ময়মনসিংহ-শেরপুর, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক সড়কসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানের অংশ দখল করে রাখা হয়েছে ট্রাক। এসব ব্যস্ততম সড়কে তিন চাকার যানবাহনসহ বিভিন্ন যানবাহন দ্রুতগতিতে ছুটে চলছে। এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তারপরও সড়ক দখল করে ট্রাক রাখা থেকে বিরত থাকছে না চালকরা।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৩ মে) সরেজমিনে ময়মনসিংহের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, সময় যত গড়াচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহনের সংখ্যাও বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে ট্রাকের সংখ্যা। মালামাল পরিবহন করে চালকরা ট্রাকগুলো সড়ক দখল করে রেখে দিচ্ছেন। অনেক ট্রাকের চালক গাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সড়কের একপাশ দখল করে দাঁড় করিয়ে রাখছেন। এতে মাঝেমধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা রোধে সড়কের পাশে বন্ধ করে রাখা ট্রাক সরানো প্রয়োজন বলছেন তারা।
চালকদের অভিযোগ, অনেক চালক দূর-দূরান্ত থেকে গাড়ি চালিয়ে ময়মনসিংহে আসেন। ময়মনসিংহেও রয়েছে অগণিত ট্রাক। তবে জেলায় কোনো ট্রাক টার্মিনাল নেই। ফলে চালকরা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প, মোটর গ্যারেজসহ সড়কের পাশে ট্রাক রেখে দেন। এতে সড়কে চলাচল করা অন্যান্য গণপরিবহনের চালকদের অসুবিধা হলেও ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তারা এটি করছেন।
Advertisement
ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে নিয়মিত বাস চালান হাকিমুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে সড়ক দখল করে ট্রাক রেখে দেওয়া হয়। সড়ক ফাঁকা থাকলে আমরা যাত্রী নিয়ে দ্রুতগতিতে চলাচল করি। কিন্তু যে স্থানে সড়ক দখল করে সারি সারি ট্রাক থাকে, সে স্থানে গতি কমাতে বাধ্য হই। অনেক সময় ট্রাকের পেছনে গণপরিবহনে ধাক্কা লেগে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। দাঁড় করিয়ে রাখা ট্রাক দেখে গতি কমাতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটছে।’
ইউনাইটেড পরিবহনের চালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশেও সারি সারি ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে যাত্রী নিয়ে আতঙ্কে চলতে হচ্ছে। বালুবোঝাই ট্রাকের অনেক চালক সড়কে ট্রাক রেখে সড়কের অনেকটা অংশে বালু রেখে দিচ্ছেন। বালু ব্যবসায়ীদের এমন খামখেয়ালিপনা আর ট্রাক চালকদের সড়ক দখল করার কারণে মহাসড়কে আতঙ্ক বাড়ছে।’
আরও পড়ুন সংস্কারে আটকা আন্তর্জাতিক ম্যাচ থমকে আছে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইটের ব্যবহার যেভাবে মনপুরার ৫০ টাকার ডাব ঢাকায় এসে হয় ১৫০ টাকা গরুর খামারে গ্রামের চিত্র বদলে দিয়েছেন লাকীতবে সড়কে ট্রাক রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান ট্রাকচালক আসাদ মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বালু ব্যবসায়ীরা সড়কের একপাশে বালু রাখতে বলেন বলেই বালু রাখছি। ময়মনসিংহের কোথাও ট্রাক টার্মিনাল নেই। ফলে সারারাত কিংবা সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত শরীরে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছা হয়। তখন সড়কের পাশে গাড়ি রেখে গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ি।’
সড়ক দখল করে ট্রাক রাখা ঠিক নয় বলে জানালেন ট্রাকচালক জালাল মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এতে সবসময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তবে আমাদের কিছু করার নেই। বিভাগীয় নগরী, সদর কিংবা জেলার কোথাও একটি ট্রাক টার্মিনাল নেই। ট্রাক রাখার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় সড়কে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রুত ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের দাবি জানাই।’
Advertisement
নিরাপদ সড়ক চাই ময়মনসিংহের সভাপতি আবদুল কাদের মুন্না জানান, চলতি বছর ময়মনসিংহে ৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮৫ জন।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে লিফলেট বিতরণসহ সচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সড়কগুলো বিভিন্ন কারণে আতঙ্কের সড়কে পরিণত হচ্ছে। এরমধ্যে আরও আতঙ্ক সৃষ্টি করছে ট্রাক। সড়ক দখল করে যতদিন ট্রাক থাকবে, ততদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
গণপরিবহন নেতারা বলছেন, নগরীতে কয়েকটি বাস টার্মিনাল রয়েছে। এগুলোতে গিজ গিজ করে বাস রাখা হয়। রয়েছে সিএনজি স্ট্যান্ডও। জেলার চারটি উপজেলায় বাস টার্মিনাল রয়েছে। তবে জেলার কোথাও নেই ট্রাক টার্মিনাল। ফলে ট্রাক চালকরা সড়কসহ যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন, সেখানেই গাড়ি রেখে দিচ্ছেন।
জেলা মোটরযান কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী বলেন, শুধু নগরীতেই আছে হাজারের বেশি ট্রাক। এছাড়া অগণিত ট্রাক প্রতিদিন ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে। এগুলোর চালকরা সড়কের পাশসহ বিভিন্ন স্থানে ট্রাক রেখে দিচ্ছেন। সরকারি উদ্যোগে নগরীতে বড় পরিসরে একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও ফলাফল শূন্য।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, অনেক আগেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। আমরাও চাই, সড়কে দুর্ঘটনা সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি চলাচল করা স্বস্তিদায়ক হোক।
এসআর/জিকেএস