জাতীয়

পুলিশ বলছে ২১ ঘণ্টা জবি শিক্ষার্থীর দাবি ২৬ ঘণ্টা ডিবিতে ছিলেন

পুলিশ বলছে ২১ ঘণ্টা জবি শিক্ষার্থীর দাবি ২৬ ঘণ্টা ডিবিতে ছিলেন

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর পানির বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় আটক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হুসাইন বলেছেন, তিনি প্রায় ২৬ ঘণ্টা ডিবি কার্যালয়ে ছিলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুক্রবার প্রায় ৬টা পর্যন্ত।

Advertisement

অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশের দাবি, ওই শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নেওয়ার সময় থেকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয় ২১ ঘণ্টা।

তাকে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় শুক্রবার আনুমানিক ৬টার দিকে।

ডিএমপির দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার বয়স, পেশা, ব্যক্তিগত মানবাধিকার ও আইনের বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

Advertisement

এর আগে বোতল ছুড়ে মারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ২৬ ঘণ্টার কথা উল্লেখ করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। এরপর শুক্রবার দিনগত রাত ২টা ৩৩ মিনিটের দিকে ডিএমপির পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় এবং বলা হয় ২১ ঘণ্টার কথা বলা হয়।

যা বলেছেন বোতল ছুড়ে মারা শিক্ষার্থী

ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কাকরাইলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবস্থানস্থলে এসে মোহাম্মদ হুসাইন বলেছেন, তিনি হুমকি পেয়ে আতঙ্কে আছেন।

এ সময় সাংবাদিকরা হুসাইনকে তার ডিবি কার্যালয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন করেন।

Advertisement

জবাবে তিনি বলেন, আমি প্রায় ২৬ ঘণ্টা ডিবি কার্যালয়ে ছিলাম, গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুক্রবার প্রায় (সন্ধ্যা) ৬টা পর্যন্ত।

আতঙ্কিত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপরিচিত নম্বর থেকে যেহেতু হুমকি পেয়েছি, সেটা একরকম, কিছুটা আতঙ্কিত আছি যে মবের মাধ্যমে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করা হবে, এরকম বলেছে। তারপর আমার সমস্যা করবে। বাসা থেকে বের করে দেবে, এরকমভাবে আননোন নম্বর থেকে…।

আরও পড়ুন:

তথ্য উপদেষ্টার মাথায় বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ  মাহফুজ ভাইয়ের সঙ্গে যা ঘটলো, তাতে হতাশ হয়েছি: আসিফ মাহমুদ 

ডিবি অফিসে নির্যাতন করা হয়েছিল কি না এ প্রশ্নে হুসাইন বলেন, না ওরকম শারীরিক কোনো নির্যাতন করা হয়নি।

আটক করা হয়েছিল কোথা থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাসা থেকে।

মানসিক নির্যাতন করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে হুসাইন বলেন, মানসিক নির্যাতন বলতে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন করে অনেক রাত পর্যন্ত সজাগ রাখা হয়েছে। ফাঁসির আসামিদের সঙ্গে জেল হাজতে রাখার চেষ্টা করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না, এখন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আমার নেই। আমার মোবাইল, আমাকে ডিজিটালি উনারা চেক করেছেন এবং কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পায়নি।

পুলিশ যা বলছে

শুক্রবার দিনগত রাত ২টা ৩৩ মিনিটের দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, গত ১৪ মে রাতে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে মতবিনিময়ের জন্য সরকারের তথ্য উপদেষ্টা কাকরাইল মসজিদ এলাকায় যান। মতবিনিময়ের একপর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে আন্দোলকারীদের মধ্য থেকে কে বা কারা একটি পানির বোতল ছুড়ে মারে, যা আকস্মিকভাবে তার মাথায় আঘাত করে।

বিষয়টি খতিয়ে দেখা, জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্ত এবং এ ঘটনার নেপথ্য কারণ উদঘাটনের নিমিত্তে ঢাকা মহানগর পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মোহাম্মদ হোসাইন নামক এক ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করে।

তালেবুর রহমান আরও জানান, পরবর্তী সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দল গত ১৫ মে (বৃহস্পতিবার) রাত আনুমানিক ৯টায় রাজধানীর আলুবাজার পুকুরপাড় এলাকায় তার মেস থেকে শনাক্তকৃত ওই ব্যক্তিকে নিজেদের হেফাজতে নেয় ডিবি। এ বিষয়ে তার সঙ্গে ওই মেসে বসবাসরত অন্যান্য সদস্যদের তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করা হয়।

ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, রাত আনুমানিক ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বোতল ছুড়ে মারার ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ও অন্যান্য বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার বয়স, পেশা, ব্যক্তিগত মানবাধিকার ও আইনের বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ১৬ মে আনুমানিক ১২টার দিকে তিনি উক্ত ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং এজন্য অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে এরূপ কর্মকাণ্ড হতে বিরত থাকবেন বলে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে অবহিত করেন।

পরবর্তী সময়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হলে ১৬ মে দুপুরে তার পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয় এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ১৬ মে সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার সময় তাকে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ডিবি অফিসে তার আগমন, জিজ্ঞাসাবাদ ও হস্তান্তরের বিষয়টি যথাযথভাবে ডিবি অফিসে রক্ষিত জিডিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

টিটি/এসএনআর/এএসএম