কেবল হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলেই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কয়েকটি সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী রওশন আলী। তিনি বলেন, কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশের সব বিষয় চ্যালেঞ্জ করিনি। কিছু বিষয়ে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলেই এসেছি।
Advertisement
সোমবার (১৯ মে) রিটের শুনানিতে এই আইনজীবী এমন যুক্তি তুলে ধরেন। এই বিষয়ে আগামী ২৬ মে আদেশ দেবেন হাইকোর্ট।
সোমবার শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আদেশের জন্য এই দিন ঠিক করেন। রিটকারী আইনজীবী রওশন আলী আবেদনের পক্ষে নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আব্দুল ওয়াহাব। আর নারী কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
রিটকারী আইনজীবী রওশন আলী শুনানিতে বলেন, আমিও সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহন চাই। তবে নারী সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে তা হবে মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অনেকগুলো সুপারিশ কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত। তারা ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়ে কিছু সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশ নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই সরকার বাস্তবায়নের দিকে চলে যাচ্ছে।
Advertisement
তিনি বলেন, প্রতিবেদনের বিভিন্ন সুপারিশ ইসলামি শরিয়তের বিধানের পরিপন্থি, দেশের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির পরিপন্থি ও দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয়ভাবে স্পর্শকাতর। তাই এ বিষয়ে রিট করা হয়।
আরও পড়ুন নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জের রিট তালিকায় নারী সংস্কার কমিশনের ইসলামবিরোধী সুপারিশ বাতিল করতে হবেরাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক বলেন, এটি আনবর্ন চাইল্ড (জন্মগ্রহণ না করা শিশু)। সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে আসতে পারে। তারা যে কোনো বিষয়ে সুপারিশ দিতেই পারে। তবে এখনো কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এই রিট ইমম্যাচিউর (অপরিপক্ক)।
শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ফৌজিয়া করিম ফিরোজ। তিনি নারী সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য। শুনানিতে ফৌজিয়া করিম বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পর অনেক নোংরা কথা বলা হচ্ছে। পুতুলের শরীর থেকে শাড়ি খুলে ফেলা হয়েছে। সেটাতে কেন রক্তক্ষরণ হচ্ছে না? রক্তক্ষরণ কেবল আমাদের সুপারিশেই হচ্ছে? এই রিট তাদের (সমালোচনাকারীদের) আরও সাহস দিচ্ছে।
আইনজীবী রওশন আলী বলেন, এটাকে (রিট) আনবরন চাইল্ড বলা হচ্ছে। অথচ প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সুপারিশের মধ্যে যা দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য তা যেন করা হয়। পরবর্তী সংসদ করবে সেটা বলা হয়নি। বলা হচ্ছে দ্রুত করে ফেলতে হবে। তাই এই রিটকে ইম ম্যাচিউর (অপরিপক্ক) বলব কীভাবে? যে সুপারিশগুলো ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কেবল সেগুলো নিয়ে এসেছি। অনেক বিষয় উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া।
Advertisement
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আব্দুল ওয়াহাব বলেন, শুনানি নিয়ে আদালত ২৬ মে আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রওশন আলী আবেদনকারী হয়ে গত ৪ মে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনটি সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত ও আলোচিত হয়েছে। প্রতিবেদনের বিভিন্ন সুপারিশ ইসলামি শরিয়তের বিধানের পরিপন্থি। দেশের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির পরিপন্থি। বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
প্রতিবেদনের কয়েকটি সুপারিশ কেন বেআইনিভাবে প্রণীত ও আইনগত কার্যকারিতা বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয় আবেদনে। এছাড়া ভবিষ্যতে সংস্কারের জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি, সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়।
রিটের আর্জিতে দেখা যায়, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিভিন্ন অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত ১১.৩.১ (ক), ৩.২.৩, ৩.২.৩.১.১ (ক, গ), ১০, ১২.৩.১.১ (জ), ৪.১, ১০.২, ৩.২.১.১.৩ (ক), ৩.২.২.১.৪ (খ) এবং ৬.৩.১ (ক) সুপারিশ বাস্তবায়ন ও কার্যকর করায় পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে।
রুল হলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উল্লিখিত সুপারিশ বাস্তবায়ন ও কার্যকর করা থেকে বিরত রাখতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সংস্কারের জন্য প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে রিটে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইনসচিব, ধর্মসচিব এবং নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।
এফএইচ/এএমএ/জিকেএস