কক্সবাজার থেকে প্রায় ১ হাজার ৩৭২ কিলোমিটার পথ হেঁটে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয়ে বিশ্ব রেকর্ড করা ইকরামুল হাসান শাকিলকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার ও এলাকাবাসী। সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেছেন তিনি। এতে এলাকার মানুষের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা।
Advertisement
শাকিলের এভারেস্ট জয়ের খবর পেয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় তার গ্রামের বাড়িতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ভিড় করছে। অভিনন্দন ও শুভেচ্ছায় ভাসছে শাকিলের পরিবার।
কৃষক পরিবারের সন্তান ইকরামুল হাসান শাকিলের এ জয়ে শুধু পরিবারই না, এলাকাবাসীও তাকে নিয়ে গর্ববোধ করছেন।
সোমবার (১৯ মে) বিকেলে শাকিলের এভারেস্ট জয়ের খবর এলাকায় পৌঁছালে তার বাড়িতে ভিড় করেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা। দূরদূরান্ত থেকে আসে সাধারণ মানুষ। এসময় তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। শাকিলের মা তাদের অশ্রুসিক্ত চোখে শাকিলের নানা গল্প শোনান।
Advertisement
৩১ বছর বয়সী শাকিলের জন্ম কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাগচালা গ্রামে। এ গ্রামেই তার বেড়ে ওঠা। কৃষক বাবা খবির উদ্দিন ও গৃহিণী মা শিরিনা বেগমের বড় সন্তান শাকিল। দুই ভাই সজিব আহমেদ ও সাকিব আহমেদকে নিয়ে তাদের সংসার। ২০১৯ সালের বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরেন তার মা। বাবার রেখে যাওয়া কয়েক বিঘা জমি চাষ করেন তার ভাই সজিব আহমেদ। আরেক ভাই সাকিব স্থানীয় একটি কারখানার শ্রমিক।
আরও পড়ুন-
বিশ্বরেকর্ড গড়ে শাকিলের এভারেস্ট জয় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অন্নপূর্ণা-১ শিখরে বাবর আলী উত্তাল যমুনার বুকে এক অসম লড়াইবাড়ির তিন কোণে তিনটি বসতঘর। উত্তরের ভিটার ঘরটি জীর্ণ ও দক্ষিণের ভিটার ঘরটিতে গবাদিপশু রাখেন, পূর্ব পাশের ঘরটিতে শাকিলের পরিবার বসবাস করে।
শাকিল স্থানীয় বাগচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক ও জনতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর পিয়ার আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ছোট বয়স থেকেই লেখালেখি, বই পড়া ও ভ্রমণে বেশ আকৃষ্ট ছিলেন শাকিল। এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ ও ভ্রমণ বিষয়ক ছয়টি বই লিখেছেন।
Advertisement
শাকিলের মা শিরিনা আক্তার জানান, গত শুক্রবার রাতে শাকিলের সঙ্গে তার সবশেষ কথা হয়। এরপর থেকে তিনি বেশ চিন্তিত ছিলেন। সন্তানের চিন্তায় গত তিনদিন তার খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সন্তানের সফলতার জন্য ও সন্তানকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। শাকিলের সফলতার খবর শুনে তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।
প্রতিবেশী আরিফ হোসেন জানান, শাকিল ছোটবেলা থেকে বেশ মেধাবী। আমরা তাকে সবসময়ই আদর স্নেহ করতাম। আমরা দুপুরের পরপরই শাকিলের সফলতার খবরটি পেয়েছি। আমাদের বাগচালা গ্রামের সন্তান এভারেস্ট জয় করেছে, এতে আমরা খুব আনন্দিত ও গর্বিত। বিশ্বে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন আমাদের গ্রামের বাসিন্দা শাকিল। এতে আমরা উচ্ছ্বসিত।
প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শাকিল যে এই ভাঙা ঘর থেকে এত ওপরে উঠবে এটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। শাকিলের জন্য আজ আমাদের গ্রামকে সারা বিশ্বের মানুষ চিনেছে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহমেদ বলেন, শাকিলের এভারেস্ট বিজয়ের খবরটি আমি স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি। শাকিলের এমন অর্জনে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। আমরা শাকিলের সঙ্গে বিভিন্নভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ইনানি সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু হয় শাকিলের পদযাত্রা। ৯০ দিনের মধ্যে ‘সি টু সামিট’ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে অভিযান শুরু করেন তিনি। যাত্রাপথে বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের প্রায় এক হাজার ৩৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এভারেস্টের ২৯ হাজার ৩১ ফুট উঁচু শিখরে আরোহণ করেছেন শাকিল।
শাকিলের ‘সি টু সামিট’ অভিযানের আয়োজক বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব। টাইটেল স্পন্সর দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ। সহযোগী স্পন্সর হিসেবে রয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), স্ন্যাকস পার্টনার মিস্টার নুডলস, গিয়ার পার্টনার মাকলু-ই-ট্রেডার্স নেপাল ও ওরাল হেলথ সিস্টেমা টুথব্রাশ, নিউজ পার্টনার জাগো নিউজ ও রেডিও পার্টনার জাগো এফএম।
এফএ/জেআইএম