দেশজুড়ে

পাঁচ উপাচার্যের মধ্যে তিনজনই বিদায় নিয়েছেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে

পাঁচ উপাচার্যের মধ্যে তিনজনই বিদায় নিয়েছেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে এ পর্যন্ত উপাচার্যের (ভিসি) দায়িত্ব পালন করেছেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে তিনজনকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিদায় নিতে হয়েছে।

Advertisement

সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সহ-উপাচার্যের পদ থেকে গোলাম রব্বানী ও কোশাধ্যক্ষ পদ থেকে মামুনুর রশিদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ তিনজনকে এভাবে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম।

এর আগে অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হক ও অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়াকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে হয়।

আরও পড়ুন- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য অধ্যাপক তৌফিক আলম মঙ্গলবার দুপুর ২টার মধ্যে পদত্যাগ করতে ববি উপাচার্যকে আলটিমেটাম উপাচার্যের অপসারণ দাবির আন্দোলনে শিক্ষকদের একাত্মতা

তিনজনকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি পক্ষকে সুবিধা দেওয়া, নিয়োগ বাণিজ্য ও দলীয়করণের খেসারত দিতে হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

তারা বলেন, বারবার আন্দোলনের ফলে শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়তে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের কোনো লাভ হয়নি, বরং ক্ষতি হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, নিয়োগের প্রায় আট মাসের মাথায় এভাবে উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা হতাশাজনক। আমরা অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিলাম, কিন্তু এখন আমরা হতাশ, ক্ষুব্ধ ও আশাহত। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর পাঁচজন উপাচার্যকেই বিক্ষোভ আন্দোলন ও অপমান-অপদস্থের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আর এসব কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে, তারা সেশনজটে পড়ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক হারুন অর রশিদ। তার চার বছরের মেয়াদে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বে দুই দফা আন্দোলন হয়েছিল। দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এস এম ইনামুল হক সবচেয়ে বেশি আন্দোলনের মুখে পড়েন। শিক্ষকদের একাংশ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। দুই দফায় তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে একবার ১৫ দিন ও আরেকবার টানা ৪৪ দিন বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়া হয়েছিল। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরাও এই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়ে ইনামুল হককে তিন মাসের ছুটিতে পাঠায়। ছুটিতে থাকাকালেই তার মেয়াদ পূর্ণ হয়।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান মো. ছাদেকুল আরেফিন। তার সময়েও শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে চার থেকে পাঁচবার আন্দোলন হয়। শেষ পর্যন্ত সেটা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর উপাচার্য হন মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। ছয় মাসের মাথায় জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত ২০ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিনিও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

Advertisement

গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শুচিতা শরমিন। তিনি যোগদানের পর প্রথম বিক্ষোভের মুখোমুখি হন গত ২৬ নভেম্বর। ওইদিন আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানকে কোশাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিলে শিক্ষকদের একটি অংশ তাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে নিয়োগ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশও যোগ দেয়। দ্বিতীয় দফায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। তার বিরুদ্ধে তৃতীয় দফায় আন্দোলন শুরু হয় গত ২৭ এপ্রিল। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ চার দফা দাবি জানান।

শিক্ষার্থীদের এসব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে শুচিতা শরমিন ৪ মে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত তাকেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এবারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের অন্যতম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, এই আন্দোলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়নি, বরং এটা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মর্যাদার বিষয়। কারণ তারা উপাচার্যদের কাছ থেকে সব সময় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আশা করেছেন। যখন পাননি, তখন প্রতিবাদ করেছেন।

কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, উপাচার্যদের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউই ভালো থাকে না। উপাচার্যদের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। উপাচার্যদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী বান্ধব হতে হবে।

এফএ/এএসএম