথাও উল্লেখ না করেই ইশরাককে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেছেন। যা আইনসম্মত নয়। আদালত ভোট পুনরায় গণনা ব্যতীত কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারেন না। অথচ এখানে পুনর্গণনার আদেশ না দিয়ে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেছে।

গত ১৯ আগস্ট সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। সুতরাং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলাটি তখনই অকার্যকর হয়ে যায়। তথাপি এই মামলায় রায় প্রদান আইনের এখতিয়ার বহির্ভূত।

এই রিটের বিরুদ্ধে ইশরাক হোসেনের পক্ষে শুনানি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেছেন, রিটকারী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ কি সিটি করপোরেশনের ভোটার, তিনি কি সশরীরে নিজের পরিচয় নিয়ে উপস্থিত আছেন। এই রিটের কোন যৌক্তিকতা নেই। রিট আবেদন খারিজ করে রিটকারীকে জরিমানা করা হোক। এরপর ব্যারিস্টার কায়সার কামাল শুনানিতে আদালতে বলেন, আইন অনুযায়ী রিট আবেদন করা হয়নি। আপনারা রিট আবেদনটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শুনানি নাও করতে পারতেন। এরপর আদালত রিটটির শুনানি মুলতবি করে বুধবার আদেশের জন্য রাখেন।

এফএইচ/এসএনআর/জেআইএম