দেশজুড়ে

কবরস্থানের সভাপতি নির্বাচনে ভোটের আয়োজন, চলছে প্রচারণা

কবরস্থানের সভাপতি নির্বাচনে ভোটের আয়োজন, চলছে প্রচারণা

পুরোনো কমিটির মেয়াদ শেষে নতুন কমিটি গঠন করতে গেলে স্থানীয় অনেকেই হতে চান সভাপতি। এ নিয়ে বাধে দ্বন্দ্ব। এতে বাধ্য হয়ে প্রচলিত রীতির বাইরে প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে গ্রামবাসী। গঠন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন। মনোয়ন ফরম জমাদান শেষে এখন প্রার্থীরা রীতিমতো চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা।

Advertisement

এই কমিটি কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, বরং একটি কবরস্থানের কমিটি। নির্বাচন ঘিরে এলাকাগুলোতে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। এমন বিরল ঘটনার সাক্ষী হতে যাচ্ছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা।

বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিরল প্রক্রিয়ায় সভাপতি নির্বাচনকে অনেকেই ইতিবাচক বিষয় হিসেবে দেখছেন। সবশেষ এ নির্বাচনে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুস ছাতা ও শরিফুল ইসলাম চেয়ার প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ইউনিয়নের বালুদিয়ার গ্রামে জান্নাতুল বাকী নামক কবরস্থানটি অবস্থিত। তবে মহরমখালী ও জগতলা গ্রামের একাংশও এ কবরস্থানের আওতাধীন। পূর্বে এ কবরস্থানের সভাপতি ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম মহুরী। গত বছরের জানুয়ারি মাসে এ কমিটির ৩ বছরের মেয়াদ শেষ হলেও কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি হয়নি। পরে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে আব্দুল কুদ্দুস ও শরিফুল ইসলামসহ স্থানীয় ৩-৪ জন সভাপতি পদে আসীন হতে চান।

Advertisement

এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধলে কোনো সমাধান না মেলায় অবশেষে এলাকাবাসী ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচনের দাবি জানান। এরপর কবরস্থান কমিটির সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাস্টারকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে সাত সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটি জানায়, গ্রামগুলোর প্রতি বাড়ি থেকে একজন পুরুষকে ভোটার নির্ধারণ করে মোট ৮০০ ভোটার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যারা ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে পরবর্তী তিন বছরের জন্য তাদের কবরস্থানের সভাপতি নির্বাচিত করবেন। আগামী ২৪ মে কবরস্থান সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম। এরইমধ্যে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন ফরমের মূল্য হিসেবে প্রার্থীদের থেকে ৩০ হাজার করে টাকাও নেওয়া হয়েছে। যা নির্বাচনী কাজে ব্যয় হবে।

এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুল মতিন মাস্টার বলেন, থানার পরামর্শ ও সহযোগিতায় আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছি। শুরুতে ৩-৪ জন সভাপতি হতে চাইলেও মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমা দেওয়ার মাধ্যমে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ব্যালট পেপার ছাপাসহ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে প্রার্থীদের একজন নাকি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। যদিও মাঠ পর্যায়ে আমরা তেমন কিছু দেখছি না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গেলে একে অপরকে দোষারোপ করেই থাকে। এর বাইরে কোনো বিশৃঙ্খলা আমাদের চোখে পড়েনি। সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন করতে উভয় প্রার্থী ও গ্রামবাসী যদি সহযোগিতা করেন, তাহলেই নির্বাচন হবে। এখনো প্রার্থীরা নিজেদের মতো প্রচারণা চালাচ্ছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা আব্দুল কুদ্দুস রেজা বলেন, শুরুতে এখানেও (কবরস্থানে) সাধারণ পদ্ধতিতেই কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু কেউই সরতে রাজি নন। ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যেতে হয়েছে। মানুষ প্রত্যক্ষ ভোটে তাদের সভাপতি নির্বাচন করবে।

Advertisement

এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, হয়ত কবরস্থানের পুরোনো কমিটি আমার কাছে এসেছিল। এই মুহূর্তে স্মরণ করতে পারছি না। তবে নির্বাচনের বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত। ইউএনও মহোদয়ও বিষয়টি দেখছেন। আমরা সজাগ আছি, পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ ধরনের নির্বাচনের বিষয়টি একদমই নতুন জানিয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসা নাছের চৌধুরী বলেন, আমরা জেনেছি অন্যান্য নির্বাচনের মতো কবরস্থানটির সভাপতিও এলাকাবাসীর ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে। এটি একটি সামাজিক সিদ্ধান্ত। একে এই মুহূর্তে আমি ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনোভাবেই শ্রেণিকরণ করছি না। তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরাসরি আলাপ না হলেও বিষয়টি আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দেখলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশৃঙ্খলা না হলে তাদের সামাজিক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা হবে না।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এফএ/এমএস