অর্থনীতি

চলতি অর্থবছরে ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৪১ শতাংশ

চলতি অর্থবছরে ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৪১ শতাংশ

অর্থবছরের ১০ মাসেও খরচের অগ্রগতি মাত্র ৪১ শতাংশ। গত অর্থবছরের চেয়ে এবার উন্নয়নে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা খরচ কম হয়েছে। এপ্রিলে খরচ হয়েছে মাত্র সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষ দুই মাসে এক লাখ ৩২ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্য রয়েছে।

Advertisement

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জুলাই অভ্যূত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর অনেক ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। যার ফলে অনেক সাইটে কাজ হচ্ছে না, যার কারণে ধস নেমেছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে।

সোমবার (১৯ মে) জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসের এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এতে দেখা যায়, ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪১ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর চেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য সংস্থাটির ওয়েবসাইটে নেই।

এদিকে, ১০ মাসে ৯৩ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা অর্থছাড় হয়েছে। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন। গত অর্থবছরে ১ লাখ ২৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা ছাড় হয়েছিল এই সময়ে। গত এপ্রিল মাসে অর্থছাড় হয়েছে মাত্র ১০ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। যেখানে আগের অর্থবছরের এপ্রিল মাসে ছাড় হয়েছিল ১৭ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা।

Advertisement

আইএমইডির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের আর মাত্র দুই মাস বাকি আছে। এ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে উন্নয়ন খাতে ২ লাখ ২৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যা মূল এপিপিতে ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপি অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে আরও ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানে ১০ মাসে মাত্র ৯৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সেখানে বাকি দুই মাসে আর সর্বোচ্চ ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হবে। বাকি টাকা পড়েই থাকবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক সচিব মামুন আল রশিদ বলেন, উন্নয়ন কাজ অনেক স্থানে শেষ হলেও বিলগুলো দেওয়া হয়নি এখনও, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে এসব বিল যাচাই-বাছাই করে দিচ্ছে। যে কারণে ব্যয় কম হচ্ছে। তবে কোনো বছরই বাজেটের পুরো অর্থ ব্যয় হয় না। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শেষ সময়ে একসঙ্গে তাড়াহুড়ো করে টাকা ব্যয় করতে গিয়ে অপচয়, দুর্নীতি ও অর্থব্যয়ের গুণগতমান নষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে উন্নয়ন কাজের বিল যাচাই-বাছাই করে দেওয়া ভালো হবে।

ধীরগতির বিষয়ে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ঠিকমতো অর্থছাড় না হওয়া। কারণ, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সভায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা না থাকায় চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। এডিপির আকার বেশি দেখাতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। যদিও কোন অর্থবছরেই উন্নয়নে থোক বরাদ্দের টাকা খরচ হয় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার এডিপি বাস্তবায়ন মূল এডিপির তুলনায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা কম হবে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি ১৯ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা অর্থ খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ১৫ হাজার ২৭০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এরপর সর্বোচ্চ সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ খরচ করেছে ৮ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, মাত্র ৫৩ কোটি টাকা আর ৮৪৫ কোটি টাকা খরচ করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

এমওএস/এসএনআর/জেআইএম