দেশজুড়ে

মামলায় কারও নাম দেননি বাদী, ৬২ জনের নাম কীভাবে এলো?

মামলায় কারও নাম দেননি বাদী, ৬২ জনের নাম কীভাবে এলো?

নারায়ণগঞ্জে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সজল মিয়া (২০) নামের এক তরুণ। এ ঘটনার ৯ মাস পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন নিহতের মা।

Advertisement

মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৬২ জনের জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। তবে বাদীর ভাষ্য, এজাহারে উল্লেখিত আসামিদের নাম তিনি দেননি। এ বিষয়ে এক আসামির ছেলের সঙ্গে বাদীর কলরেকর্ড জাগো নিউজের হাতে এসেছে। তবে পুলিশ বলছে, বাদীর দেওয়া নামেই মামলা রুজু হয়েছে।

এরআগে শুক্রবার (১৬ মে) রাতে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ সজল মিয়ার মা রুনা বেগম (৪৭) বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন। একই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের ১০০-১৫০ নেতাকর্মীর নাম রয়েছে।

মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান প্রমুখ।

Advertisement

অডিও রেকর্ড সূত্রে জানা যায়, ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি মামলার ৪০ নম্বর আসামির ছেলে রাব্বি। বাদীকে তিনি বলেন, ‌‘আন্টি, আমার আব্বুর নামে মামলা দিয়েছেন। কী কারণে দিলেন বা কী বিষয়ে?’ প্রশ্নের উত্তরে বাদী বলেন, তুমি কোন জায়গা থেকে বলছো? জবাবে ছেলেটি বলেন, আমি সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে বলছি। আমার বাবা রিকাবুলের নামে মামলা হয়েছে। এরপর বাদীকে বলতে শোনা যায়, আমি মামলা করেছি ঠিক আছে, কিন্তু মামলার ব্যাপারে আমি কারও নাম উল্লেখ করিনি।

তখন রাব্বি বলেন, ‘আন্টি, আমার আব্বুর নামে যে মামলাটা দিলো, আমরা তো অসহায়। এরপর শহীদ সজলের মা বলেন, তোমার বাবার নামও আমি জীবনে শুনি নাই।

আরও পড়ুন:

জুলাই অভ্যুত্থানের দুই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়লো অডিও-ভিজ্যুয়াল দলিল সংগ্রহ-সংরক্ষণ করবে ফিল্ম আর্কাইভ: তথ্যসচিব দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: গণ-অভ্যুত্থানের পর সংস্কারের আশায় বাংলাদেশ, সহজ নয় পথ

এরপর ফোনে থাকা রাব্বি বলেন, ‘আন্টি, আমার আব্বু মারা যাবে, ফাঁসি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে’। এসময় বাদী রুনা বেগম বলেন, আমার সন্তান আন্দোলনে মারা গেছে। এর বিচার আমি সরকারের কাছে চাই। কিন্তু আমি কারও নামে মামলা দেইনি। আমার ছেলে সিদ্ধিরগঞ্জে মারা গেছে, তাই আমি ওই থানায় গিয়ে বিচারের দাবিতে মামলা করেছি। কিন্তু কারও নামে দেইনি। আমি তোমার বাবার বিষয়ে কী করা যায় দেখবো।

Advertisement

এ মামলার বাদী রুনা বেগমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছে জাগো নিউজ। রুনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে শহীদ হয়েছে সবাই জানে। আমি আমার ছেলে হত্যার ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছি। কিন্তু ওই মামলায় আমি কোনো আসামির নাম দেইনি। অজ্ঞাত আসামি রেখে আমি মামলা করেছিলাম। এখন শুনেছি আমার মামলার আসামি নাকি অনেককে করা হয়েছে। আমার সঙ্গে অনেকে যোগাযোগও করেছেন।’ মামলায় আপনি আসামি দেননি তবুও এত আসামি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করেছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সিদ্ধিরগঞ্জ যাবো। তবে সময় পাইনি এখনো। আমি এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলবো।’

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাদীর অনেক সিকিউরিটির বিষয় আছে। এগুলো উনি বলতেই পারেন। মামলার আসামিতে তো নিরীহ কেউ নাই। উনি আসামির নাম দিছেন। এখন মিথ্যা কথা বলছেন তিনি।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২০ জুলাই ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন বাদীর ছেলে সজল মিয়া আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেন। ওইদিন মামলার উল্লেখিত আসামিরা জনতাকে প্রতিহত করতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওইসময় আসামিদের এলোপাতাড়ি গুলিতে ভিকটিমের পেটে গুলি লাগে। তখন ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন তাকে তাৎক্ষণিকভাবে চিটাগাংরোডের সুগন্ধা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এসআর/এমএস