ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দর দিয়ে কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। দুই বন্দরে জমিয়ে রাখা কয়লাও বিক্রি হচ্ছে না। এমতাবস্থায় বেকার সময় কাটাচ্ছেন বন্দরের শ্রমিকরা। তবে ভারত থেকে পাথর আমদানির মাধ্যমে স্থলবন্দর সচল রাখার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ী ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
সর্বশেষ গত ৮ মে এই দুই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কয়লা আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। এদিন কয়লাভর্তি ৮৪টি ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসব গাড়িতে ১ হাজার টনের বেশি কয়লা আসে। এরপর থেকে কয়লা আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু ভাটা চালু থাকলেও এগুলোতে কয়লা রয়েছে। বর্তমানে বন্দরে যৎসামান্য কয়লা বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বেনাপোলে আটকা পণ্যবাহী শতাধিক ট্রাক অর্ধেকে নেমেছে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি ভারতের নিষেধাজ্ঞায় শেওলা স্থলবন্দরে রপ্তানিতে অচলাবস্থাএদিকে সম্প্রতি বৃষ্টিতে ভারতের (কড়ইতলী-গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত সড়ক) সড়কের বিভিন্ন অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির আগে কয়লা আমদানি-রপ্তানির সম্ভবনা নেই। বন্দরে ব্যবসা সচল রাখতে পাথর আমদানিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে দুই দেশের (বাংলাদেশ-ভারত) ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
Advertisement
অপরদিকে কয়লা আমদানি বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন বন্দর এলাকায় কাজ করা শত শত শ্রমিক। কড়ইতলী স্থলবন্দরে সারাবছর শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন আরশেদুল মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকদিন যাবত বন্দরে সুনসান নীরবতা চলছে। ভারত থেকে আসছে না কয়লা, বন্দরে কয়লা বিক্রিও হচ্ছে না। এমতাবস্থায় কাজ না পেয়ে বেকার সময় কাটাচ্ছি। বন্দর সচল না হলে বন্দর কেন্দ্রিক শ্রমিকরা বিপাকে পড়বে।
নজিবুল্লাহ নামের আরেকজন শ্রমিক বলেন, বন্দরে কয়লার কাজ করেই পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ করতে হয়। কিন্তু ঈদের (ঈদুল আজহা) আগে বন্দরে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। শুনতে পারছি, পাথর আমদানি হবে। কিন্তু কবে আমদানি শুরু হবে, কবে পুরোদমে কাজ করবো তা জানি না।
স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে কড়ইতলী ও ১৯৯৭ সালে গোবরাকুড়া শুল্ক স্টেশনের মধ্য দিয়ে ভারত থেকে কয়লা আমদানি শুরু হয়। ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর স্থলবন্দর দুটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত একটি মামলার কারণে কয়লা আমদানি বন্ধ ছিল। তবে মাঝে আদালতের নির্দেশনা পাওয়ায় কিছুদিন কয়লা আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। ২০২৩ সালের ১১ মার্চ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। একই বছরের এপ্রিলে ভারত থেকে মাত্র ৯৬৪ টন কয়লা আমদানি হয়। এরপর আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে পুরোদমে কয়লা আমদানি শুরু হয়। এদিন থেকে চলতি বছরের ৮ মে পর্যন্ত দুই স্থলবন্দর দিয়ে মোট ৩৮ হাজার টন কয়লা এসেছে। এরমধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে ২ হাজার টন ও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৩৬ হাজার টন কয়লা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
Advertisement
কড়ইতলী-গোবরাকুড়া আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের (ব্যবসায়ী সংগঠন) সাধারণ সম্পাদক অশোক সরকার অপু জাগো নিউজকে বলেন, শুধু মাত্র কয়লা আমদানির মাধ্যমে সারাবছর দুই স্থলবন্দর সচল রাখা সম্ভব নয়। ২০২৩ সালের আগে তিন বছর আমরা ভারত থেকে পাথর আমদানি করেছি। এসময়ের মধ্যে বিভিন্ন সময় ট্রাকভর্তি পাথর এসেছে। তবে বর্তমানে শুধু মাত্র কয়লা আমদানির মাধ্যমে বছরের অর্ধেক সময় স্থলবন্দর সচল রয়েছে। আমরা চাই, সারাবছর স্থলবন্দর সচল থাকুক। সেজন্য আবারও পাথর আমদানি করবো। এরইমধ্যে ভারতীয়দের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঈদুল আজহার পর বিভিন্ন আকারের পাথর আমদানি হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা আমদানির পাশাপাশি স্থলবন্দর দিয়ে আমাদের পণ্য ভারতে রপ্তানিও করতে চাচ্ছি। আমাদের ময়মনসিংহে প্রচুর পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়। বিভিন্ন ধরনের মাছ ভারতে রপ্তানি করতে পারলে আমদানি-রপ্তানি সারাবছর সচল থাকার পাশাপাশি দুই স্থলবন্দরে ব্যবসা জমজমাট থাকত। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবে। একইসঙ্গে শ্রমিকরা সারাবছর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে।
কড়ইতলী-গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক পার্থ ঘোষ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমদানির পাশাপাশি রপ্তানিমুখী হতে বলেছেন। ঈদের পর পাথর আমদানি শুরু করতে পারলে বন্দরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে। এছাড়া ভারতীয়রা আগ্রহ দেখালে আমাদের স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা আলোচনার মাধ্যমে কাগজপত্র ঠিক করে মাছ রপ্তানি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সরকারের আরও বেশি রাজস্ব আদায় হবে।
এফএ/জিকেএস