কারও মৃত্যু সংবাদ কানে আসামাত্রই খুন্তি, কোদালসহ প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘোড়ায় করে ছুটে যান কবরস্থানে। কবর খুঁড়ে যাচ্ছেন ৫০ বছর ধরে। এজন্য নেন না কোনো পারিশ্রমিক। সেই ৬৭ বছরের মনু মিয়া শারীরিক অসুস্থতায় হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী। এদিকে কিছু দুষ্কৃতকারী মনু মিয়ার ঘোড়াটি মেরে ফেলেছে। এই খবরটি সারাদেশের মানুষকে ব্যথিত করেছে।
Advertisement
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়ার মনু মিয়া। তার ঘোড়াটি মেরে ফেলার খবর প্রকাশিত হলে নিন্দার ঝড় ওঠে ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। এ সংবাদ অভিনেতা খায়রুল বাসারেরও দৃষ্টিগোচর হয়।
এ অভিনেতা সোমবার তার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘মনু মিয়াকে আমি ঘোড়া কিনে দিতে চাই। ঘোড়া কিনে দেওয়ার বিনিময়ে আমার কবর খোঁড়া পর্যন্ত আল্লাহ উনাকে বাঁচিয়ে রাখুন। কেউ যদি মনু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন কৃতজ্ঞ থাকব।’
স্ট্যাটাস দেওয়ার পর খায়রুল বাসার মনু মিয়ার সন্ধান পান। তিনি সোমবার রাতেই হাসপাতালে মনু মিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। তিনি মনু মিয়ার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথাও বলেন। সেই ছবিও খায়রুল তার ফেসবুকে শেয়ার করেন।
Advertisement
স্ট্যাটাসে খায়রুল বাসার লিখেছেন, ‘আজ এক নায়কের সাথেই দেখা হলো আমার। আমি নিজ চোখে এক নায়ককেই দেখে আসলাম, বুক মেলালাম এক নায়কের সাথে! আজন্ম এক নায়ক মনু মিয়া। এই নায়কের গল্প বলবো শিগগির। এটুকু বলি, মনু মিয়া অসহায় না বরং অসহায়ের সহায় হয়ে ওঠার প্রচণ্ড শক্তি আছে তার। এই দিশাহীন সমাজে এক আদর্শের নাম মনু মিয়া।’
জানা গেছে, প্রায় ৪৯ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কবর খননের কাজ করছেন ৬৭ বছর বয়সী মনু মিয়া। জেলাসহ আশপাশের এলাকায়ও তিনি শেষ ঠিকানার কারিগর হিসেবে পরিচিত। দশ বছর আগে বাজারের দোকান বিক্রি করে একটি ঘোড়া কেনেন মনু মিয়া। যার পিঠে চড়ে ছুটে যেতেন কবর খুঁড়তে, বিদায় জানাতেন মানুষকে। এ পর্যন্ত তিনি তিন হাজারেরও বেশি কবর খনন করেছেন বিনা পারিশ্রমিকে।
আরও পড়ুন:
নিজের সিনেমা মুক্তির খবর জানেন না বাপ্পী নায়িকা মিষ্টি জান্নাতকে হত্যার হুমকিবয়সের ভারে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এমন সময়ই তার প্রিয় ঘোড়াটি পাশের মিঠামইনের হাশিমপুরে ঘাস খেতে গেলে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা বল্লমের আঘাতে হত্যা করে। মনু মিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে তার কাছে এ ঘটনা গোপন রেখেছে পরিবার।
Advertisement
এমএমএফ/এলআইএ/এমএস