দেশজুড়ে

লালন-পালনে খরচ বেশি, লাভ নিয়ে শঙ্কা খামারিদের

লালন-পালনে খরচ বেশি, লাভ নিয়ে শঙ্কা খামারিদের

পাবনায় এবার চাহিদার দ্বিগুণ কোরবানি পশু প্রস্তুত রয়েছে। তবে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। তাদের দাবি, গো-খাদ্যের উচ্চমূল্যের পাশাপাশি বেড়েছে পালন ব্যয়। ফলে মাংস হিসেবে ৩০ হাজার টাকা মণ দর না পেলে লাভের মুখ দেখতে পারবেন না তারা। এক্ষেত্রে ন্যায্য দর নিশ্চিতের পাশাপাশি বৈধ বা অবৈধ যে কোনো পন্থায় ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে গরু আমদানি বন্ধের দাবি তাদের।

Advertisement

খামারিরা বলছেন, গত কয়েক বছরে ক্রমাগত গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। কিছু কিছু খাদ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণও হয়েছে। এছাড়া জমিতে কাঁচা ঘাস চাষেও ব্যয় বেড়েছে। কয়েক বছরে খড়ের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। রাখালের বেতনও বেড়েছে। সবমিলিয়ে গত বছরের তুলনায় দিনে গরুপ্রতি ব্যয় বেড়েছে ৫০-১৫০ টাকার মতো। গতবছর দিনে ৩৫০-৪৫০ টাকা থাকলেও এবছর খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০-৫৫০ টাকায়। রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হলে খরচ আরও বাড়ে। সে হিসেবে একটি গরু এক বছর মোটাতাজা করতে গেলে কমপক্ষে এক লাখ ৩০ হাজার থেকে অন্তত দেড় লাখ টাকা ব্যয় গুনতে হয়। তবে ছোট-বড় হিসেবে এ ব্যয়ের তারতম্য হয়।

খামারিদের ধারণা, দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় কমেছে কোরবানির পশু ক্রেতার সংখ্যা। এরমধ্যে মিয়ানমার ও ভারত থেকে গরু ঢোকার খবরে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত তারা।

পাবনার গয়েশপুর ইউনিয়নের পুষ্পপাড়ার সোনাপুর গ্রামের রাইয়ান ডেইরি ফার্মের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন ইকবাল মৃধা। এ খামারে ৫-৮ মণ ওজনের ১২-১৫টি ষাঁড় রয়েছে বলে জানান তিনি। কোরবানির বাজার নিয়ে আলাপে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়ে ইকবাল মৃধা বলেন, ‌‘গরু মোটাতাজা বা খামার করা আগে লাভজনক হলেও খাবারের দাম অতিরিক্ত বেড়ে লাভের মুখ দেখা কঠিন হয়ে গেছে। এবছর কী হবে বলা মুশকিল।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘দিনে একটি গরুর পেছনে ৫০০-৫৫০ টাকার মতো খরচ আছে। এক থেকে দেড় বছরে দুই লাখ টাকার বেশি খরচ হয়। আমাকেই মাসে দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে গতবছরের তুলনায় এবছর দিনে গরুর খরচ বেড়েছে ৫০-১০০ টাকার বেশি। এক্ষেত্রে মাংস হিসেবে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা মণ দর না পেলে লাভ হবে না খামারিদের।’

আরও পড়ুন গরুর খামারে গ্রামের চিত্র বদলে দিয়েছেন লাকী বিক্রি হলেই গোয়ালঘরের দরজা কেটে বের করা হবে ৪০ মণের সম্রাটকে কৃষিনির্ভর গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রতীক গরু এক গরু থেকে শত গরুর মালিক আমিরুল

পাবনা শহরের জালালপুর নতুনপাড়ার বেলাল উইভিং ডেইরি খামারে গিয়ে দেখা যায়, বিশালাকৃতির দুটিসহ মোট সাতটি ষাঁড় রয়েছে এ খামারে। এদের দেখভাল করছেন খামারের মালিক বেলাল হাজির ভাই কাদের আলী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সবসময় ভালো দাম পাবো আশা করি। এবারও তেমনই আশা। কিন্তু আশা করা আর পাওয়া তো এক না। খাবারের যে দাম! ১৬০০ টাকার ভুসির দাম হইছে ২২০০ টাকা।’

কাদের আলী বলেন, ‘আমাদের এখানে বড় গরুই বেশি। ৩০-৩৫ মণ ওজনের আছে দুটি। বাকিগুলো ১২-১৮ মণের মধ্যে। এসব গরু বছরে শুধু খায়ই লাখ দেড়েক টাকার মতো। অন্যান্য খরচ তো আছেই। এখন বাজার কী হবে সেটাই চিন্তার বিষয়!’

জালালপুরের আরেক খামারি রাজু আহমেদ বলেন, ‘এবার ক্রেতা সংকট হবে মনে হচ্ছে। কিন্তু খরচ বাড়তি। ফলে গরুতে তেমন লাভ হবে না। কোনো গরুতে লোকসান হবে। কোনোটায় লাভ-লোকসান কিছুই হবে না। কোনোমতে খরচ উঠবে। তবে এটাও আমাদের জন্য লোকসানই। এর বাইরে একটা দুইটা গরুতে লাভ হতে পারে। তবে সেটাও খুবই সামান্য হবে।’

Advertisement

খামারিরা বলছেন, দাম নিয়ে দুশ্চিন্তার পাশাপাশি গরু বেচাকেনায় নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। বড় গরুগুলো জেলার বাইরে ঢাকা বা বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু রাস্তাঘাটে যে পরিমাণ ছিনতাই-ডাকাতি বেড়েছে, এটিও বড় একটি চিন্তার বিষয়। এক্ষেত্রে ন্যায্যমূল্য পেতে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে জেলায় এবার চাহিদার দ্বিগুণ কোরাবানি পশু প্রস্তুত রয়েছে। জেলার ২৭ হাজার ১০১টি খামারে এবার কোরাবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছয় লাখ ৪৮ হাজার ২০৪ টি। এর বিপরীতে জেলায় চাহিদা রয়েছে তিন লাখ ১২ হাজার ৮২৬টি। উদ্বৃত্ত রয়েছে তিন লাখ ৩৫ হাজার ৩৭৮টি। জেলার মোট কোরাবানি পশুর মধ্যে গরু প্রায় দুই লাখ, মহিষ প্রায় সাড়ে আট হাজার, ছাগল তিন লাখ ৭২ হাজার ৬১১ ও ৬৮ হাজারের বেশি ভেড়া রয়েছে। উদ্বৃত্ত কোরবানি পশু ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়াগার চাহিদা মেটাবে।

পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একেএসএম মুশাররফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, খাদ্যের দামটা একটু বেশি। একটু কম হলে খামারিরা আরও বেশি লাভবান হতে পারতেন। তবে আমরা কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখেছি। খামার থেকে গরু বিক্রি করছেন এমন খামারিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাতে বাজার একদম খারাপ না।

তিনি বলেন, ২২-২৩ হাজার টাকা মণ দর পেয়েছেন কয়েকজন খামারি। এতে খুব বেশি লাভ না হলেও লোকসান হচ্ছে না। নিরাপত্তা ও বাজার ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়েও আমরা কাজ করছি।

এএইচআইএন/এসআর/জিকেএস